Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪,

দারিদ্রতাকে হারিয়ে মেডিকেলে পড়ার সুযোগ

রাণীশংকৈল (ঠাকুরগাঁও) প্রতিনিধি:

রাণীশংকৈল (ঠাকুরগাঁও) প্রতিনিধি:

মার্চ ১৩, ২০২৩, ০৮:১২ পিএম


দারিদ্রতাকে হারিয়ে মেডিকেলে পড়ার সুযোগ

দরিদ্রতার মাঝে থেকেও পড়াশোনায় মনোযোগী হয়ে এনেছেন সফলতা। বাবার দু‍‍`চোখ ভরে স্বপ্ন ছিল ছেলেকে নিয়ে। বড় হয়ে ছেলে ডাক্তার হবে৷ বাবার স্বপ্নকে বাস্তবে রুপ দিতে নিজের সর্বোচ্চ টুকু দিয়ে পড়াশোনা চালিয়েছে জনি৷ আচমকা ঝড়ে খানিকটা স্থবির হয়ে যায় তার স্বপ্ন ৷ জনি স্কুলে পড়া অবস্থায় সড়ক দূর্ঘটনায় হারাতে হয় প্রিয় বাবাকে ৷ 

বাবাকে হারিয়ে নির্বাক হয়ে পরে তার পরিবার৷ নিজস্ব অল্প বসতভিটা আর মাঠে কয়েক শতক আবাদি জমি ছাড়া আর কিছু নেয় তাদের। একমাত্র উপার্জনক্ষম বাবাকে হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পরে পুরো পরিবার। তখন থেকেই সংসারের হাল ধরতে হয় জনিকে ৷ কৃষিকাজ করে সংসারের সকল খরচ জুগিয়ে পড়াশোনা চালানো ছিল বেশ কষ্টকর। সব কষ্ট মানিয়ে নিয়ে বাবার স্বপ্নকে বাস্তবে রুপ দিতে সদ্য ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেয়েছে মেডিকেল কলেজে।

বলছিলাম ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল পৌরসভা দক্ষিণপাড়া গ্রামের মৃত মনিরুল ইসলাম টিপু ও জরিনা বেগম দম্পতির ছেলে জাহিদ হাসান জনির কথা।

জনি রাণীশংকৈল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি, পীরগন্জ সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসিতে উত্তীর্ণ হয়ে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেয়েছে সিরাজগঞ্জের শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজে৷ তার এমন সফলতায় খুশি  তার পরিবার ও স্থানীয়রা।

স্থানীয় প্রতিবেশীরা জানান, তার বাবাকে হারানোর পর সে খুব কষ্ট করেছে৷ মাঠে সব কৃষি কাজ করে সংসারে খরচ ও পড়াশোনা চালিয়ে  গেছে৷ আমরা আশা রাখছি কোন কারনে সে যেন পিছিয়ে না যায়৷ এসময় সরকার সহ সকলে তার পাশে থেকে তাকে সহযোগিতা করার আহ্বান জানান স্হানিয়রা।

আবেগআপ্লুত হয়ে জনির মা জরিনা বেগম বলেন, অনেক কষ্ট করে মোর ছুয়াডা পড়াশোনা করিছে। ভালো করে খাবা পারেনি। সব কৃষি কাজ করিছে ফের সংসারটা চালায়ছে। আইজ ডাক্তারি পড়িবার সুযোগ পাইল। জনির বাপ থাকিলে আইজ খুবে খুশি হলেহে৷ সবাই মোর ছুয়াডার তাহানে দোয়া করিবেন। যাতে ভালো ডাক্তার হবা পারে৷ 

মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পাওয়া জাহিদ হাসান জনি জানান, ছোট বেলায় বাবা বলতেন আমাকে ডাক্তার বানাবেন। আজকে আমার বাবা বেঁচে নেয়৷ তিনি থাকলে সবচেয়ে বেশী খুশি হতেন। তিনি মারা যাওয়ার পর বাড়ির সব দায়িত্ব আমাকে নিতে হয়। আমার শুধু আরেক বোন আছেন। কৃষি কাজ করার পাশাপাশি পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া খুব কঠিন হয়ে পরতো। তবুও হাল ছাড়িনি কারন স্বপ্নটা আমার বাবার। কোচিং এ এক ভাইয়ের মাধ্যমে অল্প টাকায় ভর্তি হয়। তারপর বাড়িতে এসে কাজ করে আবার চলে যেতাম৷ আসা যাওয়ার মধ্যে থাকতাম সবসময়৷ কষ্ট হলেও হার মানিনি৷ আজকে মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পেয়েছি। কেবলমাত্র পথচলাটা শুরু করেছি। সকলে আমার জন্য দোয়া করবেন যাতে করে একজন মানবিক ডাক্তার হয়ে পরিবার,আত্নীয় স্বজনসহ দেশবাসীর সেবা করতে পারি৷

সেই সাথে যারা ছোট খাট বিষয়ে হতাশ হয়ে পরে তাদের বলব ভেঙে পরবেননা। পরিশ্রম করতে থাকলে আপনারাও ভালো জায়গা গুলোতে পড়াশোনার করার সুযোগ পাবেন৷ 

এ বিষয়ে রাণীশংকৈল পৌরসভার মেয়র মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, সে আমার পৌরসভার বাসিন্দা। তার বাবা মারা যাওয়ার পর সে অনেক পরিশ্রম করে আজ সফল হয়েছে। মাঝে মধ্যে আমি তাদের খোঁজখবর নেয়। এ ছাড়াও পরবর্তীতেও তাকে সার্বিক সহযোগিতা করা হবে৷

আরএস

Link copied!