নান্দাইল (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি:
মার্চ ২৭, ২০২৩, ০৭:২৯ পিএম
নান্দাইল (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি:
মার্চ ২৭, ২০২৩, ০৭:২৯ পিএম
ময়মনসিংহের নান্দাইলে দুই যুবককে বেধে নির্যাতনের অভিযোগে এক ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। জানাগেছে, উপজেলার ৫নং গাংগাইল ইউপি’র বর্তমান চেয়ারম্যান এডভোকেট আসাদুজ্জামান নয়নের বিরুদ্ধে মারধর, আটকে রেখে পাশবিক নির্যাতন, হত্যার হুমকি এবং মুক্তিপণ দাবি করার অভিযোগ এনে মামলা দায়ের করেছেন একই ইউনিয়নের মহাদেবপুর গ্রামের মৃত নুরুল ইসলামের পুত্র ভিকটিম মো. সোহেল রানা (২৮)।
মামলায় ইউপি চেয়ারম্যান ছাড়াও আরো ৬ জনকে আসামী করা হয়েছে। তারা হচ্ছেন একই ইউনিয়নের বাসিন্দা মো. হেলাল উদ্দিন হেবাল (৪০), মুন মিয়া (২৭), মো. লিমন মিয়া (২৫), মো. রনি মিয়া (৩৫), মো. আব্দুস সাত্তার (৫৫) ও মো. রাফি মিয়া (২৫)। সোহেল রানা জানান, থানায় মামলা নিতে গড়িমসি করায় ময়মনসিংহের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলী আদালতে গত ১২ মার্চ মামলা করেছেন। সিআর মামলা নং ৮৪/২৩।
মামলা সূত্রে জানাগেছে, উক্ত ইউপি চেয়ারম্যান আ’লীগের বিদ্রোহী (স্বতন্ত্র প্রার্থী) হিসাবে নির্বাচন করেছিলেন। কিন্তুু বাদী সোহেল রানা ও তার ভাই হিরন মিয়া নৌকা প্রার্থীর পক্ষে প্রকাশ্যে নির্বাচন করায় ইউপি চেয়ারম্যান এড. আসাদুজ্জামান নয়ন তাদের উপর ক্ষোব্ধ হন এবং পরে দেখে নিবেন বলে হুমকিও প্রদান করেছিলেন।
ভিকটিম সোহেল রানা ও তাঁর ভাই হিরন মিয়া জানান, গত ২৮ ফেব্রুয়ারি বিকালে তারা দুই ভাই নান্দাইল রোড বাজারে খাসি মহালে বাজার করার সময় মামলায় বর্ণিত আসামীরা রামদা, কিরিচ, ছুরিসহ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে তাদের ঘিরে ধরে। তারা কারণ জানতে চাইলে চেয়ারম্যান বলেন, “তোদের সাথে বুঝাপড়া আছে।” পরে চেয়ারম্যানের হুকুমে তারা দুই ভাইকে মারধর করেন এবং তাদেরকে বেঁধে চেয়ারম্যানের বাড়িতে নিয়ে যান। সেখানে একটি ঘরে ঢুকিয়ে তাদেরকে পিলারের সঙ্গে বেঁধে ফেলা হয়। তারপর চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান নয়ন হকিস্টিক নিয়ে ঘরে ঢুকে তাদেরকে বেদম প্রহার করেন। এসময় চেয়ারম্যান বলেন, “বলেছিলাম আমার বিরুদ্ধে লাগিস না।” তারপর আসামী মো. আব্দুস সাত্তার ছুরি দিয়ে আঘাত করে সোহলে রানার পায়ের তালু কেটে ফেলে। নির্যাতিত দুই ভাই প্রাণভিক্ষা চাইলে ১০ লাখ টাকা মুক্তিপন দাবি করেন। নির্যাতিতরা বলেন, “আমরা গরিব মানুষ টাকা দিতে পারব না।” পরদিন খবর পেয়ে নির্যাতিত দুই ভাইয়ের মা এসে চেয়ারম্যানের কাছে ছেলেদের প্রাণ ভিক্ষা চান। মাকেও টাকা নিয়ে এসে ছেলেদের মুক্ত করে নিতে বলেন চেয়ারম্যান।
আর এ ঘটনা থানা পুলিশকে জানালে পরিণতি ভয়াবহ হবে বলেও হুমকি দেন চেয়ারম্যান ও তার সঙ্গীরা। এদিকে থানায় ঘটনা জানাজানি হলে পুলিশ ১ মার্চ চেয়ারম্যানের বাড়িতে যান। পুলিশকে জানানো হয় এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। এখানে একটি দরবার হয়েছিল। এ সময় দুভাইয়ের মুখ বাঁধা থাকায় তারা চিৎকার করতে পারেননি। এভাবে আরো একদিন কেটে গেলে সুনির্দিষ্ট খবর পেয়ে পুলিশ ৩ মার্চ শুক্রবার বেলা ১২টার দিকে এসে চেয়ারম্যানের বাড়ি থেকে তাদের উদ্ধার করেন। এর আগে তাদের কাছে থাকা ৩০ হাজার টাকা ও দুটি মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয় চেয়ারম্যানের লোকেরা। উদ্ধারের পর তাদেরকে চিকিৎসার জন্য পুলিশ নান্দাইল উপজেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে যান।
এ বিষয়ে নান্দাইল মডেল থানার ওসি মো. মিজানুর রহমান আকন্দ বলেন, আমি আটকে রাখার খবর পেয়েছি। পরে গিয়ে দেখি দরবার সালিশে তারা। পরে তাদেরকে সাথে করে নিয়ে এসেছি। তবে থানায় মামলা নেওয়ার বিষয়ে গড়িমসির তথ্যটি ঠিক নয়। আমি কোন অভিযোগই পায়নি। আর এই মামলাটি বর্তমানে পিবিআই তদন্ত করছে বলে জানা গেছে।
উক্ত ইউপি চেয়ারম্যান এডভোকেট আসাদুজ্জামান নয়ন বলেন, আমি চেয়ারম্যান হওয়ার পূর্বেও তাদের দরবার করেছি, পরেও দরবার করছি, এখানে দরবার করাটাই যেন আমার দোষ। তবে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করেছে।
আরএস