আল-আমিন, নীলফামারী:
এপ্রিল ১, ২০২৩, ১১:৪৩ এএম
আল-আমিন, নীলফামারী:
এপ্রিল ১, ২০২৩, ১১:৪৩ এএম
নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এখন সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্য সেবার দিক থেকে আস্থার ঠিকানা হয়ে দাড়িঁয়েছে।
২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে ডা. আবু শফি মাহমুদ, উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা হিসাবে যোগদানের পর থেকে স্বাস্থ্য সেবার দৃশ্যমান নজির স্থাপন করেছেন। তিনি ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় বিভিন্ন ধরনের যন্ত্রপাতি মেরামত সাপেক্ষে আনুষ্ঠানিকভাবে অপারেশন থিয়েটারের কার্যক্রম শুরু করেন। অপারেশন থিয়েটার আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন নীলফামারী-৪ আসনের সংসদ সদস্য আহসান আদেলুর রহমান এমপি।
হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার পর এই প্রথম সিজারিয়ান অপারেশন শুরু হয়। যা বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রিক মিডিয়ায় ব্যাপক প্রচার প্রচারণায় সাড়া ফেলছে। এখন প্রতিমাসে প্রায় ১০ থেকে ১২ টি সিজারিয়ান অপারেশন হয়ে থাকে। সাধারণ রোগীর একমাত্র ঠিকানা এখন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স।পাশাপাশি এখানে বিশেষায়িত ডেলিভারী কর্নার রয়েছে। এখানে মিডওয়াইফ গণ গর্ভবতী মায়েদের প্রসূতি সেবা দিয়ে যাচ্ছেন।
নবনির্মিত বিশেষায়িত ও আধুনিক এনসিডি কর্নারে হাইপারটেনশন, ডায়াবেটিস ও হাঁপানি রোগের চিকিৎসা ও ঔষুধ প্রদান করা হয়।
চক্ষু রোগীদের জন্য ভিশন কর্নারে চক্ষু সেবা দেয়া হয় এবং ইতিমধ্যে স্বল্প আয়ের মানুষের প্যাথলজি বিভাগে সকল প্রকার পরীক্ষার সু ব্যবস্থা আছে। এছাড়াও এখানে এক্সরে মেশিন, আল্ট্রাসনোগ্রাম ও ইসিজি মেশিন চালু রয়েছে। হাসপাতালের বহিঃবিভাগে রোগীর সংখ্যা অস্বাভাবিক ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে যা চোখে পড়ার মতো। পূর্বে যেখানে সেবা নিতে আসা রোগীর সংখ্যা ছিল ২০০-২৫০ জন এখন সেখানে তা বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ৪০০- ৫০০জন। রোগী প্রতিনিয়ত পর্যাপ্ত ঔষধ এবং সেবা নিতে পারছে বিধায় দিন দিন ক্রমেই রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এটা নিঃসন্দেহে স্বাস্থ্য বিভাগের একটি বড় অর্জন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
৫০ শয্যা হাসপাতালে উন্নীত হওয়ার পর এখন বেড অকুপেন্সি রেট ১০০% অর্জন হয়েছে।
ইতিমধ্যে হাসপাতালে অত্যাধুনিক অটোমেশন সিস্টেম চালু রয়েছে। এতে করে রোগীরা ডিজিটাল পদ্ধতিতে টিকিট গ্রহণ এবং বিশেষায়িত সেবা পাচ্ছে। এই কার্যক্রমে টিকিট কাউন্টার থেকে শুরু করে হাসপাতালের অন্তঃ বিভাগ, বহিঃ বিভাগ ও জরুরী বিভাগের সকল চিকিৎসক অটোমেশন পদ্ধতিতে চিকিৎসা সেবা প্রদান করে আসছে। এর ফলে কন্ট্রোল রুম থেকে একইসঙ্গে হাসপাতালের সকল সেবা কেন্দ্রের তথ্য পাওয়া যায়। এইচএসএস স্কোরিং এ গত দুই বছর পূর্বে জাতীয় পর্যাযে হাসপাতালের অবস্থান ছিল ৩০০ এর অধিক। বর্তমানে জাতীয় পর্যায়ে অবস্থান (বিগত ০৬ মাস পর্যন্ত) ৪০-৮০ এর মধ্যে রয়েছে। শুধু তাই নয় রংপুর বিভাগের মধ্যে কিশোরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে।
ন্যাশনাল ড্যাশবোর্ডে হাসপাতালের স্টাফদের(কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দ) বায়োমেট্রিক উপস্থিতির হার গড়ে ৮৮%। এটি রংপুর স্বাস্থ্য বিভাগের মধ্যে সর্বোচ্চ।
এছাড়াও ইউজার ফি থেকে আমাদের রাজস্ব আয় পূর্বের যে কোন সময় থেকে অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। প্যাথলজি, বহিঃবিভাগ, জরুরী বিভাগ, এক্সরে ও আলট্রাসনোগ্রাম থেকে বর্তমানে প্রতিমাসে আমাদের রাজস্ব আয় প্রায় ৭০ হাজার থেকে ৮০ হাজার টাকা। যা পূর্বের যে কোন সময়ের চেয়ে অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে।
করোনা কালীন সময়ে হাসপাতালের নিয়মিত টিকা কেন্দ্রের পাশাপাশি মাঠ পর্যায়ে প্রত্যন্ত অঞ্চলে কমিউনিটি ক্লিনিক গুলোতেও টিকাদান কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। কোভিড-১৯ টিকাদান কার্যক্রমে প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজে অর্জন ছিল ৭৫% , কমিরন্যাটি ফাইজার, স্কুল ভ্যাকসিনেশন (০৬-১১) প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজে অর্জন হলো ৮৪%।
মাঠ পর্যায়ে ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে স্বাস্থ্য সেবা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছে মাঠকর্মীরা। কমিউনিটি ক্লিনিক গুলোতে স্বাস্থ্য ও পুষ্টি সেবা কার্যক্রম অব্যাহত আছে।পূর্বের যে কোন সময়ের তুলনায় বর্তমানে কিশোরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে স্বাস্থ্যসেবার মান অনেকটাই বৃদ্ধি পেয়েছে।
স্বাস্থ্য সেবা নিতে আসা উপজেলার পুটিমারী ইউনিয়নের ভেড়ভেড়ী গ্রামে জোৎসা বেগম বলেন, হামরা গরীব মানুষ বড় ডাক্তারের গোড় টাকার অভাবে যাবার পাই না। এখন হামার হাসপাতালে সব ধরণের রোগের চিকিৎসা পাওয়া যায়। তিন টাকা টিকিট কাটি সেবা ও ঔষধ পাই।
একই কথা সেবা নিতে আসা বড়ভিটা ইউনিয়নের আজহারুল ইসলাম বলেন, এখন আর সব রোগীকে চিকিৎসার জন্য রংপুর যেতে হয় না। তিন টাকা টিকিটের বিনিময়ে ডাঃ এর পরামর্শ সহ বিনামূল্যে ঔষধ পাওয়া যায়।কম খরচে সকল পরীক্ষা নিরীক্ষা করা যায়। আগে সেবার মান এতোটা ছিল না।
জানতে চাইলে কিশোরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আবু শফি মাহমুদ বলেন, হাসপাতাল এখন সাধারণ রোগীর নির্ভরযোগ্য ঠিকানা হয়ে গেছে। নরমাল ডেলিভারী, সিজার, আল্ট্রাসনোগ্রাম এবং ইসিজি সহ সকল প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষা নিরীক্ষা খুব সহজেই করতে পারছে। পুরো হাসপাতাল এখন সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা হয়েছে। যা সার্বক্ষণিকভাবে তদারকি করা হয়। মোটকথা মানুষের দ্বার গোড়ায় স্বাস্থ্য সেবা পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে এগিয়ে চলেছে কিশোরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স।
আরএস