মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি
এপ্রিল ২৬, ২০২৩, ০৪:১৭ পিএম
মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি
এপ্রিল ২৬, ২০২৩, ০৪:১৭ পিএম
ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে মুন্সীগঞ্জের পদ্মা সেতুতে ১৯ এপ্রিল থেকে ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত গত ৭দিনে ২ লাখেরও বেশি যানবাহন পারাপার হয়েছে। এই যানবাহন থেকে টোল ২২ কোটি টাকার বেশি আদায় হয়েছে।
সর্বশেষ ২৫ এপ্রিল ২৪ ঘন্টায় পদ্মা সেতুতে ৩২ হাজার ২৬৪টি যানবাহন পারাপার হয়েছে। এতে ২ কোটি ৭৫ লাখ ৬৮ হাজার ৪৫০ টাকার টোল আদায় হয়েছে । এর মধ্যে জাজিরা প্রান্ত থেকে ঢাকায় ঢুকেছে ১৯ হাজার ৪৩১টি যানবাহন। পদ্মা সেতু সাইট কর্মকর্তা অতিরিক্ত পরিচালক আমিরুল হায়দার চৌধুরী এসব তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি জানান, ঈদে দক্ষিণবঙ্গগামী ২১ জেলার মানুষ পদ্মা সেতু দিয়ে পারাপার হয়েছে। প্রথমদিকে মোটরসাইকেল বন্ধ থাকলেও চলতি বছর ২০ এপ্রিল থেকে তা খুলে দেওয়া হয়। এতে সেতুতে টোল আদায় বেড়েছে। পাশাপাশি ঈদে ঘরমুখো যানবাহনের বাড়তি চাপও ছিলো। তবে সুষ্ঠু টোল ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে পারায় টোল প্লাজায় এবার কোন যানজট দেখা যায়নি।
তিনি আরও জানান, মঙ্গলবার ঢাকামুখী যানবাহনের তুলনায় মোটরসাইকেলের সংখ্যা বেশি ছিলো। চাপ সামলাতে সন্ধ্যা পর্যন্ত ৩ টি টোল বুথ থেকে টোল আদায় করা হয়েছে। পরে চাপ কমলে একটি টোল বুথ থেকেই মোটরসাইকেল চালকরা টোল দিয়ে জাজিরা প্রান্ত থেকে সেতু পার হন। দ্রুত টোল পরিশোধে বুথগুলোতে কোন ত্রুটি ছিলো না।
তিনি আরও জানান, ঈদুল ফিতরের আগের দিন এবছরের রেকর্ড পরিমাণ ৩ কোটি ৯১ লাখ টাকার টোল আদায় হয়েছে। পদ্মা সেতু চালুর পর ঈদুল আযহার আগের দিন গত বছরের ৮ জুলাই ৩১ হাজার ৭২৩টি যান পারাপারে রেকর্ড পরিমাণ টোল ৪ কোটি ১৯ লাখ ৩৯ হাজার ৬৫০ টাকা আদায় হয়।
আর সবচেয়ে বেশি ৫১ হাজার ৩১৬ যান পারাপার হয় পদ্মা সেতু খুলে দেয়ার প্রথম দিন ২৬ জুন। সেদিন মোটরসাইকেলসহ টোল আদায় হয়েছিল ২ কোটি ৯ লাখ ৩১ হাজার ৫৫০ টাকা। বরিশাল থেকে আসা বাসযাত্রী আলম শেখ বলেন, দুপুরে বাসা থেকে রওনা দিয়েছি। ৩ ঘন্টার মধ্যে সেতু পার হতে পেরেছি। টোল প্লাজায় কোন চাপ ছিলোনা।
ঈদ ও শবে কদর মিলিয়ে এবার সরকারি ছুটি ছিল ৫ দিন। বুধবার (১৯ এপ্রিল) ছিল শবে কদরের ছুটি। পরদিন বৃহস্পতিবার (২০ এপ্রিল) সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে সরকার। এরপর শুক্রবার থেকে ঈদের ছুটি শুরু হয়। যা শেষ হয় রোববার। গতি নিয়ন্ত্রণে স্পিডগান ব্যবহার বুধবার থেকে পদ্মাসেতুতে মোটরসাইকেলের পাশাপাশি অন্যান্য যানবাহনগুলোর গতি নিয়ন্ত্রণে স্পিডগান ব্যবহার হচ্ছে।
সেতুতে ঘন্টায় সর্বোচ্চ গতিবেগ ৬০ কিলোমিটার রাখার যে বাধ্যবাধকতা রয়েছে সেটি নিশ্চিত করতেই এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে মঙ্গলবার মুন্সীগঞ্জ পুলিশ সুপার মাহফুজুর রহমান আল-মামুন এ তথ্য জানান।
তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় পদ্মাসেতুতে কঠোর নজরদারি শুরু হচ্ছে। মঙ্গলবারও মোটরসাইকেলের পাশাপাশি দুইটি ব্যক্তিগত গাড়ি ও একটি পণ্যবাহী পিকআপকে জরিমানার আওতায় আনা হয়েছে। সাধারণ মানুষের প্রতি আইন-কানুন ও নিয়ম মানারও আহবান জানান পুলিশ সুপার।
মাহফুজুর রহমান জানান, শর্ত ভেঙে চলাচলের দায়ে মঙ্গলবার পদ্মাসেতুতে ১৯ জনকে ৬৮ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এ নিয়ে সেতুতে মোটরসাইকেল চলাচল শুরু হওয়ার পর গেল ৫ দিনে ৬০ জনকে জরিমানা করা হলো। এর মধ্যে ৫৭ জনই মোটরসাইকেল চালক।
তিনি আরও বলেন, পদ্মাসেতুতে মোটরসাইকেল চলাচল শুরু হওয়ার পর থেকেই আমরা তৎপর রয়েছি। সরকার যেসব শর্ত দিয়েছে সেগুলো যাতে মোটরসাইকেল চালকরা প্রতিপালন করেন তা নিশ্চিতে আমরা কাজ করছি। প্রতিদিনই কিছু মোটরসাইকেল চালক প্রয়োজন ছাড়া সেতুতে ঘুড়তে আসছেন। মূলত তারাই নিয়মটা ভাঙছেন। আমরা তাদের কোন ছাড় দিচ্ছি না। প্রয়োজনে জরিমানার অর্থ আরও বাড়ানো হবে। তবু শর্ত ভাঙতে দেয়া হবে না।
ট্রাফিক পুলিশ জানায়, মোটরসাইকেল চলাচলের পরদিন ২১ এপ্রিল ৯ মোটরসাইকেল চালককে ২৭ হাজার টাকা, ২২ এপ্রিল ৩ জনকে ৯ হাজার টাকা এবং ঈদ পরবর্তী দুইদিনে ২৩ এপ্রিল ২৩ জনকে ৭১ হাজার টাকা, ২৪ এপ্রিল ৬ জনকে ১৮ হাজার টাকা ও গতকাল ১৯ জনকে ৬৮ হাজারসহ সর্বমোট ১ লাখ ৯৩ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। ট্রাফিক বিভাগ বলছে, শর্ত ভেঙে নির্দিষ্ট লেনের বাইরে গিয়ে মোটরসাইকেল চালানো, ছবি তোলার উদ্দেশ্যে অহেতুক দাড়ানো, ওভারটেকিংসহ নানা কারণে সেতুর বিভিন্ন স্থান থেকে তাদের আটকের পর ট্রাফিক আইনে এই জরিমানা করা হয়।
প্রসঙ্গত, ঈদকে সামনে রেখে গেল ১৮ এপ্রিল একনেক সভায় পদ্মা সেতুতে মোটরসাইকেল চলাচল পুনরায় চালু করার নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০ এপ্রিল ভোর ৬ টা থেকে সেতুতে মোটরসাইকেল চলাচল উন্মুক্ত করে দেয়া হয়।
তবে শর্ত ছিলো- সেতুতে গতি সর্বোচ্চ ৬০ কিলোমিটার হবে, সেতুর ওপর গাড়ি থামিয়ে ছবি তোলা যাবে না, কোনো অবস্থাতেই সেতুতে নির্দিষ্ট মোটরসাইকেল লেন পরিবর্তন করা যাবে না, ওভারটেকিং করা যাবে না, চালকসহ সর্বোচ্চ দুজন মোটরসাইকেলে চড়তে পারবেন। শৃঙ্খলা না মানলে মোটরসাইকেল চলাচলের এ সুযোগ বাতিল করা হবে বলেও বারবার হুশিয়ারি দিচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা।
এইচআর