মামুনুর রশিদ, চট্টগ্রাম ব্যুরো
এপ্রিল ২৬, ২০২৩, ০৬:০৭ পিএম
মামুনুর রশিদ, চট্টগ্রাম ব্যুরো
এপ্রিল ২৬, ২০২৩, ০৬:০৭ পিএম
সম্প্রতি চট্টগ্রাম ওয়াসার পানি খাওয়া থেকে শুরু করে সর্বত্র অনুপোযোগী হওয়ায় ক্ষোভে ফুঁসে উঠছেন নগরবাসী। ওয়াসার সরবরাহ করা পানি একেক সময় একেক রকম আসছে। এর সঙ্গে পানিতে লবণাক্ততা তো রয়েছেই। এ পানি রান্না ও খাবারে ব্যবহারে পেট ব্যাথা, কাপড়ের রং নষ্ট হচ্ছে, এমনকি চুলও ঝরে যাচ্ছে। গত প্রায় এক মাস ধরে ওয়াসার পানি দূষণের এ সমস্যা চলছে। তবে কর্তৃপক্ষ এ নিয়ে কোন পদক্ষেপ নিচ্ছে না, এমন অভিযোগ নগরবাসীর।
গৃহিণী নুসরাত। স্বামী-সন্তান মিলে ৬ জনের সংসার। চকবাজার শুলকবহর এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকেন। মাসিক আয়ের সঙ্গে ব্যয় ঘাটতি স্বাভাবিক। এর মধ্যে নতুন করে যোগ হয়েছে পানির বিল। ৫০ টাকায় ২০ লিটারের পানি বাসায় আনতে আরও ৩০ টাকা খরচ হয় তার। দৈনিক ৪০ লিটারে ১৫০ টাকা হিসাবে মাসে ৪ হাজার ৫০০ টাকা খরচ যোগ হয়েছে। তবে খরচের হিসাবে আয় আর বাড়ে না।
আশারফ নামের ভবনের কেয়ারটেকার দশ হাজার টাকা বেতন পান। তিনি ক্ষোভে কান্না করে ফেলেন, তিন মেয়ে ও স্ত্রীসহ ৫ জনের সংসার। এমনিতেই সংসারে মাছ মাংস খাওয়া ছেড়ে দিয়েছি অনেক আগেই। এই পরিস্থিতিতে পানির জার ২০ লিটার ৫০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। কাঁধে চেপে আনলে রিকশা ভাড়া লাগেনা। খাবার ও রান্নার কাজে ব্যবহার করছি। গোসল ও কাপড় ধোঁয়ার জন্য ওয়াসার পানি ব্যবহার করেছি। এতে সবার চুল ঝরে যাচ্ছে। এই সমস্যা থেকে পরিত্রাণের উপায় খুঁজছে নগরবাসী।
স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ঈশান ক্লাবের সদস্য সচিব আশিকুর রহমান বলেন, পানির বিকল্প পানি। চট্টগ্রাম ওয়াসা কর্তৃপক্ষ বৃষ্টির কথা বলে সমস্যা এড়িয়ে যাচ্ছেন তা কিন্তু উচিৎ না। এইভাবে চলতে থাকলে গ্রাহকরা ক্ষোভে ঘেরাও কর্মসূচি করতে পারে ।
এদিকে পানিসংকট নিরসন ও পানিকে লবণমুক্ত করার দাবিতে মানববন্ধনের ডাক দিয়েছে চট্টগ্রামের বিভিন্ন সংগঠন। ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে মানববন্ধনের ডাক দেয়।
সংকটের বিষয়ে চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী মাকসুদ আলম বলেন, সমুদ্রের পানি নদীতে ঢুকে পড়ছে। এ কারণে ছয় ঘণ্টা পানি উত্তোলন করা হচ্ছে না। পানির উৎপাদন অর্ধেকে নেমে গেছে। এ ছাড়া কর্ণফুলী নদীতে শেওলা ঢুকে পড়ছে। রাসায়নিকের মাধ্যমে এ সমস্যা সমাধান করার চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে মুষলধারে বৃষ্টি না হওয়া পর্যন্ত এটি পুরোপুরি সমাধান করা যাবে না। বছরে আগে তিন থেকে চার দিন লবণের সমস্যা হতো। তবে এ বছর পর্যাপ্ত বৃষ্টির অভাবে একটু সমস্যা হয়েছে।
চট্টগ্রাম বাসায় ব্যবস্থাপনা পরিচালক একেএম ফজলুল্লাহর কাছে জানতে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে পানির সমস্যার কথা তুলতেই ঢাকায় মিটিংয়ে আছেন বলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেন।
উল্লেখ্য, বর্তমানে ওয়াসার আবাসিক গ্রাহক সংযোগ ৭৮ হাজার ৫৪২টি ও বাণিজ্যিক সংযোগ ৭ হাজার ৭৬৭টি। ৭৭০ কিলোমিটার পাইপলাইনের মাধ্যমে সংস্থাটি পানি সরবরাহ করে। বেশির ভাগ লাইন পুরোনো হওয়ার কারণে এমনিতেই সংকটে থাকতে হয় গ্রাহকদের। লাইনে লিকেজ বা ছিদ্রের কারণে পানি নষ্ট হয়। এখন সংকট আরও প্রকট হয়েছে।
এআরএস