Amar Sangbad
ঢাকা বুধবার, ০৬ নভেম্বর, ২০২৪,

মুন্সীগঞ্জে সড়ক ভেঙে খালে, দুর্ভোগে হাজারো মানুষ

আব্দুল্লাহ আল মাসুদ,  মুন্সিগঞ্জ

আব্দুল্লাহ আল মাসুদ, মুন্সিগঞ্জ

এপ্রিল ২৮, ২০২৩, ০৪:৫০ পিএম


মুন্সীগঞ্জে সড়ক ভেঙে খালে, দুর্ভোগে হাজারো মানুষ

চার বছর আগেও এখানে ৮ ফুট চওড়া একটি ইটের রাস্তা ছিল। এ রাস্তা দিয়ে মানুষ, রিকসা, অটোরিকশা, খেতের ফসল লইয়া ট্রলি গাড়ি চলাচল করতো। ২০২০ সালের বন্যায় খালের স্রোত আর বৃষ্টির পানিতে রাস্তা ভাইঙা খালে চইলা যায়। এর পর এই রাস্তা আর ঠিক করে নাই।গাড়িতো দূরে থাক, অহন পায়ে হাইট্টাও এই রাস্তা দিয়া যাওয়া যায় না। ভাঙা সড়কে চলাচলের দুর্ভোগ তুলে ধরে আক্ষেপের সঙ্গে কথা গুলো বলছিলেন মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার চরকেওয়ার ইউনিয়নের চরাঞ্চলের কাউয়াদি এলাকার বাসিন্দা জোসনা বেগম(৫৫)। 

প্রতিদিন এ সড়ক দিয়ে তার যাতায়াত। শুধু তিনি নন তার মত অসংখ্য মানুষ এ পথ ধরে যাতায়াত করতে গিয়ে দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। স্থানীয়ভাবে এটি আলীরটেক-কাউয়াদি সড়ক নামে পরিচিত। সড়কের দৈর্ঘ্য এক কিলোমিটারের বেশি। তবে সড়কটি গুরুত্বপূর্ণ। 

জোসনা বেগম বলেন, রাস্তার কিছু জায়গায় এখন ইটের অস্তিত্ব আছে। অনেক জায়গায় গভীর খাদ। সে খাদের উপর বাশ দিয়ে সাঁকো বানানো হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে আমাদের প্রতিদিন যাতায়াত করতে হয়। তিনি আক্ষেপের সঙ্গে বলেন, বাড়িতে এক বস্তা চাউল নিতেও অনেক কষ্ট করে যেতে হচ্ছে । জমির ফসল, কোন অনুষ্ঠান হলে, শহর থেকে মালামাল নিয়ে এ রাস্তা পাড় হয়ে বাড়িতে যেতে যে কি কষ্ট, সেটা আমরা ছাড়া কেউ বুঝে না। 

সরেজমিনে দেখা যায়, আলীরটেক বাজারের দক্ষিণ পাশ দিয়ে এ সড়কটি কাউয়াদি এলাকার দিকে চলে গেছে।সড়কটির পূর্বপাশে সরসরি মেঘনা নদী থেকে উৎপত্তি হওয়া মেঘনা খালটি। আলীরটেক বাজর থেকে ১০ ফুট চওড়া এই সড়কটি ধরে ১৫ মিটার সামনে এগুতেই দেখা গেলো মাত্র দুই ফুট চওড়া মাটির রাস্তা। সেটিতেও উঁচু নিচু গভীর খাদ। এ রাস্তার কোথাও কোথাও এখনো ইটের সলিংয়ের অস্তিত্ব রয়েছে। তবে অধিংকাশ স্থানে বড় বড় খাদ। খাদের মধ্যে রয়েছে বাশের সাঁকো। এর মধ্যে দিয়ে শিশু,বৃদ্ধসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ যাতায়াত করছেন। 

এসময় স্থানীয়রা বলেন, এ সড়কটি ছোট হলেও অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কাউয়াদি, আলীরটেক, দক্ষিণ চরমসুরা এলাকার ৫-৬ হাজার মানুষ তাদের প্রয়োজনে প্রতিদিন এ রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করেন। এ ছাড়াও মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া উপজেলা গুয়াগাছিয়া এবং চাঁদপুর জেলার মতলব ইউনিয়নের ২-৩ হাজার মানুষ শর্টকাট হিসেবে প্রতিদিন এ পথ দিয়ে মুন্সিগঞ্জ শহর হয়ে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ যাতায়াত করেন। সড়কটির বেহাল দশার কারনে স্থানীয় ও পথচারীরা গত কয়েক বছর ধরে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। বেশি ভোগান্তিতে পড়েন কৃষক, ছোট বাচ্চা ও বৃদ্ধরা। 

স্থানীয় ইমন হোসেন বলেন, বাজার থেকে কোন মালামাল কিনলে মাথায় করে নিতে হয়। তাও ভাঙা খাদের কারনে রাস্তা দিয়ে হেটে যাওয়া যায় না। ছোট বাচ্চারা এ পথে হাঁটতে পারে না। তাদের প্রায় এক কিলোমিটার রাস্তা কোলে করে নিয়ে হাঁটতে হয়। গ্রামে বিয়ের কোন অনুষ্ঠান হলে কোন ডেকোরেটর তাদের মালামাল নিয়ে আসতে চায়না। ১০ হাজার টাকার জায়গায় ২০ হাজার টাকা দিয়ে কাজ করাতে হয়। আমাদের ভোটে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছেন। আমরা এত কষ্ট করি, তারাও জানেন। অথচ ভোগান্তি লাঘবে কেউ কোন কাজ করছে না। 

গুয়াগাছিয়া এলাকার বাসিন্দা নবি হোসেন বলেন, গুয়াগাছিয়া থেকে গজারিয়া হয়ে সোনারগাঁও, নারায়ণগঞ্জ দিয়ে ঢাকায় যেতে ৫-৬ ঘন্টা সময় লাগে। তাই ট্রলারে করে মেঘনা নদী পার হয়ে এ পথ দিয়েই ঢাকায় যাতায়াত করি। এতে সময় কম লাগে। গত কয়েক বছর ধরে রাস্তাটি ভেঙে যাওয়ায় অনেক পথ পায়ে হাটতে হচ্ছে। রাস্তাটি সংস্কার করে দিলে সবার যাতায়াতের ভোগান্তি কমবে। 

রাস্তাটি ভেঙে যাওয়ায় এ পথ ব্যবহারকারীদের প্রতিনিয়ত দুর্ভোগের কথা নিজেও স্বীকার করেন চরকেওয়ার ইউনিয়নের আট নম্বর ওয়ার্ড সদস্য মন্টু দেওয়ান। তিনি বলেন, এ রাস্তা দিয়ে প্রতিদিন কয়েক হাজার মানুষ যাতায়াত করেন। মানুষকে কষ্ট করে আসা-যাওয়া  ও মালামাল আনা নেওয়া করতে হচ্ছে। আজ থেকে দশ বারো বছর আগে মাটির রাস্তা হয়। এর মধ্যে ইটের সলিং করা হয়েছিল। এরপরে এ রাস্তার জন্য আর কোনো বরাদ্দ পাওয়া যায়নি। যার ফলে রাস্তার সংস্কার কাজ করা হয়নি। এতে আস্তে আস্তে রাস্তাটি খালে বিলীন হয়ে গেছে। এ রাস্তাটি মানুষ ও গাড়ি চলাচলের উপযোগী  করতে হলে বড় ধরনের প্রকল্প প্রয়োজন। আমাদের বড় ধরনের কোনো প্রকল্প দেওয়া হচ্ছে না। তাই রাস্তার কাজ করতে পারছিনা। 

এ বিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যান আফসার উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, এ রাস্তাটির দৈর্ঘ্য এক কিলোমিটার। রাস্তাটির পূর্ব পাশে গভীর খাল। এখানে নতুন রাস্তা করে টিকিয়ে রাখতে হলে আগে সুরক্ষা দেয়ালের ব্যবস্থা করতে হবে। কিছুদিন আগে স্থানীয় সংসদ সদস্য এখানে এসেছিলেন।আমরা তাকে রাস্তাটি দেখিয়েছি। বড় একটি প্রকল্প পেলে রাস্তা কাজ করা হবে। 

সদর উপজেলা এলজিইডি প্রকৌশলী মো. সফিকুল আহসান বলেন, এ রাস্তাটি এলজিইডির মধ্যে নয়। রাস্তাটি করতে হলে জেলা পরিষদ অথবা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসের মাধ্যমে করতে হবে।

এইচআর

 

Link copied!