এপ্রিল ৩০, ২০২৩, ১১:০৭ পিএম
রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকারের ফাঁস হওয়া সেই নগ্ন ভিডিওটি এডিটেড নয়। এই ভিডিওটি তার নিজের বলে সিআইডির ফরেনসিক বিভাগ থেকে প্রমাণিত হয়েছে। শিগগিরই এ রিপোর্ট রাজশাহী মহানগর পুলিশের কাছে পাঠানো হবে।
সিআইডির একটি বিশ্বস্ত সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
রাজশাহীর বোয়ালিয়া থানার ওসি সোহরাওয়ার্দী হাসান বলেছেন, ফরেনসিক রিপোর্টটি তিনি এখনও হাতে পাননি। তবে দ্রুতই চলে আসবে বলে নিশ্চিত করেছেন।
এ বিষয়ে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, সিআইডির ল্যাবে পরীক্ষায় ভিডিওটি যে এডিটেড নয় সেই বিষয়টি আমরাও শুনছি। এটির আনুষ্ঠানিক প্রকাশের অপেক্ষায় রয়েছি। প্রকাশ হলে দলীয় হাইকমান্ডের নিকট বিষয়টি জানানো হবে। হাইকমান্ড তার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, গত ১৭ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকারের একটি নগ্ন ভিডিও ফাঁস হয়। তিন মিনিট ২৬ সেকেন্ডের ওই ভিডিওটি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীসহ বিভিন্ন মহলে ছড়িয়ে পড়ে। শুরু হয় তোলপাড়। এ ঘটনায় ১৮ ফেব্রুয়ারি ডাবলু সরকার মহানগরীর বোয়ালিয়া মডেল থানায় একটি মামলা করেন।
পরবর্তীতে এ ঘটনায় দলীয় পদ থেকে তাকে অব্যাহতি দিতে রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির নেতাদের স্বাক্ষরসহ নগর আওয়ামী লীগের সদস্য ও সাবেক সভাপতি অ্যাড. মোজাফফর হোসেন একটি চিঠি দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পাঠান। গত ২৯ মার্চ আওয়ামী লীগ সভাপতি কার্যালয়ে সেই চিঠিটি গ্রহণ করা হয়।
চিঠিতে বলা হয়, রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকারের একটি যৌন আবেদনময়ী নগ্ন ভিডিও গত ১৭ ফেব্রুয়ারি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে রাজশাহীসহ আশপাশের জেলা এবং স্থানীয়-জাতীয় গণমাধ্যমে বিষয়টি মুখ্য আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। ডাবলু সরকারের এমন নৈতিক স্খলনজনিত কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠন তাকে রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকসহ সব কর্মকাণ্ড থেকে বহিষ্কারের দাবি জানাচ্ছে।
চিঠিতে আরও বলা হয়, ডাবলু সরকারের এমন কর্মকাণ্ডে দলের ভাবমূর্তি ধ্বংস করছে, যা আগামী জাতীয় নির্বাচনসহ অন্যান্য নির্বাচনে ব্যাপক প্রভাব ফেলবে। ইতোমধ্যে দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের মধ্যে চরম অসন্তোষ বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।
ডাবলু সরকার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি রাজাকার আবদুস সাত্তার টিপুর প্রধান সহযোগী ও মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি রাজাকার আবদুর রশিদ সরকারের পুত্র বলেও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।
এ বিষয়ে সেই ডাবলু সরকার সাংবাদিকদের বলেন, ভিডিওটি আমি দেখেছি। দেখে আমার কাছে মনে হলো, সম্পূর্ণটাই ফেক। ভিডিও’র ওই ব্যক্তির শরীরের ওপরের অংশটি তার হলেও নিচের অংশটি অন্য কারও। সেটি এডিট করে বসানো হয়েছে।
তিনি বলেন, আপনারা জানেন আমি জিম করি, বিভিন্ন জিমের সঙ্গে সম্পৃক্ত। এর আগে বিভিন্ন জিমে শরীরচর্চা করা অবস্থায় ছবি ফেসবুকে গেছে। আমার কাছে মনে হয়েছে, আমার অর্ধেক শরীরের সঙ্গে অন্য কারোটা দিয়ে এটা করা হয়েছে। এটা একটা ফেক আইডি দিয়ে ছড়ানো হচ্ছে। আমি এখন মামলায় গেছি। মামলায় তদন্ত করে যেটা হবে সেটাই মেনে নেব।
তিনি আরও বলেন, আমি বোয়ালিয়া মডেল থানায় আইসিটি আইনে মামলা করেছি। প্রাথমিকভাবে আমি কাউকে কোনও কিছু বলব না। আইনের মাধ্যমে তা বের করা হবে।
এদিকে সিআইডির ফরেনসিক সূত্র জানায়, ডাবলু সরকারের মামলার প্রেক্ষিতে ওই ভিডিওটি এডিটেড না বাস্তব তা পরীক্ষার জন্য ঢাকার সিআইডির ফরেনসিক বিভাগে পাঠানো হয়। সিআইডির ফরেনসিক বিভাগের আইটি বিশেষজ্ঞ টিম সেটি পরীক্ষা করে।
সূত্র জানায়, ডাবলু সরকারের এডিটেড দাবি করা সেই ভিডিওটি প্রকৃতপক্ষে এডিটেড নয়। এটি তার রিয়েল ভিডিও। পরীক্ষার প্রতিবেদন দ্রুতই রাজশাহী মহানগর পুলিশের নিকট পাঠানো হবে।
রাজশাহী মহানগর পুলিশের বোয়ালিয়া থানার ওসি সোহরাওয়ার্দী হাসান বলেন, আনুষ্ঠানিকভাবে রিপোর্টটি এখনও আমার নিকট আসেনি। তবে শুনছি দ্রুত চলে আসবে। রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পর পরবর্তী আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।