রাণীশংকৈল (ঠাকুরগাঁও) প্রতিনিধি
মে ১, ২০২৩, ১১:৪৬ পিএম
রাণীশংকৈল (ঠাকুরগাঁও) প্রতিনিধি
মে ১, ২০২৩, ১১:৪৬ পিএম
"জন্মের দুই বছর পর হারিয়েছেন বাবাকে, পাঁচ বছর বয়সে মা`কে হারিয়ে এতিম হয়েছেন সওদাগর। পৃথিবীতে আপন বলতে একমাত্র বড় ভাই ছাড়া আর কেউ নেই। জীবন যুদ্ধে টিকে থাকতে যে সময় তার স্কুলে যাওয়ার কথা সে সময় থেকেই বড় ভাইয়ের সাথে অন্যের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন তিনি।
বড় ভাই বিয়ে করে পৃথক হবার পর আরো একা হয়ে যায় সে। তবুও থেমে থাকেনি জীবন চলার পথ। সুস্থ সবল বেকারদের নিয়ে কিছু করার প্রত্যয় নিয়ে স্বপ্ন লালন করছে"।
মহান মে দিবস উপলক্ষে শ্রমিকদের জন্য কিছু বলেন জানতে চাইলে হেসে দিয়ে সে বলল, সততা থাকলে সব কিছু করা সম্ভব।
আমার জীবনের সবচেয়ে বড় অর্জন হলো সততা। আজকের দিন (১ মে) থেকে প্রতিজ্ঞা নিন কাউকে ঠকাবেন না। তাহলে কোনো দিন আপনি ঠকবেন না। একদিন সফলতা আসবেই। দরিদ্র পরিবারে জন্ম নিয়েছি কোনদিন ভিক্ষা করি নাই, কোন না কোন কিছু করার চেষ্টা করেছি, কোন সময় খেয়েছি কোন সময় ক্ষুধা নিয়ে ঘুমিয়েছি।
এরপরেও কারো কাছে হাত পাতিনি, ছোটবেলা থেকেই দাদার সাথে অন্যের কাজ করেছি, দাদা পৃথক হয়ে গেলে আমার গুরু কুদ্দুস ভাইয়ের সাথে রডমিস্ত্রির কাজ শিখছি" জীবন যুদ্ধে হার না মানা আকাশসমান স্বপ্ন নিয়ে কথাগুলো বলছে, ঠাকুরগাঁও জেলার রাণীশংকৈল উপজেলার প্রয়াগপুর গ্রামের অসহায় গরীব পরিবারে জন্ম নেয়া অশিক্ষিত ভাগ্যবঞ্চিত ১৭ বছর বয়সী তরুণ এক শ্রমিক সওদাগর।
এলাকার প্রতিবেশী রাজমিস্ত্রী মহন্ত কুমার বলেন, সওদাগরের দরিদ্রতার কথা আমরা সকলেই অবগত, খুব ছোট থেকেই তার জীবন চলার পথে অনেক অভাব অনটন থাকা সত্ত্বেও তার মনুষ্যত্বের মানবিক মনটি অনেক বিশাল। আশা করছি ভবিষ্যতে তার আদর্শ, তার মনুষ্যত্ব তাকে অনেক দুর এগিয়ে নিয়ে যাবে। সমাজে বিত্তবানদের কাছে অনুরোধ থাকবে ছেলেটির পাশে থেকে সহযোগিতা করার।
উপজেলার নির্মাণ শ্রমিক ইউনিয়নের সদস্য আব্দুল কুদ্দুস জানান, সওদাগর দীর্ঘদিন ধরে আমার সাথে কাজ করছে।তার ব্যবহার, তার কথাবার্তা, চালচলন সত্যি খুব জনপ্রিয়। কখনো তাকে রাগ করে কথা বলিনি, কারণ বলতে হয়নি। কোন কিছু বলার আগেই সে কাজ করে দেয়। অনেক কিছুই শিখতে পেরেছে সে। আমি অবশ্যই দোয়া ভবিষ্যতে সে ভালো কিছু করবে।
জীবন যুদ্ধে টিকে থাকার সামনে সব বাধাকে তুচ্ছ করতে যে মনোবলই যথেষ্ট তার রোজই প্রমাণ দিয়ে যাচ্ছেন অজপাড়া গায়ের সৎ ও নিষ্ঠাবান সেই ছেলে সওদাগর ।
এইচআর