Amar Sangbad
ঢাকা সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪,

নির্বাচনী এলাকা ৭৬ : কুষ্টিয়া-২ (ভেড়ামারা-মিরপুর) আসন

ইনু’র জন্য চ্যালেঞ্জ, মাঠ গোছাতে ব্যস্ত বিএনপি

নজরুল ইসলাম মুকুল, কুষ্টিয়া

নজরুল ইসলাম মুকুল, কুষ্টিয়া

মে ৩, ২০২৩, ০৬:৩৩ পিএম


ইনু’র জন্য চ্যালেঞ্জ, মাঠ গোছাতে ব্যস্ত বিএনপি

নির্বাচনী এলাকা ৭৬, কুষ্টিয়া -২ (মিরপুর -ভেড়ামারা) আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে রাজনৈতিক দল গুলো ঘর গোছাতে ব্যস্ত সময় পার করছে। এই আসনটি বিএনপির ঘাটি থাকলেও জাতীয় নির্বাচন থেকে বিএনপি  জোট সরে থাকায় দখলে নিয়েছে আওয়ামীলীগ সমর্থিত  জোট। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু  নৌকার মাঝি হয়ে নির্বাচিত হয়ে আসলেও তার দলকে এখনো তেমন চাঙ্গা করতে পারেনি। সাধারণ জনগণ সব সময় জাসদকে প্রত্যাক্ষান করে আসায় হাসানুল হক ইনু কোন বারই জাসদ প্রাথী হয়ে নির্বাচিত হতে পারেনি। প্রতিবারই তিনি হেরে গেছেন।

 আওয়ামীলীগের নৌকা প্রতীক ও সমর্থন নিয়ে তিনি বার বার নির্বচিত হচ্ছেন। তিনি নির্বাচিত হবার পর থেকে মিরপুর ভেড়ামারা আসনে তেমন উল্লেখযোগ্য উন্নয়নমুলক কাজ করতে পারেনি। ফলে হাসানুল হক ইনু’র জন্য এবারের নির্বাচন চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে। আওয়ামীলীগের সাথে জাসদের মধ্যে ইতিমধ্যে ফাটল ধরেছে। যদি আওয়ামীলীগ ইনুকে  সমর্থন না করে তবে তিনি হেরে যাবেন নিশ্চিত। ২০১৮ সালের মত জাতীয় সংসদ নির্বাচন না হলে, আগামী সংসদ নির্বাচন হবে জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু’র জন্য চ্যালেঞ্জ। এ নির্বাচনে মূল প্রতিপক্ষ হবে আওয়ামীলীগের যুগ্ন সাধারন সম্পাদক মাহাবুব-উল-আলম হানিফ’র অনুসারীরা। 

অপর দিকে বিএনপি তথা জোট নির্বাচনে অংশ নিবে কিনা তা স্পষ্ট না হলেও বিএনপি তাদের সংগঠন  শক্তিশালী করতে মাঠ পর্যায় ব্যাপক তৎপর রয়েছেন। কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির সাবেক  সভাপতি বারবার নির্বাচিত সাবেক সংসদ সদস্য বীরমুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক শহিদুল ইসলাম তার জনপ্রিয়তা ধরে রাখতে দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হবার পর মিরপুর ভেড়ামায় ব্যাপক উন্নয়ন মুলক কর্মকান্ড চালিয়ে জনপ্রিয়তার শীর্ষে রয়েছেন। তিনি আগামীতে প্রার্থী হলে এই আসনটি ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে মাঠ পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ মন্তব্য করছেন। পাশাপাশি বিএনপির আরেক নেত্রী বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য, অবিভক্ত  ঢাকা মহানগর মহিলা দলের সাবেক সেক্রেটারী কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির সদস্য ফরিদা ইয়াসমিন তিনিও দলের পক্ষে থেকে মনোনয়নপত্র কিনবেন এবং দল যদি নির্বানে আসে তবে তিনি নির্বাচনে প্রাথী হবেন বলেও তার দলীয় অনুসারীরা মন্তব্য করছেন। যে কারনেই তিনি  এলাকায় দাপিয়ে বেড়াছেন। আরেক প্রাথী সাবেক এমপি ও সাবেক জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান (জাপা-জাফর) আহসান হাবিব লিংকন তিনিও নাকি বিএনপি  সমর্থিত জোট থেকে প্রার্থী হতে পারেন। তবে এলাকায় তার জনপ্রিয়তা শূন্যের কোঠায়। জামায়াতে ইসলামীর  কর্মকান্ড লক্ষ্য করা না গেলেও ভিতরে ভিতরে তারাও সংগঠিত হচ্ছে বলে জানা গেছে। তারা নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন কিনা তা নিয়ে এখনো সন্দেহের মধ্যে রয়েছে। 

এদিকে আওয়ামীলীগের সম্ভাব্য তালিকায় যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তারা হলেন, আওয়ামীলীগ নেতা কুষ্টিয়া নাগরিক কমিটি ও কুষ্টিয়া বিএমএ’র সভাপতি এবং কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ডাক্তার এসএম মোস্তানজিদ লোটাস, মিরপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি এ্যাডভোকেট আব্দুল হালিম, সাধারন সম্পাদক ও মিরপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কামারুল আরেফিন, কুষ্টিয়া মেডিকেলের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ও কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের প্রতিষ্ঠাকালীন সাবেক অধ্যক্ষ ডাক্তার ইফতেখার মাহমুদ এর নামও শোনা যাচ্ছে। 

কুষ্টিয়া জেলার অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ন আসন কুষ্টিয়া-২। ভেড়ামারা ও মিরপুর উপজেলা নিয়ে গঠিত এ আসনে মোট ভোটার সংথ্যা ৪ লাখ ৬৭ হাজার ৩১৪ জন। এর মধ্যে পুরুষ ২ লাখ ৩৫ হাজার ৪শ’ ৮৯ জন এবং নারী ভোটার ২ লাখ ৩১ হাজার ৮২৪ জন। রাজনৈতিক কারনে গুরুত্বপূর্ন ভেড়ামারা উপজেলা। এখানে আওয়ামীলীগের যুগ্ন সাধারন সম্পাদক মাহাবুব-উল-আলম হানিফ, জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু, জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য বীরমুক্তিযোদ্ধ অধ্যাপক শহিদুল ইসলাম ও বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ফরিদা ইয়াসমিন, জাতীয় পার্টির (জাফর) প্রেসিডিয়াম সদস্য আহসান হাবীব লিংকন’র বাড়ি। এ ছাড়াও   বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ব্যারিষ্টার রাগীব রউফ চৌধুরী তিনি মিরপুর উপজেলার একক সম্ভব্য প্রার্থী হিসেবে দলীয় নেতা কর্মীদের সাথে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছেন।   মিরপুরে ভোটার সংখ্যা বেশী হওয়ায় তিনি প্রার্থী হলে নির্বাচিত হতে পারেন বলেও দলীয় সূত্রে জানা গেছে। 

 ২০০৯ সালের নির্বাচনে ভোটের রাজনীতির বলি হয়ে মাহাবুব উল-আলম হানিফ কে কুষ্টিয়া-৩ আসনে নির্বাসনে পাঠিয়ে এ আসনে মনোনয়ন দেওয়া হয় জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু কে। মাহবুব-উল-আলম হানিফ এখন কুষ্টিয়া-৩ আসনের এমপি। কিন্তু তার সকল অনুসারীরা কুষ্টিয়া-২ তথা ভেড়ামারা-মিরপুরে। তার ইশারা ছাড়া কোন কাজ করেনা আওয়ামীলীগের নেতাকর্মী। যার কারনে মাঝে মাঝেই উত্তপ্ত  হয়ে উঠে জাসদ আওয়ামীলীগের রাজনীতির মাঠ। খুনোখুনিও হয়েছে অনেক। ২০১৮ সালের নির্বাচনেই হাসানুল হক ইনুকে আটকে দিয়েছিল আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীরা। যখন কোন কুল পাচ্ছিলেন না তখন ভোটের মাত্র দুই দিন আগে কুষ্টিয়াস্থ হানিফের বাসায় গেলে বরফ গলতে শুরু করে। তারপরই বিজয় নিশ্চিত হয় ইনু’র। ভেড়ামারা উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক আলহাজ্ব শামিমুল ইসলাম ছানা বলেছেন, ইনুকে আর ছাড় নয়। এবারে আওয়ামীলীগের নৌকা আওয়ামীলীগেরই হাতে থাকবে। কাউকে আর ভাগ দিতে চায় না। 

তিনি বলেন, ভেড়ামারা-মিরপুরের মাটি আওয়ামীলীগের দূর্ভেধ্য ঘাঁটি। আগামী নির্বাচন কে সামনে রেখে আওয়ামীলীগের অনেকেই এখন মাঠে চষে বেড়াচ্ছেন। ঘন ঘন এলাকায় আসছেন। সামাজিক আচার অনুষ্ঠানেও যোগ দিচ্ছেন। 
অন্যদিকে ১৩টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা নিয়ে গঠিত মিরপুর উপজেলার মোট আয়তন ২৯৬.৩১ বর্গ কিলোমিটার। 
কুষ্টিয়ার গুরুত্বপূর্ন এ আসনটি বিভিন্ন সময় বিএনপি, জামায়াতে ইসলাম ও জাতীয় পার্টির কব্জায় ছিল। আর ২০০৯ সাল থেকে একটানা ৩ বার এ আসনটি আওয়ামীলীগের শরিক দল জাসদের দখলে চলে যায়। 

অপরদিকে বিএনপি যদি একক বা জোটভূক্ত নির্বাচন করে তাহলে এ আসনে সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকায় রয়েছেন, কুষ্টিয়া জেলা বিএনপি’র সাবেক সভাপতি ও জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য, সাবেক এমপি বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক শহীদুল ইসলাম, জাতীয় পাটির সাবেক এমপি আহসান হাবীব লিংকন (জাতীয় পার্টি-জাফর)  বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ব্যারিষ্টার রাগীব রউফ চৌধুরী এবং অবিভক্ত  ঢাকা মহানগর মহিলা দলের সাবেক সেক্রেটারী কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির সদস্য ফরিদা ইয়াসমিন তিনিও এ আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী। 

তবে আওয়ামীলীগ বা ১৪ দলীয় জোটের প্রার্থী যেই হোক না কেন ভোটের মাঠে তাদের মূল প্রতিদ্বন্ধী হবে বিএনপি বা তাদের সমমনা জোট প্রার্থী এটা নিশ্চিত। 

এদিকে সিদ্ধান্তহীনতায় থাকা বিএনপি শেষ পর্যন্ত নির্বচনে অংশ নিলে এ আসনে তারা চাইবে হারানো গৌরব পুনরুদ্ধার। ১৪ দলীয় জোট চাইবে বিজয়ের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে। যদিও বিএনপি নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন করে যাচ্ছে। অবাধ, সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে এ আসনটি বিএনপি’র দখলে চলে যাবার সম্ভাবনাও অনেক বেশী।

আরএস
 

Link copied!