Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪,

নিহত সজিব জানতো না সে জমি দখল মিশনে যাচ্ছে

কেরানীগঞ্জ প্রতিনিধি

কেরানীগঞ্জ প্রতিনিধি

মে ৯, ২০২৩, ০১:২৫ পিএম


নিহত সজিব জানতো না সে জমি দখল মিশনে যাচ্ছে

কেরানীগঞ্জের তারানগরে জমি দখলকে কেন্দ্র করে দুই গ্রুপের বিবাদে প্রাণ দিলো সজিব (২০) নামে এক নিরীহ যুবক।  সোমবার (৮মে) দুপুর ২ টার দিকে দুই বন্ধুসহ অন্যান্যদের সাথে জমি দখল নিতে গিয়ে প্রতিপক্ষ লোকজনের হামলায় সে নিহত হয়।  যদিও নিহতের ভাইয়ের দাবী তার ভাই জানতো না সে জমি সংক্রান্ত কাজে যাচ্ছে। তবে এক পক্ষ বলছে সে তাদের শ্রমিক ছিলো।

কেরানীগঞ্জের শাক্তা ইউনিয়নের খোলামুড়া জিয়া নগর এলাকার বাবুল বেপারীর ছেলে সজিব। বড় ভাইয়ের সাথে কাজ করতেন স্থানীয় একটি পার্কে। ঘটনার আগের দিন দুই বন্ধু তালহা ও রাকিবের সাথে কথা হয় একটি কাজে যাবেন, তাই কিছু মোটর সাইকেল লাগবে। তবে কাজটি যে জমি দখল তা জানতো না সজিব, দুই বন্ধুসহ অন্যান্য লোকজনের সাথে তারানগরের কলমারচর গিয়ে প্রতিপক্ষের অতর্কিত হামলা মারা যায় সে।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, মোয়াযেম হোসেন, আব্দুল মান্নান ও ফরিদউদ্দীনসহ বেশ কয়েকজন মিলে কলমারচর এলাকার শাহাবুদ্দিনের কাছ থেকে সাড়ে ১৪ শতাংশ জমি ক্রয় করে নামজারী ও খাজনা পরিশোধ করেন। এদিকে ওই জমি নিজের বলে দাবি করেন তারানগর ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সভাপতি সামসুল আলম। এ নিয়ে উভয় পক্ষের মঝে বিরোধ চলছিলো দীর্ঘদিন।

সোমবার সকালে  ফরিদউদ্দীন, মান্নান, মোনায়েম গং বেশ কিছু মোটরসাইকেল নিয়ে ঘটনাস্থলে এসে জমিতে মালিকানা সাইনবোর্ড লাগান এবং গাছপালা পরিষ্কার করতে লাগেন৷ খবর পেয়ে দুপুর ২ টার দিকে সামসুল আলম ও তার ছেলে মামুনের নেতৃত্বে ২০/২৫ জন নানা বয়সী নারী-পুরুষ ধারালো অস্ত্র নিয়ে প্রতিপক্ষের লোকজনের উপর হামলা চালায় এবং সাইনবোর্ড ভেঙে ফেলেন। এসময় দৌড়ে পালানোর সময় প্রতিপক্ষের ধারালো ছুরির আঘাতে সজিবের মৃত্যু হয়। ফরিদউদ্দীন মোনায়েম গংদের দাবী সজিব তাদের শ্রমিক ছিলো। যদিও সজিবের ভাই শুভর দাবী তার ভাইকে তালহা ও রাকিব ঘুরতে যাওয়ার কথা বলে জমি দখলের শোডাউনে নিয়ে যায়।

শুভ বলেন, সজিব ও আমি মধুসিটি এলাকায় একই পার্কে কাজ করি। সোমবার তালহা নামে তাদের পুর্ব পরিচিত এক লোক তার পালসার বাইকটিসহ তাকে একটি জায়গায় যাওয়ার কথা বলে, কিন্তু সে জানায় বাইকটি তার নয় তার ভাইয়ের। তাই পর দিন ১১ টার দিকে পার্ক থেকে তালহা ও রাকিব তার ভাই সজিবকে বাইকসহ নিয়ে যায়।

দুপুরে ভাইকে ফোন দিলে তালহা ফোন রিসিভ করে জানায় তারা একটি মিশনে আছেন। পরে বারবার কল দিলে তালহা একটি নাম্বার দিয়ে তার সাথে যোগাযোগ করতে বলে। সে নাম্বারে কল দিলে হামলায় আহত রাকিব জানান তার ভাই বাইক এক্সিডেন্টে গুরুতর আহত হয়ে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ভর্তি আছে। পরে হাসপাতালে গিয়ে দেখেন তার ভাই জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে প্রতিপক্ষের হামলায় মারা গেছে।

ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর এলাকায় শোকাবহ অবস্থা বিরাজ করছে। ছেলে হত্যার বিচার চেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়ছেন মা। এক মাস আগে বিয়ের পিড়িতে বসা স্ত্রী বারবার জ্ঞন হারাচ্ছেন। যে কোন মূল্যে স্বামী হত্যার বিচার চান। স্ত্রী ও মায়ের অভিযোগ তালহা ও রাকিব সজিবকে ডেকে নিয়ে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে। মিথ্যা বলে তাকে ঘটনাস্থলে নিয়ে গেছে। সজিব এলাকায় নিরিহ ও ভদ্রলোক হিসেবেই পরিচিত ছিলো।

এদিকে জমির মালিকদের একজন ফরিদ উদ্দিন বলেন, কয়েকজন শ্রমিক নিয়ে ক্রয় করা জমিতে সাইনবোর্ড লাগানোর সময় তারা অতর্কিত হামলা চালিয়ে একজনকে হত্যা ও কয়েকজনকে রক্তাক্ত জখম করেছে। জমিটি নিয়ে আদালত ১৪৫ ধারা জারি রয়েছে বলেও জানান তিনি।

তবে অপর পক্ষের সামসুল আলম ও তার লোকজনকে এলাকায় গিয়ে পাওয়া যায়নি। তাছাড়া ঘটনাস্থলের আশেপাশের বাড়িগুলোও পুরুষ শূন্য প্রায়। স্থানীয়দের অভিযোগ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে যাওয়া লোকজন মারামারির ব্যাপারটি জানতো না।

এব্যাপারে কেরানীগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মামুনুর রশীদ জানান, খবর পেয়ে পুলিশের একাধিক টিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। হামলাকারীরা গা ঢাকা দিয়েছে। তবে ৫ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হচ্ছে।

আরএস
 

Link copied!