Amar Sangbad
ঢাকা সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪,

বিসিসি নির্বাচন

মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে ধর্ণাঢ্য খোকন সেরনিয়াবাত

আরিফ হোসেন, বরিশাল ব্যুরো

আরিফ হোসেন, বরিশাল ব্যুরো

মে ২৩, ২০২৩, ০৪:৩৪ পিএম


মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে ধর্ণাঢ্য খোকন সেরনিয়াবাত
বাম থেকে আবুল খায়ের আবদুল্লাহ, কামরুল আহসান রুপন, ইকবাল হোসেন তাপস, মুফতি সৈয়দ মো. ফয়জুল করিম

আসন্ন বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে ছয়জন, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১৩৪ এবং সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে ৪০ জন পদপ্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন। মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে নগদ টাকা ও সম্পদে এগিয়ে রয়েছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা মার্কার প্রার্থী আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাত। ভোটের মাঠে থাকা মেয়র পদের ছযজন বৈধ প্রার্থীর মধ্যে তার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি সবচেয়ে বেশি। এরপরেই রয়েছেন জাতীয় পার্টি মনোনীত লাঙল মার্কার প্রার্থী ইঞ্জিনিযার ইকবাল হোসেন তাপস। নগদ টাকার ক্ষেত্রে সমানে সমান চরমোনাই পীরের ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত প্রার্থী মুফতী সৈয়দ মোহাম্মদ ফয়জুল করিম এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী কামরুল আহসান রুপন। অপর তিনজন প্রার্থীর স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তি রয়েছে ৫০ লাখ টাকার নিচে। নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া প্রার্থীদের হলফনামা থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

খোকন সেরনিয়াবাত:  ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও এপার্টমেন্ট ভাড়া থেকে তার বার্ষিক আয় সাড়ে ১০ লাখ টাকার উপরে। অস্থাবর সম্পত্তির মধ্যে তার নগদ রয়েছে ২ কোটি ৫০ লাখ ৮৩ হাজার ৮৭২ টাকা। স্ত্রী লুনা আব্দুল্লাহর রয়েছে ১ কোটি ৩৫ লাখ ৮৪ হাজার টাকা। ব্যাংকে জমা রয়েছে নিজের নামে পৌনে ৩ লাখ এবং স্ত্রীর নামে রয়েছে মাত্র ১২ হাজার টাকা। স্থাবর সম্পত্তির মধ্যে রয়েছে খুলনায় চারতলা একটি ভবন, ঢাকার ধানমন্ডিতে একটি ও উত্তরায় ছয়টি এপার্টমেন্ট। খোকন সেরনিয়াবাত ও তার স্ত্রী লুনা আব্দুল্লাহর নামে পৃথক দুইটি গাড়ি আছে। প্রার্থীর নিজের গাড়ির মূল্য ৩২ লাখ টাকা এবং স্ত্রীর গাড়ির মূল্য ৪৯ লাখ টাকা। স্ত্রীর নামে ২০ ভরি স্বর্ণের পাশাপাশি নিজেরও রয়েছে ১০ ভরি স্বর্ণ। এসব স্বর্ণ উপহার হিসেবে পেয়েছেন এ দম্পত্তি। প্রার্থীর লাইসেন্স করা একটি পিস্তল ও একটি শটগান রয়েছে। ১৯৫৭ সালে জন্মগ্রহণ করা ৬৬ বছর বয়সের খোকন সেরনিয়াবাতের কোনো দেনা নেই। চলমান কোনো ফৌজদারি মামলা নেই। এছাড়া হলফনামায় তিনি নিজেকে স্ব-শিক্ষিত বলে উল্লেখ করেছেন।

ইকবাল হোসেন তাপস: জাতীয় পার্টি মনোনীত প্রার্থী ইকবাল হোসেন তাপসের নামে দুইটি ফৌজদারি মামলা রয়েছে। তবে উভয় মামলা সুপ্রিম কোর্টের আদেশে স্থগিত রয়েছে। তার বিরুদ্ধে দেওয়ানী মামলাও রয়েছে। তিনি একটি প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী পরিচালক এবং তিনটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে তার শেয়ার রয়েছে। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে তিনি বার্ষিক সম্মানী পান ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা। একটি প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী পরিচালক পদে থেকে তিনি বার্ষিক বেতন ভাতা পান প্রায় ৭৭ লাখ টাকা। তার নগদ টাকা আছে ২ কোটি ২৯ লাখ টাকা। নিজের ও স্ত্রীর মিলিয়ে ব্যাংকে জমা আছে সাড়ে ১৬ লাখ টাকা। একটি ডায়গনস্টিক সেন্টার, একটি বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজসহ তিনটি প্রতিষ্ঠানে শেয়ার বাবদ তার প্রায় ১ কোটি টাকার অস্থাবর সম্পত্তি রয়েছে। এছাড়াও তার ৩৮ লাখ টাকার একটি গাড়ি, ৬০ তোলা স্বর্ণ, দামি আসবাবপত্র ও দামি ইলেষ্ট্রনিক সামগ্রীও আছে। স্থাবর সস্পত্তির মধ্যে সামান্য কৃষি জমি, পাঁচতলা ভবনের ফরায়েজের কিছু অংশ থাকার কথা হলফনামায় উল্লেখ করেন। তার নামে ১৪ লাখ টাকা ব্যাংক ঋণ রয়েছে। শিক্ষাগত যোগ্যতা বিএসসি।

মুফতী সৈয়দ মো. ফয়জুল করিম: ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মনোনীত প্রার্থীর পেশা শিক্ষকতা। পাশাপাশি রয়েছে এপার্টমেন্ট ভাড়া ও ব্যবসা। এই তিনটি খাত থেকে তার বার্ষিক আয় প্রায় ১৫ লাখ টাকা। তার বিরুদ্ধে পাঁচটি ফৌজদারি মামলা হলেও তা নিস্পত্তি হয়েছে। ব্যাংকে এক লাখ টাকা জমা থাকলেও নগদ রয়েছে ৪৩ লাখ টাকা। সব প্রার্থীর চেয়ে জমিজমা বেশি রয়েছে এই প্রার্থীর। নিজের নামে জমি রয়েছে প্রায় ১৪ একর। এরমধ্যে ৮ একরেরও বেশি কৃষিজমি এবং বাকিটা অকৃষিজমি। পাকা ভবন রয়েছে একটি ও এপার্টমেন্ট রয়েছে দুইটি।

কামরুল আহসান রুপন: প্রার্থীদের মধ্যে শিক্ষাগত যোগ্যতায় এগিয়ে রয়েছেন এমএসএস করা এই স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী। তার আয়ের উৎস মৎস্য, পশু ও কৃষি খামার। বছরে তার আয় ৪ লাখের কিছু বেশি থাকলেও প্রায় ৩০ লাখ টাকার গাড়ি রয়েছে। নগদ আছে ৪৩ লাখ টাকা। একটি কোম্পানিতে তিনি এক কোটি টাকার শেয়ারের মালিক রয়েছেন। সবমিলিয়ে তার অস্থাবর সম্পত্তি রয়েছে প্রায় ২ কোটি টাকার। এছাড়া ব্যবসায় বিনিয়োগ রয়েছে ৭ লাখ টাকা। বাবাকে (প্রয়াত) ঋণ প্রদান হিসেবে দেখিয়েছেন ৫০ লাখ টাকা। এছাড়া মা ও বোনের কাছ থেকে তিনি ২৫ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছেন। স্থাবর সম্পত্তি রয়েছে কিছু কৃষি ও অকৃষি জমি। কোনো মামলা নেই রুপনের বিরুদ্ধে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অপর স্বতন্ত্র প্রার্থী আলী হোসেন হাওলাদার এবং জাকের পার্টি মনোনীত মিজানুর রহমানের রয়েছে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। ব্যবসা ও ভাড়া তাদের আয়ের উৎস। আলী হোসেনের নগদ টাকার পরিমাণ ৫০ হাজার টাকা। মিজানুর রহমান নগদ টাকার পরিমাণ শূন্য উল্লেখ করা হয়েছে।

উন্মুক্ত হবে সিটি করপোরেশন: সিটি করপোরেশন নির্বাচনে নৌকা মার্কার মেয়র প্রার্থী বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাত বলেছেন, আগামী ১২ জুনের নির্বাচনে আমাকে মেয়র নির্বাচিত করা হলে প্রথমেই আমি সিটি থেকে সবধরনের অনিয়ম দূর করবো। নাগরিকদের জন্য সিটি করপোরেশনকে উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে। খোকন সেরনিয়াবাত আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তরিকতায় সারাদেশে উন্নয়নের কর্মযজ্ঞ ধারাবাহিকভাবে যেভাবে চলেছে, সেভাবে বরিশাল সিটিতে তেমন কোনো উন্নয়ন হয়নি। তাই আসন্ন সিটি নির্বাচনে নৌকা মার্কাকে বিজয়ী করা হলে, আমি নিশ্চিতভাবে বলতে পারি বরিশালে সু-পরিকল্পিতভাবে নগরায়ন করা হবে। আওয়ামী মৎস্যজীবী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে জেলা ও মহানগর কমিটির আয়োজনে অনুষ্ঠিত সভায় নৌকার প্রার্থী বলেন, নাগরিকদের চলমান সকল সমস্যার সমাধান করে নতুন বরিশাল গড়ার সংকল্প আমার আছে। তাই আমাকে মেয়র হিসেবে নির্বাচিত করা হলে এখানকার সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে নগরবাসীর মতামতের ভিত্তিত্বে আমি আগামীর নতুন বরিশাল গড়তে চাই। আওয়ামী মৎস্যজীবী লীগের মহানগর শাখার সভাপতি খান মো. হাবিবের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট বলরাম পোদ্দার, মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি অ্যাডভোকেট আফজালুল করীম, জেলা পরিষদের সাবেক প্রশাসক খান আলতাফ হোসেন ভুলু প্রমুখ।

রিটার্নিং কর্মকর্তাকে অপসারণের দাবি: সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু করতে হলে রিটার্নিং কর্মকর্তা হুমায়ুন কবিরকে আপসারণের বিকল্প নেই বলে মনে করেন জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার ইকবাল হোসেন তাপস। তিনি বলেন, রিটার্নিং কর্মকর্তা একচোখা নীতি অনুসরণ করছেন। তার কাছে একজন প্রার্থীর কোনো ভুল চোখে পরেনা। অথচ আমি কোথাও কথা বললেই ডেকে নিয়ে সর্তক করা হচ্ছে। নগরীর ১২ নম্বর ওয়ার্ডের ভোটারদের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময়কালে জাপা প্রার্থী গণমাধ্যমের কাছে এসব কথা বলেন। তাপস বলেন, রিটার্নিং কর্মকর্তা আমাদের কোনো কথাই শুনতে চান না। আমাদের অভিযোগ আমলে নেননা। তাই বরিশালে নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করতে হলে রিটার্নিং কর্মকর্তাকে অপসারণের বিকল্প নেই।

আরএস


 

Link copied!