Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪,

বীর মুক্তিযোদ্ধা আতিকুল্লাহ চৌধুরী হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী তানু গ্রেপ্তার

কেরানীগঞ্জ প্রতিনিধি

কেরানীগঞ্জ প্রতিনিধি

মে ২৮, ২০২৩, ০৯:০৮ পিএম


বীর মুক্তিযোদ্ধা আতিকুল্লাহ চৌধুরী হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী তানু গ্রেপ্তার

কেরানীগঞ্জের বহুল আলোচিত বীর মুক্তিযোদ্ধা আতিকুল্লাহ চেয়ারম্যান হত্যা মামলার মূল পরিকল্পনাকারী মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামী তাজুল ইসলাম তানু(৩৫)কে গ্রেফতার করেছে র‍্যাব। রবিবার (২৮ মে) বিকেলে গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করেন র‍্যাব-১০ এর অধিনায়ক মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন।

তিনি জানান, রবিবার (২৮ মে) র‌্যাব-১০ এর একটি আভিযানিক দল গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে রাজধানী ঢাকার বংশালে অভিযান চালিয়ে হত্যার  মূল পরিকল্পনাকারী দীর্ঘদিন পলাতক মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত আসামী তাজুল ইসলাম তানু(৩৫)’কে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত আসামী  ঘটনার সাথে তার সরাসরি সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেছে।

তনু জানিয়েছে সে ঢাকা জেলার কেরানীগঞ্জ উপজেলার কোন্ডা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও কোন্ডা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের তৎকালীন আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা আতিক উল্লাহ চৌধুরী সাথে নির্বাচনের প্রার্থিতা ও আওয়ামী লীগের সভাপতির পদ নিয়ে মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত অপর আসামী গুলজারের সাথে বিরোধ চলছিল। উক্ত শত্রুতার জেরে গুলজার বেশকয়েকবার আতিক উল্লাহ চৌধুরী’কে বিভিন্ন প্রকার হুমকি প্রদান করেছিল। ভিকটিম আতিক উল্লাহ চৌধুরী তার কথায় কোন কর্ণপাত না করলে গুলজার ও তাজুল ইসলাম তানু মিলে আতিক উল্লাহ চৌধুরীর হত্যার পরিকল্পনা করে।

তিনি আরও বলেন, তানুর পরিকল্পনা অনুযায়ী গুলজার আতিক উল্লাহ চৌধুরীর গতিবিধি লক্ষ রাখার জন্য সম্পা নামে এক নারীকে নিয়োগ করে। পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী গত ১১ ডিসেম্বর ২০১৩ খ্রিঃ রাতে আতিক উল্লাহ চৌধুরী’কে তার সাথে দেখা করা জন্য কোন্ডা হাসপালের গেটে আসার জন্য বলে। আতিক উল্লাহ চৌধুরী সম্পার কথা মত রিক্সাযোগে হাসপাতালে গেটে আসা মাত্র পূর্ব থেকে ওঁৎ পেতে থাকা গুলজার ও তানু আতিক উল্লাহ চৌধুরী’কে রিক্সা থেকে নামিয়ে রিক্সা বিদায় করে দেয়। গুলজার ও তানু তাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী কৌশলে আতিক উল্লাহ চৌধুরী’কে হাসপাতালে দক্ষিন সীমানা বরাবর রাস্তায় নিয়ে তানুর নেতৃত্তাধীন ভাড়াটে খুনি মোঃ জাহাঙ্গীর ওরফে জাহাঙ্গীর খাঁ, আহসানুল কবির ইমন, রফিকুল ইসলাম আমিন ওরফে টুন্ডা আমিন, শিহাব আহমেদ শিবু, মোঃ আসিফ’দের হাতে তুলে দেয়। অতঃপর তাজুল ইসলাম তানুসহ ভাড়াটে খুনিরা আতিক উল্লাহ চৌধুরী মুখ চেঁপে ধরে কোলে করে হাসপাতালের পশ্চিম পাশের সীমানা ঘেঁষে নিচু জমিতে নিয়ে যায়। সেখানে নিয়ে ভিকটিমকে তার পরিহিত পাঞ্জাবী ছিড়ে মুখ বেধে অন্যান্য আসামীদের সহায়তায় তানু মুখ চেপে ধরে গলা টিপে নির্মমভাবে হত্যা করে। পরবর্তীতে মৃতদেহের পরিচয় গোপন করা জন্য তানুর নির্দেশে আসামীদের ব্যবহৃত মোটরসাইকেলের পেট্রোল মৃত আতিক উল্লাহ চৌধুরী এর দেহে ছিটিয়ে দিয়ে মৃতদেহটিকে পুড়িয়ে ফেলে পালিয়ে যায় বলে জানা যায়।

উল্লেখ, ১০ ডিসেম্বর ২০১৩ সালে বিকেলে কোন্ডা ইউনিয়ন পরিষদের তৎকালীন চেয়ারম্যান ও কোন্ডা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা আতিক উল্লাহ চৌধুরী তার ইউনিয়ন পরিশদের কাজের জন্য দক্ষিন কেরাণীগঞ্জ থানাধীন হাসনাবাদ এলাকার উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের হয়। ঐদিন রাতে ভিকটিম আতিক উল্লাহ চৌধুরী বাসায় ফিরে না আসলে তার পরিবারের লোকজন তার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে মোবাইল ফোনটি বন্ধ পায়। এতে পরের দিন অর্থাৎ  ১১ ডিসেম্বর আতিক উল্লাহ চৌধুরীর ছেলে ফারুক চৌধুরী দক্ষিন কেরাণীগঞ্জ থানায় একটি জিডি করেন।

পরে সে সংবাদ পায় কোন্ডা ১০ম শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের দেয়াল পাশে পরে পড়ে আছে একটি আগুনে পোড়া বিকৃত লাশ!  পুলিশের সহায়তায় লাশ উলট পালট করে লাশে সাথে থাকা একটি এটিএম কার্ড ও ইউনিয়ন পরিষদের কাগজ পত্র দেখে আতিক উল্লাহ চৌধুরী ছেলে তার বাবার লাশ বলে সনাক্ত করে। পরবর্তীতে আতিক উল্লাহ চৌধুরীর ছেলে বাদী অজ্ঞাত ব্যক্তিদের নামে ঢাকা জেলার দক্ষিন কেরানীগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা দয়ের করেন।

বীর মুক্তিযোদ্ধা আতিক উল্লাহ চৌধুরী হত্যার সংবাদটি বিভিন্ন ইলেকট্রনিক মিডিয়া ও প্রিন্ট মিডিয়ায় প্রকাশিত হবার পর ঘটনাটি কেরাণীগঞ্জসহ দেশব্যপী ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে।
উক্ত ঘটনায় দায়েরকৃত মামলা তদন্ত শেষে পুলিশ গুলজার ও তানুসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগপত্র দাখিল করে। উক্ত অভিযোগের ভিত্তিতে বিজ্ঞ আদালত সাক্ষীদের সাক্ষ্য প্রমানে আসামীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমানিত হওয়ায় গত ২ ডিসেম্বর ২০২০ খ্রিঃ আসামী তাজুল ইসলাম তানু, গুলজার, মোঃ জাহাঙ্গীর ওরফে জাহাঙ্গীর খাঁ,  আহসানুল কবির ইমন,  রফিকুল ইসলাম আমিন ওরফে টুন্ডা আমিন,
শিহাব আহমেদ শিবু,  মোঃ আসিফকে মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত করেন। আসামী তাজুল ইসলাম তানু, রফিকুল ইসলাম আমিন ওরফে টুন্ডা আমিন, শিহাব আহমেদ শিবু, মোঃ আসিফ পলাতক থাকায় বিজ্ঞ আদালত তাদের বিরুদ্ধে সাজা পরোয়ানা ইস্যু করেন। ইতিপূর্বে অন্যান্য আসামীরা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হতে গ্রেফতার হলেও উক্ত মামলার মূল পরিকল্পনাকারী তাজুল ইসলাম তানু আত্মগোপন করে ছিল।

গ্রেপ্তারকৃত আসামীর বিরুদ্ধে ১টি অস্ত্র মামলা রয়েছে বলে জানা যায় র‍্যাব গ্রেপ্তারকৃত আসামীকে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।

আরএস

Link copied!