গোসাইরহাট (শরীয়তপুর) প্রতিনিধি
আগস্ট ১, ২০২৩, ০৭:৫৪ পিএম
গোসাইরহাট (শরীয়তপুর) প্রতিনিধি
আগস্ট ১, ২০২৩, ০৭:৫৪ পিএম
শরীয়তপুর সদর উপজেলার শিশু কানন কিন্ডারগার্টেন স্কুলের পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থী হৃদয় খান নিবিড়কে অপহরণের পর সে চিৎকার করলে পেছন থেকে তাকে আঘাত ও শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়। হত্যা শেষে নিবিড়ের মায়ের কাছে ৫০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবী করেছিল অপহরণকারীরা। এঘটনায় চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
হৃদয় খান নিবিড় শরীয়তপুর সদর উপজেলার ডোমসার ইউনিয়নের খিলগাঁও গ্রামের মনির হোসেন খানের ছেলে। সে শিশু কানন কিন্ডারগার্টেন স্কুলে পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থী ছিল।
মঙ্গলবার (১ আগস্ট) দুপুর ১২ টায় পুলিশ সুপার মো. মাহবুবুল আলম প্রেস ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানিয়েছেন।
পুলিশ সুপার বলেন, অপহৃত শিশুর দাদা মমিন আলী খান গতকাল থানায় অভিযোগ করেন অজ্ঞাত ব্যক্তিরা তার নাতি নিবিড়কে অপহরণ করে মুক্তিপণ দাবী করেছে। অভিযোগের ভিত্তিতে তথ্য প্রযুক্তি ও সোর্সের সহায়তায় অপহরণের ১২ ঘন্টার মধ্যে অপহরণকারী চক্রের ৪ সদস্য ও শিশু নিবিড়ের মরদেহ উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে পুলিশ। মোবাইল ফোনের মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে প্রথমে অপহরণকারী সদস্য সিয়ামকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে অপহরণের কথা স্বীকার করেন। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে অপহরণকারী চক্রের অন্যান্য সদস্যদের আটক করতে সক্ষম হই।
তিনি আরও বলেন, গতকাল সোমবার ৪ টায় অপহৃত নিবিড়কে তার বাড়ির পাশ্ববর্তী এলাকা থেকে কৌশলে খিলগাঁও এলাকার মেসার্স খান ব্রিকস সংলগ্ন আলী হোসেন খার বাড়ির পেছনের বাগানে নিয়ে যায়। কীর্তিনাশা নদীর পাড় সংলগ্ন ওই বাগান থেকে চলে আসার জন্য নিবিড় চিৎকার করলে সিয়াম, শাকিল ও তুহিন নিবিড়কে হাত পা চেপে ধরে মাথায় আঘাত ও শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। মরদেহ মাটি চাপা দিয়ে গুম করে পালিয়ে গিয়ে সন্ধ্যা ৭ টা ৮ মিনিটে নিবিড়ের মা নিপা আক্তারের মোবাইল ফোনে কল দিয়ে জানায় তারা নিবিড়কে অপহরণ করেছে। তাকে তিন দিনের সময় দিয়ে বলা হয় ৫০ লাখ টাকা দিলে নিবিড়কে ছেড়ে দিবে তারা। সিয়ামের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী শিশু হৃদয় খান নিবিড়ের মরদেহ আজ মঙ্গলবার সকাল ৬ টায় কীর্তিনাশা নদীর পাড় সংলগ্ন ওই বাগান থেকে মাটিচাপা খুঁড়ে উদ্ধার করেছে পুলিশ।
মাহবুবুল আলম বলেন, নিবিড়কে অপহরণ ও হত্যার ঘটনায় পালং মডেল থানায় নিয়মিত মামলা দায়ের করা হয়েছে। পুলিশ অভিযান পরিচালনা করে এখন পর্যন্ত চারজনকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছে। গ্রপ্তারকৃতরা হলেন, জলিল গাজীর ছেলে শাকিল গাজী (১৮), আমির হোসেন গাজীর ছেলে তুহিন গাজী(১৫)। অস্কার আলী চৌকিদারের ছেলে শাওন (২০)। তারা শরীয়তপুর সদর উপজেলার ডোমসার ইউনিয়নের খিলগাঁও এলাকার বাসিন্দা। এছাড়াও ছব্বুর ওরফে সাইফুল সরদারের ছেলে সিয়াম (২০) পাবনার বাসিন্দা। বর্তমানে সিয়াম অপহৃত শিশু হৃদয় খান নিবিড়ের বাড়ির ভাড়াটিয়া।
নিহত শিশু নিবিড়ের মামা ইকবাল খান বলেন, সন্ধ্যার সময় আমার বোনের মোবাইলে অজ্ঞাত নাম্বার থেকে কল দিয়ে বলা হয় নিবিড়কে পেতে হলে মুক্তিপণ দিতে হবে। এরপর আমরা বিষয়টি পুলিশকে জানালে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় অপহরণকারীদের চিহ্নিত করে মেসার্স খান ব্রিকসের পেছনের কীর্তিনাশা নদীর পাড় থেকে নিবিড়ের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। যারা আমার ভাগিনাকে মেরেছে তাদের ফাঁসি চাই।
শিশু কানন কিন্ডারগার্টেন স্কুলের অধ্যক্ষ বাদল কৃষ্ণ পাল বলেন, গতকাল নিবিড়ের মা এসে তাকে নিয়ে গেছে। সন্ধ্যায় আমরা তার নিখোঁজ সংবাদ জানার পর তার বাড়িতে গিয়েছিলাম। সকালে জানতে পারলাম তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। একজন শিক্ষক হিসেবে আমি বলব কোনো স্কুলের বেঞ্চ যেন খালি না হয়, মায়ের বুক যেন খালি না হয়। এই হত্যাকাণ্ডের দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি চাই আমি।
আরএস