Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ০৮ নভেম্বর, ২০২৪,

বরিশালে ভুল চিকিৎসায় শিশু মৃত্যুর অভিযোগ

বরিশাল ব্যুরো

বরিশাল ব্যুরো

আগস্ট ২, ২০২৩, ০২:০১ পিএম


বরিশালে ভুল চিকিৎসায় শিশু মৃত্যুর অভিযোগ

বরিশাল নগরীর বেসরকারি একটি হাসপাতালে চিকিৎসকের ভুল চিকিৎসায় ছয়মাস বয়সী এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। পায়ুপথে সুচ বের করতে অস্ত্রোপচার করার সময় শিশুটির মৃত্যু হয়। 

মঙ্গলবার (১ আগস্ট) বিকেলে নগরীর বান্দরোডে রাহাত আনোয়ার হাসপাতালে এ ঘটনা ঘটে। মারা যাওয়া শিশুটির নাম তানজিম। সে পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার ডাউকা গ্রামের ফিরোজ খানের ছেলে।

শিশুর মামা রাকিব অভিযোগ করে জানান, শিশু তানজিমের পায়ুপথে ছোট একটি সুচ ঢুকে যায়। গলাচিপায় এক্সরে করে বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে তারা শিশুটিকে পটুয়াখালীতে নিয়ে আসেন। সেখানকার চিকিৎসক বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের চিকিৎসক তৌহিদুল ইসলামের কাছে গিয়ে অস্ত্রোপচারের পরামর্শ দেন। গলাচিপা থেকে সোমবার (৩১ জুলাই) তারা শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসেন। সেখানে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেশি হওয়ায় চিকিৎসক তৌহিদুল ইসলামের পরামর্শে মঙ্গলবার সকালে রাহাত আনোয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয় শিশু তানজিমকে।

রাকিব বলেন, ‘অস্ত্রোপচার কক্ষে নেওয়ার আগেও ভাগনে খেলা করেছে। অস্ত্রোপচারের সময় আমি ওটিতে ছিলাম। অস্ত্রোপচারর জন্য তানজিমের শরীরে ৭ থেকে ৮ বার সুচ ঢুকানো (ইনজেকশন) হয়। কোমরে ইনজেকশন দেওয়া হয়। পরে শিশু তানজিম অজ্ঞান হয়ে পড়ে।’

শিশুটির মামা রাকিবের ভাষ্য, ‘ডা. তৌহিদুল ইসলাম মেশিনে অস্ত্রোপচার করার কথা বলে হাতে করেছেন। অজ্ঞান শিশুকে কোনো অক্সিজন দেননি। কাটা স্থানে সেলাইও করেননি। তাদের বারবার অনুরোধ করেছি। কিন্তু তারা কয়েকজন ওটি রুমে হাসিঠাট্টায় ব্যস্ত ছিলেন। পরে নিচে আমার পরিচিত ফার্মেসির একজনকে নিয়ে ফিরে গেলে তখন আর প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। কিছুক্ষণ পরেই আমি ভেতরে বোনের চিৎকার শুনতে পাই। ওরা আমার ভাগনেকে মেরে ফেলেছে। এ ঘটনায় আমরা অভিযোগ দেবো।’

শিশুটির বাবা ফিরোজ খান বলেন, ‘ডা. তৌহিদুল ইসলাম নিজে বলেছেন শিশুর পায়ুপথে যে সুচ ঢুকেছে তা মেশিনের মাধ্যমে অস্ত্রোপচার করে বের করা হবে। এটা কোনো বিষয়ই না। ২০ হাজার টাকা জমা দেন।’ এ কথা বলেই কেঁদে ফেলেন তিনি।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, শিশু তানজিমের অস্ত্রোপচার করছেন ডা. তৌহিদুল ইসলাম। তাকে অজ্ঞান করেছে ডা. মনিরুল ইসলাম। বিষয়টি ‘অনাকাঙ্ক্ষিত ও হৃদয়বিদারক’ মন্তব্য করে চিকিৎসক মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘ছয়মাস বয়সী একটি শিশুকে অজ্ঞান করা ঝুঁকিপূর্ণ। কিন্তু শিশুটির জরুরি অস্ত্রোপচারও প্রয়োজন ছিল। তাই ঝুঁকি নিতে হয়েছে। এজন্য আমার ১৬ বছরের চিকিৎসা পেশায় সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। কিন্তু অস্ত্রোপচারের শেষ মুহূর্তে এসে শিশুর হৃদস্পদন বন্ধ হয়ে যায়। আমরা হৃদস্পদন ফিরিয়ে আনার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। আমাদের চেষ্টার কোনো ঘাটতি ছিল না।’

অভিযুক্ত চিকিৎসক তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘অস্ত্রোপচার সফল হয়েছে। অ্যানেস্থেসিয়া চিকিৎসকও বেশ চেষ্টা করেছেন। কিন্তু শিশুটিকে বাঁচানো গেলো না। রোগীর মামা অপারেশন থিয়েটারে ছিলেন, তিনি দেখেছেন। এখন যদি আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেন তাহলে আমার কী বলার থাকবে?’

এ বিষয়ে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার ফজলুল হক বলেন, ৯৯৯ নম্বরে ফোন পেয়ে আমরা হাসপাতালে ছুটে যাই। শিশুটির বাবা-মায়ের সঙ্গে কথা হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এর আগে গত ২২ জুলাই ছয় বছর বয়সী শিশুর গলার সমস্যায় অপারেশন থিয়েটারে নেওয়া হলেও তার তলপেটে অপারেশন করার অভিযোগ ওঠে একই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। পাশাপাশি থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন শিশুর স্বজনরা।

এআরএস

Link copied!