মহাদেবপুর (নওগাঁ) প্রতিনিধি
আগস্ট ২৮, ২০২৩, ০৭:৫৮ পিএম
মহাদেবপুর (নওগাঁ) প্রতিনিধি
আগস্ট ২৮, ২০২৩, ০৭:৫৮ পিএম
নওগাঁর ১১ উপজেলায় পাট চাষে বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। গত পাঁচ বছরে জেলায় পাট চাষ প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এবার জেলার সাপাহার, পোরশা ও নিয়ামতপুর উপজেলায় কোন পাট চাষ হয়নি।
একসময় পাটকে বলা হতো সোনালী আঁশ। পাট রপ্তানি করে অর্জিত হতো বৈদেশিক মুদ্রা। দেশের বাজারে চাহিদা না থাকায় এখনও নওগাঁর পাট যাচ্ছে বিদেশে। তবে পাট চাষে খরচ বেড়ে যাওয়া, সময়মত পাট জাগ দেয়ার জন্য পানি না থাকা, শ্রমিক সংকট, মজুরি বেশি হওয়া, সার কীটনাশকের দাম বৃদ্ধি প্রভৃতি কারণে চাষিরা পাট চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন।
মহাদেবপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ হোসাইন মোহাম্মদ এরশাদ জানান, গতবছর এই উপজেলায় ২২০ হেক্টর জমিতে পাট চাষ করা হয়েছিল। এবছর হয়েছে ১৯০ হেক্টরে। এ থেকে এক হাজার ১৪০ বেল পাট উৎপাদিত হয়েছে।
চাষিরা বলছেন, বাজারে এবার পাটের দাম নেই। দু’বছর আগে প্রতিমণ পাট বিক্রি হয়েছে প্রায় পাঁচ হাজার টাকায়। গতবছর দাম ছিল তিন হাজার ২০০। অথচ এবার প্রতিমণ পাট বিক্রি হচ্ছে মাত্র দুই হাজার টাকায়। এবার পাট চাষে খরচও বেড়েছে। প্রতিবিঘা জমিতে পাট চাষে প্রায় ১৪ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এরমধ্যে রয়েছে জমির আইল ঠিক করা ৪০০ টাকা, পানি সেচ এক হাজার টাকা, তিনটি হালচাষ এক হাজার টাকা, সার এক হাজার ২০০ টাকা, দেড় কেজি বীজ ৪০০ টাকা, কীটনাশক ও শ্রমিক খরচ ৫০০ টাকা, পোকা দমনে কীটনাশক খরচ ৭০০ টাকা, ঘাস নিড়ানিতে ছয়জন শ্রমিকের খরচ এক হাজার ৮০০ টাকা। এরপর পাট কাটতে ছয়জন শ্রমিকের খরচ তিন হাজা টাকা, পরিবহণ খরচ এক হাজার ৫০০ টাকা এবং জাগ দেওয়া খরচ এক হাজার ৫০০ টাকা। সবশেষে সাতজন শ্রমিকের পাট পরিস্কারের খরচ তিন হাজার ৫০০ টাকা। এবার বিঘাপ্রতি ফলন হয়েছে সাত থেকে আট মণ। সেই হিসেবে এক বিঘা জমির পাট বিক্রি হয়েছে সর্বোচ্চ ১৬ হাজার টাকায়। এ থেকে এবার চাষিরা কোন লাভ করতে পারেননি। যেসব উঁচু জমি অনাবাদি থাকে চাষিরা শুধুমাত্র সেসব জমিতেই এবার পাটের আবাদ করেছেন।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, রাস্তার পাশের নোয়ানজলি আর মজা পুকুরে স্বল্প পানিতে পাট জাগ দেয়া হয়েছে। ফলে পাট পচে সেসব পানির দুর্গন্ধ আশেপাশে ছড়িয়ে পড়েছে। উপজেলার খাজুর ইউনিয়নের কুঞ্জবন-ছাতড়া আঞ্চলিক সড়কের পাশে একটি ছোট্ট কুড়িতে হাটু পানিতে জাগ দেয়া পাট থেকে আঁশ ছাড়াচ্ছিলেন ওইগ্রামের আফজাল হোসেন অফেল। তিনি জানালেন এবার তিনি পাঁচ কাঠা জমিতে পাট লাগিয়েছিলেন। নিজে শ্রম দিয়েছেন বলে খরচ একটু কম হয়েছে। কিন্তু অল্প পানিতে জাগ দেয়ায় পাটের রঙ ভালো হয়নি। এ থেকে দুই মণের কিছু কম পাট হবে। দুই হাজার টাকা মণ দরে বিক্রি করলে তার তেমন কোন লাভ থাকবেনা।
মহাদেবপুরে পাট কেনার একমাত্র ব্যবসায়ী উপজেলা কমপ্লেক্সের পশ্চিম পাশের সিহাব ট্রোডার্সের মালিক আলতাফ হোসেন জানালেন, এবার তিনি প্রতিমণ পাট দুই হাজার টাকা থেকে দুই হাজার ২০০ টাকায় কিনেছেন। তার কাছ থেকে পাট পাইকারি কিনে ট্রাক্টরে বোঝাই করছিলেন জয়পুরহাট জেলার আক্কেলপুরের ব্যবসায়ী রোস্তম আলী। তিনি জানালেন, প্রতিমণ দুই হাজার ২৫০ টাকা দরে পাট কিনেছেন। এগুলো খুলনার ঢাকা ট্রেডিং নামের আড়তে বিক্রি করবেন। সেখান থেকে এসব পাট রপ্তানি করা হবে ভারত ও নেপালে।
স্থানীয়রা জানান, পাট চাষিদের প্রণোদনা দেয়া, সরকারি উদ্যোগে পাট ক্রয় কেন্দ্র খুলে প্রান্তিক চাষিদের কাছ থেকে নায্যমূল্যে পাট কেনা ও বিপননের ব্যবস্থা নিলে আবার পাট চাষিদের মুখে হাসি ফুটবে।
এআরএস