বরিশাল ব্যুরো
সেপ্টেম্বর ১১, ২০২৩, ০৬:৫৪ পিএম
বরিশাল ব্যুরো
সেপ্টেম্বর ১১, ২০২৩, ০৬:৫৪ পিএম
বরিশাল অঞ্চলে ডেঙ্গু পরিস্থিতি ক্রমশ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে সরকারি হাসপাতালে ভর্তিকৃত প্রায় ১৭ হাজার রোগীর মধ্যে চলতি মাসের প্রথম ১০ দিনেই প্রায় সাড়ে ৩ হাজার নতুন ভর্তি হয়েছেন।
গত ১০ দিনে সরকারি হাসপাতালগুলোতে ১৬ জন সহ গত কয়েক মাসে বরিশাল অঞ্চলে ৫৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। গত মাসেই প্রায় সাড়ে ৮ হাজার ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন। আর এ পর্যন্ত ডেঙ্গুতে যে ৫৬ জনের মৃত্যু হয়েছে তার ২৯ জনই মারা গেছেন গত মাসে।
অপরদিকে বরিশাল শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৩৩ জন ছাড়াও জেলার অন্য হাসপাতালে আরো দুজনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া পটুয়াখালীতে ৪ জন, ভোলাতে ৭ জন, পিরোজপুর ও বরগুনাতে ৫ জন করে ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যু হয়েছে।
এবার বরিশালে ডেঙ্গুতে মৃত ৫৬ জনের মধ্যে ৩৫ জনই নারী। শহরের মত গ্রামাঞ্চলেও এবার বিপুল সংখ্যক মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছেন। হাসপাতালে ভর্তিকৃত ও মৃতদের একটি বড় অংশই পল্লী এলাকার বলে জানা গেছে। আক্রান্ত ও মৃত্যুর তালিকায় বয়স্কদের সংখ্যাই বেশী।
গত আগস্টের পুরো মাসজুড়ে বরিশাল বিভাগের সর্বত্রই ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে যাওয়ায় সরকাররি হাসপাতালগুলোর মেঝেতেও অনেক রোগীর ঠাঁই মেলেনি। চলতি মাসে পরিস্থিতির আরো অবনতির আশঙ্কা করছেন স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা।
বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. শ্যামল কৃষ্ণ মন্ডল ডেঙ্গু প্রতিরোধে সামাজিক সচেতনতার সাথে সিটি করপোরেশন ও পৌরসভা সহ সব স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরো অধিকতর সচেতন হবার অনুরোধ জানিয়েছেন। সর্বাধিক সংখ্যক মানুষ মশাবাহী ডেঙ্গুতে আক্রান্তের পরেও বরিশাল মহানগরী সহ সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলে তেমন কোন প্রতিকার লক্ষণীয় নয়। প্রায় ৫৮ বর্গ কিলোমিটারের বরিশাল মহানগরীতে মশা নিয়ন্ত্রনে সিটি করপোরেশনের কার্যক্রম নগরবাসীকে আস্বস্থ করতে পারছেন না। সরকারি হাসপাতালে গত প্রায় ৪ মাসে ১৭ হাজার ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হলেও বাস্তবে এর তিন গুনেরও বেশী মানুষ মশাবাহিত এ রোগে আক্রান্ত হয়েছে। মৃতের সংখ্যাও সরকারি হিসেবের চেয়ে আরো বেশী।
তাদের মতে ডেঙ্গু আক্রান্তের প্রায় সবাই প্রাথমিকভাবে স্থানীয় চিকিৎসকের স্মরনাপন্ন হয়ে চিকিৎসা শুরু করছেন। এদের মধ্যে যাদের অবস্থা সংকটাপন্ন তারাই শুধু সরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়ে থাকেন। চিকিৎসকদের মতে, সময়মত চিকিৎসায় ৯৯ভাগ মানুষই সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠছেন।
তবে এক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা গ্রহণের বিকল্প নেই। বিভাগীয় স্বাস্থ্য দপ্তরের মতে, ডায়রিয়া ও করোনার মত ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যায়ও বরিশাল শীর্ষে। জেলার ১০টি উপজেলায় রোববার পর্যন্ত সাড়ে ৬ হাজার ডেঙ্গু রোগী সরকারী হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হয়েছেন। যারমধ্যে শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেই ৪ হাজারের বেশী রোগী ভর্তি হলেও এ হাসপাতালে মৃত্যু হয়েছে ৩৩ জনের। পটুয়াখালীতে প্রায় ৪ হাজার নারী-পুরুষ ও শিশু ডেঙ্গু রোগী সরকারী হাসপাতালে ভর্তি হলেও মারা গেছেন ৪ জন।
ভোলাতে ভর্তিকৃত রোগীর সংখ্যা প্রায় ১৭শ হলেও মারা গেছেন ৭ জন। পিরোজপুরে ভর্তিকৃত প্রায় ৩ হাজার রোগীর মধ্যে ৫ জন মারা গেছেন। বরগুনাতেও ভর্তিকৃত প্রায় দুই হাজার রোগীর মধ্যে ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে।
ঝালাকাঠী জেলায় প্রায় ৪ শতাধিক রোগী হাসপাতালে ভর্তি হলেও কোন মৃত্যু নেই। দক্ষিণাঞ্চলের সবচেয়ে ছোট এ জেলাটির বেশীরভাগ ডেঙ্গু রোগীই বরিশাল শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তির জন্য আসছেন বলে দায়িত্বশীল সূত্রে বলা হয়েছে।
এদিকে রোববার দুপুর পর্যন্ত বরিশাল বিভাগের ৬টি জেলার দুটি মেডিকেল কলেজ হাপাতাল ছাড়াও জেলা সদরের জেনারেল হাসপাতাল ও ৪২টি উপজেলা হাসপাতালে ১ হাজার ১০১ জন ডেঙ্গুু রোগী চিকিৎসাধীন ছিলেন। এরমধ্যে বরিশাল শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপতালেই ২৪৭ জন চিকিৎসাধীন ছিলেন বলে জানা গেছে।
রোববার সকালের পূর্ববর্তী ২৪ ঘন্টায় বরিশাল বিভাগের সরকারি হাসপাতালগুলোতে আরো ৩৭৪ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত ভর্তি হয়েছেন। আর এ পর্যন্ত হাসপাতালগুলোতে ভর্তিকৃত প্রায় ১৭ হাজার ডেঙ্গু রোগীর মধ্যে ১৫ হাজার ৮১৪ জনই সুস্থ হয়ে ঘরে ফিরেছেন বলে বিভাগীয় স্বাস্থ্য দপ্তর জানিয়েছে।
এআরএস