লিটন আহমেদ, তাড়াশ (সিরাজগঞ্জ)
সেপ্টেম্বর ১৪, ২০২৩, ০৩:৪১ পিএম
লিটন আহমেদ, তাড়াশ (সিরাজগঞ্জ)
সেপ্টেম্বর ১৪, ২০২৩, ০৩:৪১ পিএম
সিরাজগঞ্জের তাড়াশে বর্ষা মৌসুমে চলনবিল অধ্যুষিত ৬টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চারিদিকে থৈ থৈ পানি। তবুও চলছে পাঠদান। তাই কোমলমতি প্রায় পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থীদের স্কুলে যাওয়া ও আসার জন্য নৌকা একমাত্র ভরসা।
স্থানীয় ও তাড়াশ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলার মাগুড়া বিনোদ ইউনিয়নের হামকুড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, শেখ পাড়া বালিকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সগুনা ইউনিয়নের সান্দুরিয়া, প্রতিরাম চরকুশাবাড়ি ও কাটাবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রায় পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থীদের নৌকায় পারাপার করতে হয়। আর এজন্য প্রত্যেক শিক্ষার্থীদের প্রতিদিন দিতে হতো ১০ টাকা।
স্থানীয় কয়েকজন অভিভাবক জানান, উপজেলার মাগুড়াবিনোদ ও সগুনা ইউনিয়নের ৬টি বিদ্যালয়ের শিশুদের যাতায়াতের এমন করুণ অবস্থা কয়েক যুগ ধরেই। ঝড় বৃষ্টি উপক্ষো করে প্রাকৃতিক দুর্যোগ মাথায় নিয়েই কোমলমতি শিশুরা নিয়মিত বিদ্যালয়ে যাতায়াত করে। তবে সরকারি বা বেসরকারি উদ্যোগে প্রতিটি বিদ্যালয়ে ১ থেকে ২টা বড় নৌকার ব্যবস্থা করলে বর্ষার শুরু থেকে পানি শুকানো পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে যাওয়া-আসার অনেক সুবিধা হবে।
উপজেলার শেখ পাড়া বালিকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সৌরভ হাসান, ছানি আহমেদ, ওলি উল্লাহ, ইয়াছিন আলী, সুরাইয়া পারভিন, রুপালি পারভিন জানায়, এতটা পথ সরু আইল আর ডোবা-নালার পাড় দিয়ে হাঁটতে ভয় লাগে। মাঝে মধ্যেই পা ফসকে কাঁদা পানিতে পড়ে বই-খাতা নষ্ট হয়। পোশাকও ভিজে যায়। যাতায়াতের রাস্তা না থাকায় তাদের খুব কষ্ট হয়! শিক্ষার্থীরা আরও জানায়, বর্ষা মৌসুমে ঝুঁকি নিয়ে নৌকায় বিল পারি দিয়ে বিদ্যালয়ে যাতায়াত করে। অনেক সময় দুর্ঘটনার আশঙ্কায় অনেক বাবা-মা তাদের বিদ্যালয়ে আসা বন্ধ করে দেন।
নৌকার মাঝি বরাত আলী বলেন, ঘাট থেকে নিয়মিত শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে নেওয়া-আনা করি। মাঝে মধ্যে কিছু শিক্ষার্থী বাড়ি থেকে বের হতে দেরি করলে নৌকা ধরতে পারে না। আর তাতেই অনেক শিক্ষার্থীর ক্লাস মিস হয়ে যায়।
উপজেলার হামকুড়িয়া পশ্চিম পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জহুরুল ইসলাম মোল্লা বলেন, বর্ষা মৌসুমে চলনবিল এলাকা ডুবে থাকে। নদীতে বর্ষার পানি কমলেও খাল-বিল ও শাখা নদীতে পানি না কমায় বছরের বেশির ভাগ সময় নৌকা ছাড়া যাতায়াতের আর কোনো উপায় থাকে না। ছোট্ট নৌকায় চরে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে স্কুলে যাতায়াত করে খুুদে শিক্ষার্থীরা। তবে বর্ষা মৌসুমে শিক্ষার্থী কম হওয়ায় প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন তহবিল থেকে ২৫ হাজার টাকা ব্যয় করে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের জন্য একটি নৌকা তৈরি করা হয়েছে বলে জানালেন প্রতিরামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক মোছা. তোয়বুন নাহার।
মাগুড়াবিনোদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেহেদী হাসান ম্যাগনেট জানান, ইতিমধ্যে আমি হামকুড়িয়া পশ্চিম পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শন করেছি। এখন তো ব্রিজ করা সম্ভব না। তবে পরবর্তীতে পানি কমলে সেখানে বাঁশের সাকো দিয়ে নিয়মিত যেন চলাচল করার ব্যবস্থা করা হবে।
এ প্রসঙ্গে তাড়াশ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মুসাব্বির হোসেন খান বলেন, উপজেলার ৬টি প্রতিষ্ঠান চলনবিলের মধ্যে অবস্থিত। যার ফলে ওই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের নৌকায় পারাপার হতে হয়। ইতিমধ্যে প্রতিরাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এবার একটি নৌকা তৈরি করেছেন। বাকী প্রতিষ্ঠানে নৌকা নেই, সেই সকল প্রতিষ্ঠানেও নৌকার ব্যবস্থা করা হবে।
এআরএস