Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারি, ২০২৫,

গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স

চিকিৎসক সংকটে চিকিৎসাসেবা ব্যাহত

রুমন শেখ, গোয়ালন্দ (রাজবাড়ী)

রুমন শেখ, গোয়ালন্দ (রাজবাড়ী)

সেপ্টেম্বর ১৪, ২০২৩, ০৪:০০ পিএম


চিকিৎসক সংকটে চিকিৎসাসেবা ব্যাহত

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে প্রায় দেড় লাখ মানুষের বসবাস। বিশাল এই জনগোষ্ঠীর চিকিৎসাসেবা কেন্দ্র গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। এখানে যোগাযোগের ব্যবস্থা সহজতর হওয়ায় গোয়ালন্দ উপজেলার চারটি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা ছাড়াও সদর উপজেলার খানখানাপুর, বরাটসহ অন্যান্য এলাকার মানুষ এখানে আসেন চিকিৎসা সেবা নিতে।

গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, ৩৫ শয্যার এই হাসপাতালটি ২০১৪ সালে ৫০ শয্যায় উন্নতি করা হলেও বাড়েনি জনবল। এতে হাসপাতালে ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসা সেবা। সরকারি ওই হাসপাতালে এসে প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা না পেয়ে অনেক রোগী রাজবাড়ী, ফরিদপুরসহ বাইরের বিভিন্ন প্রাইভেট ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। এখানে সেবা নিতে গড়ে প্রতিদিন চার শতাধিক রোগী চিকিৎসা সেবা নিতে আসেন। কিন্তু দীর্ঘদিন যাবৎ সেখানে গুরুত্বপূর্ণ সার্জারি, কার্ডিওলজি, চর্ম ও যৌন রোগ, অ্যানেসথেসিয়াসহ ৬টি জুনিয়র কনসালটেন্ট পদ শূন্য রয়েছে। দেশের বৃহত্তম যৌনপল্লি এখানে থাকায় চর্ম ও যৌন রোগ অভিজ্ঞ ডাক্তারের সংকটের কারণে তাদেও ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে দীর্ঘদিন ধরেই। এছাড়া এই হাসপাতালে মেডিকেল অফিসার রয়েছেন মাত্র সাতজন, সিনিয়র স্টাফ নার্সের চারটি পদই শুন্য। শুন্য রয়েছে নার্সিং সুপারভাইজারের পদও এবং তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির পদসহ মোট সাইত্রিশটি পদের মধ্যে আছে মাত্র ১৯ জন। বাকি আঠারোটি পদ ফাঁকা।

জানা যায়, জুনিয়র কনসালটেন্ট (শিশু) ডা. আলাউদ্দিন ২০১৮ সালের ২০ অক্টোবর গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যোগদান করেন। যোগদানের পর মাত্র তিন দিন তিনি সেখানে উপস্থিত ছিলেন। এরপর থেকে আজ পর্যন্ত চিকিৎসক অননুমোদিতভাবে তিনি তার কর্মস্থল গোয়ালন্দে অনুপস্থিত রয়েছেন। দীর্ঘ পাঁচ বছর বাইরে থেকে তিনি আবার যোগাযোগ করছেন চাকরি বাঁচানোর তাগিদে। হাসপাতাল পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে খন্ডকালিন কিছু লোক রেখে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর কিছুটা ঘাটতি পূরণ করা হচ্ছে যার খরচ বহন করছেন গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও পৌরসভার মেয়রের যৌথ সহযোগিতায়। যে কারণে কিছুটা হলেও নোংরা পরিবেশ থেকে রক্ষা পাচ্ছে হাসপাতালটি।

আবাসিক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাক্তার মো. শরিফ বলেন, হাসপাতালের চিকিৎসক ও কর্মচারী সংকট থাকার পরও আমরা আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি। বর্তমানে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেশি থাকলেও আমরা অধিকাংশ রোগী এখানে রেখেই চিকিৎসাসেবা দিয়ে যাচ্ছি। তাছাড়া হাসপাতালের ধারণ ক্ষমতার চেয়ে প্রতিদিন বেশি রোগী ভর্তি থাকায় তাদের হাসপাতালের বারান্দায় রেখেও চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে।

এ ব্যাপারে গোয়ালন্দ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. মোস্তফা মুন্সী বলেন, ‘বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সংকটের পাশাপাশি তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর সংকট রয়েছে আমি ব্যক্তিগতভাবে সেখানে সহযোগিতা করছি। সরকারি এই হাসপালে এসে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা না পেয়ে অনেক রোগী রাজবাড়ী, ফরিদপুরসহ বাইরের বিভিন্ন প্রাইভেট ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। এলাকার বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর স্বার্থে গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রয়োজনীয় চিকিৎসকসহ অন্যান্য কর্মচারীর প্রয়োজন রয়েছে বলে তিনি জানান।

গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. ফারসিন তারান্নুম হক বলেন, ‘সরকারি এই হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকসহ তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর সংকট রয়েছে। কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। প্রায় পাঁচ বছর যাবৎ অননুমোদিতভাবে কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকা জুনিয়র কনসালটেন্ট (শিশু) ডা. আলাউদ্দিনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত চলছে। অক্টোবর মাসে পাঁচ বছর পূর্ণ হলে স্থায়ীভাবে হয়তো তার চাকরি চলে যাবে।

এআরএস

Link copied!