পূর্বাচল (গাজীপুর) প্রতিনিধি
সেপ্টেম্বর ২৪, ২০২৩, ০৩:২৯ পিএম
পূর্বাচল (গাজীপুর) প্রতিনিধি
সেপ্টেম্বর ২৪, ২০২৩, ০৩:২৯ পিএম
ফল ও সবজি হিসেবে পেঁপে বেশ জনপ্রিয়। শুধু পরিবারের চাহিদা মেটানোর জন্য একসময় বাড়ির আঙিনায় চাষ করা হতো, সুস্বাদু এই ফলটি বাণিজ্যিকভাবে চাষ করে চমক সৃষ্টি করেছেন গাজীপুর মহানগরীর পূবাইল সাপমারা এলাকার ফেরদৌস মিয়া।
গ্রামের ছেলে ফেরদৌস বন্ধু বান্ধব সবাই সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করলেও তিনি বেঁছে নিয়েছেন কৃষিকাজ। এলাকায় সবাই তাকে স্মার্ট কৃষক বলে ডাকেন।
পড়াশোনা শেষে বাবার সঙ্গে ব্যবসাযোগ দেন ফেরদৌস মিয়া তার পর কাজের জন্য দেশের বাইরে যাওয়ার চিন্তা করেন এবং কয়েকটি দেশে চেষ্টা করে যেতে না পেরে ২০১৬ সালে নিজের পৈত্রিক জমিতে ১০৫টি চারা লাগিয়ে যাত্রা শুরু করেন কৃষি কাজের। প্রথমবারেই তিনি সফল হন। আয় করেন এক লাখ টাকার উপরে। তার পর তিনি জমি এবং চারার পরিধি বাড়াতে থাকেন ২০১৭ সালে। জমিতে ৫০০ পেঁপে চারা রোপণ করেন সেখান থেকে তার আয় হয় ৫ লাখ টাকা। বিভিন্ন প্রতিকূলতা পেরিয়েও ধারাবাহিকভাবে এর পরিমাণ বাড়তে থাকে।
বর্তমানে সাত বিঘা জমিতে দুটি ঘেরের পাড়ে সতেরশো সারি সারি পেঁপে গাছ শোভা পাচ্ছে। প্রতিটি গাছের গোড়া থেকে মাথা পর্যন্ত ঝুলে আছে অসংখ্য পেঁপে।
তার বাগানে কিং, থাই, দেশি চারা, টপলেডি জাতের পূর্ণবয়স্ক পেঁপে গাছ রয়েছে। প্রতিটা পেঁপে গাছে প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ কেজি পেঁপে ধরেছে। সব কিছু ঠিক থাকলে এবারো লাভবান হবে বলে তিনি মনে করছেন।
ফেরদৌস মিয়া এখন এলাকার (মসজিদ, মাদ্রাসা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান) বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের আঙ্গিনায় ফ্রি পেঁপে চারা লাগিয়ে সবেইকে উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করছেন। উন্নত জাতের এ সব পেঁপে চারা প্রতিবেশীদের বাড়ির আঙ্গিনায় লাগিয়ে নিজেদের প্রয়োজন মিটানোয় উদ্বুদ্ধ করে নজির স্থাপন করেছেন। নিজের ফলানো পেঁপে বিনামূল্যে সবজি হিসাবে এলাকার এতিমখানায়ও দিচ্ছেন তিনি।
ফেরদৌস মিয়া বলেন, সাত বছর আগে এ পথে যাত্রা শুরু। আজকের সফলতার বীজ বপন করেছিলেন আমার বাবা। তার পরামর্শে ও অনুপ্রেরণায় আমি হাল ছাড়িনি। মাঝখানে জাত নির্বাচনে ভুল হওয়ায় পেঁপে চাষে সফলতা আসেনি। ২০১৮ সালে দুষ্কৃতকারীরা আমার পেঁপে বাগান থেকে ৫০০ চারা কেটে ফেলেন এবং ২০২২ সালে ঝড়ের কবলে পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হই। তখন আর্থিক ও মানুষিক ভাবে ভেঙে পড়ি। এক পর্যায়ে শুভাকাক্ষীদের সহযোগিতা এবং অনুপ্রেরণায় আবার মনযোগী হই পেঁপে চাষে।
আমি এখন এলাকার বেকার ও শিক্ষার্থীদের পেঁপে চাষে উদ্বুদ্ধ করার জন্য কাজ করছি। একজন শিক্ষার্থী যদি লেখাপড়ার পাশাপাশি মাত্র ২৫টি পেঁপে গাছ লাগায় এবং যত্ন করে তাহলে সেই গাছ থেকে মৌসুমে এক লাখ টাকা আয় করা সম্ভব। এ ধরণের উদ্যোক্তা থাকলে আমি নিজে সময় ও শ্রম দিয়ে সফলতা অর্জনে সহযোগিতা করবো। তবে বাগান করার আগে অবশ্যই জাত নির্বাচন ও সঠিক জাতের চারা রোপন করে পরিচর্যা করলেই সফলতা অনিবার্য।
উদ্যমী ফেরদৌস বলেন, এখন আমি বিভিন্ন এলাকার পেঁপে চাষীদের পরামর্শ দিয়ে থাকি। মাকড়সা ও ছত্রাক ছাড়া পেঁপে বাগানে তেমন কোনো সমস্যা দেখা যায় না। প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে পুষ্টিমানসমৃদ্ধ পেঁপে চাষে ভাগ্যবদলে ফেলা যায়। পেঁপে চাষে অর্থনৈতিকভাবে সরকারি সহযোগিতা পেলে দেশের বেকার সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। তিনি মনে করেন, শিক্ষিত বেকার যুবকরা যদি চাষে অগ্রসর হয় তাহলে তারাও লাভবান হবে।
গাজীপুর সদরের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা শাহিনা সুলতানা বলেন, আমি পেঁপে বাগানটি পরিদর্শন করেছি। ফেরদৌস মিয়া একজন কর্মঠ মানুষ। অনেক বছর ধরে পেঁপে চাষ করছেন। তিনি গাজীপুরে পেঁপে চাষে চমক দেখিয়েছেন। পেঁপে চাষে অনেক সময় ভাইরাস এর কারণে চারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আবার ব্যবসায়ীরা উন্নত জাত বলে নিম্নমানের চারা কৃষকদের কাছে বিক্রি করেন। এতে ফলন খারাপ হয়, প্রতারিত হয় কৃষকেরা। কৃষকদের প্রতারণা থেকে বাঁচাতে তিনি নিজেই এখন উন্নত জাতের পেঁপে চারা উৎপাদন করে বিক্রি করছেন।
এআরএস