Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪,

বিএসএফের বাধায় ফেনী নদীর তীর রক্ষা প্রকল্পের কাজ বন্ধ

এস এম ইউসুফ আলী, ফেনী

এস এম ইউসুফ আলী, ফেনী

সেপ্টেম্বর ২৪, ২০২৩, ০৩:৫২ পিএম


বিএসএফের বাধায় ফেনী নদীর তীর রক্ষা প্রকল্পের কাজ বন্ধ

বিএসএফের বাধায় আটকে আছে ফেনী নদীর তীর রক্ষায় ৬৫ কোটি টাকার প্রকল্পের কাজ। দরপত্র অনুযায়ী ঠিকাদার সময়মতো সিসি ব্লক তৈরি করলেও নদীতে ডাম্পিং করতে পারছে না। এতে থামছে না ভাঙন। এ বিষয়ে দুই দেশের মধ্যে আলোচনা চলছে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, খাগড়াছড়ির মাটিরাঙা উপজেলার অযোধ্যা এলাকায় নদী পাড়ে প্রস্তুত করা শত শত সিসি ব্লক পড়ে আছে। নদীতে ডাম্পিং ও প্লেসিং করতে না পারায় সিসি ব্লকের ওপর ঘাস উঠে গেছে। বিএসএফের বাধার কারণে নতুন কোনো ব্লকও বানানো যাচ্ছে না।

বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের সূত্র জানায়, সীমান্ত নদী তীর সংরক্ষণ ও উন্নয়নের (২য় পর্যায়) আওতায় ৬টি প্যাকেজে মাটিরাঙার অযোধ্যায় ফেনীর নদীর প্রায় ৮০০ মিটার, শান্তিপুর এলাকায় ৪০০ মিটার, দেওয়ান বাজার এলাকায় ৩০০ মিটার, লক্ষ্মীছড়া এলাকায় ৫০০ মিটার, করইল্যাছড়া এলাকায় ১১৫০ মিটার এলাকার নদীর ভাঙন রোধে প্রকল্প নেয়া হয়।

এছাড়া আলাদা ৩টি প্যাকেজে মাটিরাঙার তাইন্দং এলাকায় প্রায় ফেনী নদীর ২৫০ মিটার, করইল্যাছড়া এলাকায় ২৫০ মিটার এবং রামগড়ে মহামুনি-সোনাইপুর এলাকায় ৪০০ মিটার এলাকা ভাঙন রোধে সিসি ব্লক ডাম্পিং ও প্লেসিংয়ের প্রকল্প নেয়া হয়। এসব প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৬৫ কোটি টাকা।

ফেনী নদীর তীর রক্ষায় ২০১৯ সালে হাতে নেয়া প্রকল্প পরিকল্পনা অনুযায়ী সীমান্ত থেকে চার কিলোমিটার এলাকায় সিসি ব্লক ফেলার প্রস্তুতি নেয়া হয়। দরপত্র অনুযায়ী ওই বছরেই সিসি ব্লক তৈরি করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। কিন্তু তখনই বাধা আসে ভারতের পক্ষ থেকে। ব্লক ডাম্পিংয়ে বাধা দেয় দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনী- বিএসএফ। এদিকে, প্রতিবছরই নদীর বাংলাদেশ অংশের তীর ভাঙছে ও ভারতীয় অংশের তীরে চর জাগছে। এতে ক্ষুব্ধ স্থানীয়রা।

ভাঙনকবলিত এলাকার বাসিন্দা মো. জামাল উদ্দিন বলেন, ‘ফেনী নদীর ভাঙনের কারণে আমরা আতঙ্কে আছি। পাশের দেশের বিএসএফ বাধা দেয়াতে ব্লকের কাজ অসম্পূর্ণ রয়েছে। ব্লকগুলো নদীতে ফেলতে পারলে আমাদের আতঙ্ক দূর হতো।’

বেলছড়ি ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা আব্দুল আলী বলেন, ‘আমাদের নদী পাড়ের জায়গাগুলো ভেঙে যাচ্ছে। প্রতি বর্ষায় আমাদের ধানি জমি নদীতে হারিয়ে যাচ্ছে। ব্লকগুলো বসালে নদী তীর রক্ষার জন্য ভালো হবে।’

একই এলাকার বাসিন্দা মো. বেলাল হোসেন বলেন, ‘এখানে আমাদের ধানের জমি আছে। বর্ষায় যখন নদীতে পানি বাড়ে তখন ভাঙন সৃষ্টি হয়। আমাদের ফসলও নদীতে চলে যায়। ফসল হারালে আমরা খাব কি? বিএসএফের বাধার ফলে এখানে ব্লক ফেলা যাচ্ছে না। তাহলে নদীটা রক্ষা হবে কীভাবে!’

এ বিষয়ে বেলছড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. রহমত  উল্ল্যাহ জানান, ‘আমার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের বেশ কিছু এলাকায় কয়েকবছর ধরে নদী ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। ভাঙন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতায় ব্লক বানানোর কাজ শেষ হলেও বিএসএফের বাধার কারণে ব্লক বসানো যাচ্ছে না।’

সীমান্ত নদী তীর সংরক্ষণ ও উন্নয়নের (২য় পর্যায়) ঠিকাদার এস অনন্ত বিকাশ ত্রিপুরা জানান, ‘দরপত্রের শর্তানুযায়ী গুণগত মান বজায় রেখে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সিসি ব্লক নির্মাণের কাজ শেষ করি। কিন্তু যখনই এসব ব্লক নদীতে প্লেসিং করতে গেছি তখন বিএসএফের পক্ষ থেকে বাধা দেয়া হয়েছে। বিষয়টি পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ সংশ্লিষ্টদের একাধিকবার লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। তারপরও দুই বছর ধরে প্রকল্পটি ঝুলে আছে। প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে না পারায় এরইমধ্যে আমার প্রায় ৪ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। অনেক জায়গায় বিএসফের বাধার কারণে ব্লক বানানো যাচ্ছে না। সব ধরনের নির্মাণ সামগ্রী দাম বেড়েছে ফলে দরপত্রমূল্যের চেয়ে বাড়তি দামে আমাকে নির্মাণ সামগ্রী কিনতে হচ্ছে। এছাড়া প্রকল্প ঝুলে থাকায় আমার টেন্ডার ক্যাপাসিটির ওপর আঘাত আসবে।’

নদী তীর সংরক্ষণ ও উন্নয়ন (২য় পর্যায়) প্রকল্প পরিচালক নবকুমার চৌধুরী বলেন, ‘প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কোনো গাফিলতি নেই। যে ৯টি প্যাকেজের কাজ বন্ধ রয়েছে তা চালু করার জন্য গত মাসের ২৩-২৪ তারিখে ভারতের নয়াদিল্লীতে যৌথ নদী কমিশনের সভায় উপস্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ঢাকা অবস্থিত ভারতীয় হাইকমিশন অফিসের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। আশাকরি আমরা ছাড়পত্র পেয়ে যাব। এরপরই কাজ শুরু হবে।’

প্রসঙ্গত, ফেনী নদীর তীর রক্ষা এ প্রকল্প ২০২৫ সালে এর কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।

এআরএস

Link copied!