রাশেদুল ইসলাম, কক্সবাজার
সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২৩, ০৭:৫৫ পিএম
রাশেদুল ইসলাম, কক্সবাজার
সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২৩, ০৭:৫৫ পিএম
কক্সবাজারের টেকনাফ থেকে মানব পাচারকারী চক্রের মূলহোতা মো. বেলাল উদ্দিনসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এসময় উদ্ধার করা হয় পাচারকৃত সাতজন ভিকটিমকে।
পাচারকারি চক্রের সদস্যরা হলেন, টেকনাফ উপজেলার সদর ইউনিয়নের লেঙ্গুর বিল এলাকার মৃত ওমর হামজার ছেলে মো. বেলাল উদ্দিন(২৮), সাবরাং ইউনিয়নের লাফার ঘোনার এলাকার আবদুল গফুরের মাহফুজা(২২), একই ইউনিয়নের গোলারপাড়া এলাকার মৃত আবদুল গণির ছেলে আব্দুল্লাহ(৫৫) ও মিয়ানমারের বুচিডং এলাকার নুরুল ইসলামের ছেলে মো. আয়াছ (২৬)।
সোমবার (২৫ সেপ্টেম্বর) ভোর চারটায় টেকনাফ থানাধীন দক্ষিণ লেঙ্গুর বিল এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। একইদিন বিকেলে কক্সবাজার সদর মডেল থানার কনফারেন্স হলে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন অভিযানে নেতৃত্ব দেয়া কক্সবাজার সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান৷
উদ্ধার ভিকটিমকরা হলেন, চকরিয়া উপজেলার হারবাং ইউনিয়নের স্টেশন পাড়ার আবদুর রহমানের ছেলে রায়হান উদ্দিন(২৮), সিরাজগঞ্জ জেলার কাজীপুরের মো. হোসেন আলীর ছেলে মো. হাবিব উল্লাহ (১৬), কক্সবাজার পৌরসভার বৈদ্যঘোনা এলাকার কফিল উদ্দিনের ছেলে মো. রায়হান কবির (১৬), একই এলাকার আবুল হাশেমের ছেলে মো. আলমগীর (১৮), মহেশখালী উপজেলার শাপলাপুর ইউনিয়নের সোনা মিয়ার ছেলে সফর আলী (১৭), একই এলাকার আলী আজগরের ছেলে শওকত আজিজ (১৮) ও উখিয়ার থাইংখালী এলাকার মো. ইউনুসের ছেলে মো. মামুন মিয়া (২১)।
সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান বলেন, কক্সবাজার সদর মডেল থানায় দায়েরকৃত গত ০৪/০৯/২০২৩ এবং ১৭/০৯/২০১৩ ইং তারিখের পৃথক পৃথক নিখোঁজ জিডির প্রেক্ষিতে নিখোঁজ ব্যক্তিদের উদ্ধারের লক্ষ্যে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, সদর সার্কেল, মিজানুর রহমানের নেতৃত্বে কক্সবাজার সদর থানার একটি টিম জেলার টেকনাফ থানা এলাকায় ইন্টেল লিড পুলিশিং এর মাধ্যমে জানতে পারে কক্সবাজার সদর, চকরিয়া, মহেশখালী, উখিয়া এবং সিরাজগঞ্জ এলাকার কতিপয় কিশোর ও যুবক লোভ ও অসচেতনতার বশবর্তি হয়ে উন্নত জীবনের প্রত্যাশায় বিভিন্ন দালাল ও প্রতারক চক্রের মাধ্যমে মালোয়শিয়া যাওয়ার উদ্দেশ্যে সংঘবদ্ধ মানব পাচারকারী চক্রের হাতে পড়ে।
তিনি বলেন, উক্ত চক্রটি এদেরকে টেকনাফ থানাস্থ দক্ষিণ লেঙ্গুর বিল এলাকার জনৈক তৈয়বের বাড়িতে নিয়ে জড়ো করে এবং তাদেরকে জানায় পুলিশী তৎপরতার কারণে সরাসরি মালোয়শিয়া যাওয়া যাবে না বিধায় মায়ানমার হয়ে মালোয়শিয়া যেতে হবে। সে লক্ষ্যে পাচারকারীরা নিখোঁজ ব্যক্তিদের নৌকাযোগে টেকনাফ হতে মায়ানমার নিয়ে যায় এবং মানব পাচারকারী চক্রের মায়ানমারের সদস্যরা তাদেরকে সেখানে আটক করে রাখে।
এ চক্রটি নিখোঁজ ব্যাক্তিদের আত্বীয়-স্বজনদের কাছে ইমো অ্যাপস এবং মায়ানমারের মোবাইল নম্বরের মাধ্যমে যোগাযোগ করে তাদের শারীরিক নির্যাতন করতঃ মুক্তির জন্য মোটা অংকের টাকা দাবি করে। চক্রটি নিখোঁজ ব্যাক্তিদের জন্য টাকা না পেলে তাদের সবাইকে মেরে ফেলার হুমকী দেয়।
পুলিশের এ কর্মকর্তা বলেন, ভিকটিমদের অনেক আত্মীয়-স্বজন তাদের সহায় সম্বল বিক্রি করে পাচারকারীদের চাহিত টকার কেউ কেউ আংশিক, কেউ কেউ সম্পন্ন টাকা প্রেরণ করেন।
উক্ত তথ্যের ভিত্তিতে কক্সবাজার জেলাধীন টেকনাফ থানা এলাকায় সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা করিয়া টেকনাফ থানাধীন দক্ষিণ লেঙ্গুর বিল এলাকা থেকে মানব পাচারচক্রের মূলহোতা মো. বেলাল উদ্দিনসহ ৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়৷
মিজানুর রহমান জানান, উদ্ধার হওয়া ব্যক্তি ও গ্রেপ্তারের কাছ থেকে আর নানা তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। এসব তদন্ত করে পাচারকারিচক্রের অন্যান্য সদস্যদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার ও নিখোঁজ অন্যদের বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে।
এসব ঘটনায় কক্সবাজার সদর থানা ছাড়াও পৃথকভাবে উখিয়া, টেকনাফ, মহেশখালী ও চকরিয়া থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।
গ্রেপ্তার আসামিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন বলেও জানান তিনি৷
এআরএস