এম এ মান্নান, চৌগাছায় (যশোর)
অক্টোবর ৪, ২০২৩, ১১:৩৩ এএম
এম এ মান্নান, চৌগাছায় (যশোর)
অক্টোবর ৪, ২০২৩, ১১:৩৩ এএম
যশোরের চৌগাছায় রোগ-বালাই ও পোকার আক্রমণ থেকে ফসল রক্ষায় ক্ষেতে মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক স্প্রে। কোনো প্রকার শারীরিক সুরক্ষা ছাড়াই ক্ষেতে কীটনাশক স্প্রে করে থাকেন কৃষকরা। অজ্ঞতার ফলে ব্যাপক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে কৃষকরা।
উপজেলায় কীটনাশক প্রয়োগে কৃষকদের মধ্যে অজ্ঞতা ও অসচেতনতা বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী ও পরিবেশকে বিপর্যস্ত করে তুলছে। সেই সাথে কৃষকেরা আক্রান্ত হচ্ছেন বিভিন্ন জটিল রোগব্যাধিতে। সারা বছর জুড়ে সিম, করোলা, পোটল, টমেটা, বাঁধাকপি, ফুলকপি, মুলা, বেগুন, মরিচ, ধান, গম ও বিভিন্নসবজিসহ সব ফসলকে রোগ-বালাই ও পোকার আক্রমণ থেকে রক্ষা করতে কৃষকরা তাদের জমিতে বিভিন্ন ধরনের কীটনাশক দিয়ে থাকেন। তবে সঠিক পরামর্শের অভাবে নিরাপদ পদ্ধতিতে কীটনাশক ব্যবহার না করায় কৃষকরা রয়েছেন ব্যাপক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে।
সরেজমিনে উপজেলার সুখপুকুরিয়া, নারায়নপুর, স্বরুপদাহ, ধুলিয়ানী, পাশাপোল, ফুলসারা, সিংহঝুলী,পাতিবিলা, জগদিশপুর, হাকিমপুর, চৌগাছা সদর ইউনিয়নসহ পৌর এলাকায় মাঠে দেখা গেছে, কৃষকরা তাদের ফসলের জমিতে কীটনাশক ছিটাচ্ছেন। কারো নাকে-মুখে কোনো কাপড় বা মাস্ক নেই। অনেক কৃষককে দেখা গেছে টি-শার্ট পরে জমিতে কীটনাশক ছিটাচ্ছেন। কেউবা আবার ধানের জমিতে সারের সাথে আগাছানাশক মিশিয়ে হাতমোজা ছাড়াই হাত দিয়ে ছিটাচ্ছেন। কীটনাশকের প্যাকেট বা বোতলের গায়ে ¯পষ্ট অক্ষরে বিষ লেখা থাকলেও তা কেউ আমলেই নিচ্ছেন না। নিয়মনীতি না মেনেই এলাকার কৃষকরা যে যার মতো জমিতে কীটনাশক স্প্রে ছিটাচ্ছেন।
উপজেলার বাঘারদাড়ি গ্রামের কৃষক নুরনবী বলেন, আমাদের এলাকা সবজিজোন হিসেবে খ্যাত। মাঠের পর মাঠবেগুন, পটল, করোলা, সিম ও মরিচসহ বিভিন্ন সবজির আবাদ রয়েছে। সজবি ক্ষেত রোগ-বালাই ও পোকার আক্রমণ থেকে ফসলকে রক্ষা করতে জমিতে কীটনাশক দিয়েছি। বিশেষ করে পোকার আক্রমণ থেকে ফসল রক্ষায় সবজি ক্ষেতে সপ্তাহে দুই দিন কীটনাশকস্প্রে করতে হয়।
একই গ্রামের কৃষক আরমান আলী বলেন, দীর্ঘ দিন থেকে জমি লিজ-বর্গা নিয়ে চাষাবাদ করে আসছি। চলতি মৌসুমে এক বিঘা জমি বর্গা নিয়ে আমন ধান চাষ করেছি। চারা রোপনের পর এ সময়টাতে বিভিন্ন ধরনের রোগ-বালাই ও পোকার আক্রমণ হয়ে থাকে। রোগ-বালাই ও পোকার আক্রমণ থেকে ফসলকে রক্ষা করতে জমিতে কীটনাশক দিতে হচ্ছে।
পৌর এলাকার তারনিবাস গ্রামের কৃষক হাসানুর রহমান বলেন, কীটনাশক ছিটানোর সঠিক কোনো পদ্ধতি আমার জানা নেই বা কেউ পরামর্শও দেয়নি। কীটনাশক ছিটানোর সময় খুবই দুর্গন্ধ হয়। ছিটানোর পর প্রচন্ড মাথা ঘোরে মাঝে মধ্যে বিভিন্ন ধরনের অসুবিধাও দেখা দেয়। তাৎক্ষণিক স্থানীয় পল্লী চিকিৎসকের পরামর্শ ও চিকিৎসা নিয়ে থাকি।
উপজেলা সরকারি মডেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. আল-ইমরান বলেন, কীটনাশক ছিটানোর সময় নিরাপদ পোশাক ব্যবহার না করলে নাক ও মুখ দিয়ে বিষ শরীরের ভেতরে প্রবেশ করে বিষক্রিয়া হতে পারে। প্রতিনিয় এমন ভাবে জমিতে কীটনাশক স্প্রে করলে কৃষকের ফুসফুসি, লাঞ্চ, হার্ড এমনটি লেবার আক্রান্ত হতে পারে।
এমন মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক স্প্রে করায় স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ছেন কৃষক। এতে মৃত্যুর আশঙ্কাও রয়েছে। তাই জমিতে কীটনাশক ছিটানোর ক্ষেত্রে নাক-মুখে মাস্ক ও হাতে মোজা ব্যবহার করতে হবে। নিয়মজমিতে কীটনাশক ছিটানোর বিষয়ে কৃষকের মাঝে সচেতনতা বাড়ানো দরকার।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মুসাব্বির হুসাইন বলেন, কৃষকদেরকে জমিতে কীটনাশক ব্যবহার থেকে বিরত থাকার জন্য পরামর্শ দিয়ে আসছি। জমিতে মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহারে জমির উর্বরা শক্তি কমে যায়। তাই কীটনাশক ব্যবহার না করে অধিক ফসল ফলানোর জন্য জৈব পদ্ধতির মাধ্যমে চাষ করার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। কীটনাশক ব্যবহারে কৃষকদের সচেতন করতে মাঠ পর্যায়ে কাজ চলছে। কৃষকদের এ সকলবিষয়ে প্রশিক্ষণও দেওয়া হচ্ছে।
আরএস