Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪,

প্রথম শ্রেণির পৌরসভা

মঠবাড়িয়ায় পানি সরবরাহ প্রকল্পে অনিয়ম

মঠবাড়িয়া (পিরোজপুর) প্রতিনিধি

মঠবাড়িয়া (পিরোজপুর) প্রতিনিধি

অক্টোবর ৬, ২০২৩, ০৩:৩০ পিএম


মঠবাড়িয়ায় পানি সরবরাহ প্রকল্পে অনিয়ম

পিরোজপুরের প্রথম শ্রেণীর মঠবাড়িয়া পৌরসভায় পানি সরবরাহ প্রকল্পে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। অনিয়মিত পানি সরবরাহ, দুর্গন্ধ ও কর্দমাক্ত পানির কারণে ক্ষোভে পেটে যাচ্ছেন পৌরবাসী। জনহিতকর প্রকল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে হতাশায় ভুগছেন সংশ্লিষ্ট পৌরসভার উপকারভোগীরা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, পৌরবাসীর সুপেয় পানির সংকট নিরসনে সি.টি.ই.আই.পি প্রকল্পের আওতায় ৫৩ কোটি ৯ লাখ ৯৫ হাজার ৮৬ টাকা অর্থায়নে পানি সরবরাহ প্রকল্পের অবকাঠামো নির্মাণ কাজ করা হয়। এই প্রকল্পের কাজটি পায় গোপালগঞ্জের Sinoconost-MT& S.S Consortium নামে একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। পৌর শহরে ৫৪ কিলোমিটার পানির পাইপলাইন স্থাপন ও প্রাথমিক পর্যায় পৌর শহরে ৩ হাজার ৫শ’ হোল্ডিংয়ে উপকারভোগীকে পাইপলাইনের মাধ্যমে বাসা-বাড়িতে সুপেয় পানি সরবরাহ করা হয়।

ভুক্তভোগীরা জানান, ২০১৪ সালে কাজের শুরু থেকেই কাজ পাওয়া ঠিকাদারের লোকজন মঠবাড়িয়া পৌরসভার অফিসে কর্মরত প্রকৌশলী আব্দুস ছালেক ও অফিসের কতিপয় কর্মচারী প্রজেক্ট ডাইরেক্টর মো. আনোয়ারের যোগসাজশে প্রকল্পের অবকাঠামো কাজে খুবই নিম্নমানের পাইপ, লোহা, পাথর, সিমেন্ট ব্যবহার করে পাম্প হাউজ, বেজ ঢালাইসহ আনুষঙ্গিক নির্মাণ কাজ করেছেন। ওই সময় অভিযোগ করলেও পৌর কর্তৃপক্ষ কোন গুরুত্ব দেয়নি বরং বিভিন্ন ভাবে হুমকি দিয়েছে। পানির প্রকল্পের কাজ শেষ হতে না হতেই বিভিন্ন স্থান থেকে পাইপ ফেটে পানি বের হচ্ছে। অনিয়মিত পানি সরবরাহ, দুর্গন্ধ ও কর্দমাক্ত পানির পাওয়া যাচ্ছে। এই পানির কোন প্রয়োজন নাই।

৪নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা আসমা বেগম ও শিক্ষক মো. কাওসার হোসেন বলেন, মাঝে-মাঝে ছিটাফোট পানি আসে, যা প্রায় সময়ই অপরিষ্কার। পানির লাইন সংয়োগ দিয়েও বিপদে পরেছি।

১নং ওয়ার্ড সমাজসেবক ও কাউন্সিলর প্রার্থী আলী হায়দার অভিযোগ করে বলেন, বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলায় তারই কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিরলসভাবে দেশের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছেন। তবে কিছু সরকারি আমলা ও কিছু দলীয় লোকজনের কারণে সরকারের উন্নয়ন প্রশ্নবিদ্ধ। ৫৩ কোটি টাকার অধিক টাকা ব্যয়ে পানি প্রকল্পের কাজ শেষ হতে না হতেই পাইপ ফেটে পানি বের হয়।

২নং ওয়ার্ড বাসিন্দা বাদল বিশ্বাস দু:খ করে বলেন, প্রকল্পের কাজে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কোন তদারকি ছিল না বলে, ঠিকাদারের লোকজনেরা ইচ্ছেমতো অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে কাজ শেষ করেছেন। যার ফলে পাইপ ফেটে পানি বের হচ্ছে।

এ ব্যাপারে পৌর নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুস ছালেক স্পষ্ট কোন বক্তব্য দিতে না পারলেও তিনি বলেন, ৫০ কোটির টাকার উপরের কাজে আমরা তদারকি করতে পারি না। উপোরস্থ কর্মকর্তারাই সব করেছেন আমি ছিলাম কাঠের পুতুল, যেমনি নাছাইছে তেমনি নেচেছি। এমনকি আমি বিল করেছি তাও তারা ইচ্ছামত বাড়িয়ে-কমিয়ে নিয়েছে।

তৎকালীন পৌর মেয়র মো. রফিউদ্দিন আহম্মেদ ফেরদৌস বলেন, এটা চলমান প্রক্রিয়া। পাইপ ফেটে গেলে বা নষ্ট সাথে-সাথে রিপিয়ারিং করতে হবে।

পৌর প্রশাসক আরিফ-উল-হক বলেন, প্রথম শ্রেণির পৌরসভায় পানির অভাবে মানুষের হাহাকার। প্রতিনিয়ত আমার কাছে অভিযোগ আসে। এক যায়গা ঠিক করলে আবার দশ জায়গা থেকে পাইপ ফেটে পানি বের হয়।

তিনি আরও বলেন, সরজমিনে আমি ঘুরে দেখেছি নিম্নমানের পাইপ দেওয়ার কারণে এ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। এখানে ৫ লাখ লিটার ধারন ক্ষমতা সম্পন্ন ২টি ওভারহেড ট্যাংকি বসানো হয়েছে। ৭ ও ৮ নাম্বার ওয়ার্ডে পাশাপাশি বসানো হয়েছে। এতে পানি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে ১,২,৩ নং ওয়ার্ডবাসী।

স্থানীয় সংসদ সদস্য ও সরকারি হিসাব সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি ডা. মো. রুস্তুম আলী ফরাজী বলেন, পৌর ইঞ্জিনিয়ারের তদারকির অভাবে ঠিকাদাররা যেনতেনো ভাবে কাজ করেছে। যার কারণে এক বছর শেষ হতে না হতেই বিভিন্ন যায়গায় পাইপ ফুটা হয়ে পানি বেড় হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, এই নিম্নমানের কাজের জন্য আমি উপরস্থ কর্মকর্তাদের অবহিত করব।

এআরএস

Link copied!