ভালুকা (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি
অক্টোবর ১৪, ২০২৩, ০৫:৩৩ পিএম
ভালুকা (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি
অক্টোবর ১৪, ২০২৩, ০৫:৩৩ পিএম
ময়মনসিংহের ভালুকায় নবম শ্রেণির ছাত্রী রাখিয়া সুলতানা রিয়াকে হত্যার মূল ঘাতক স্বামী রিপনকে চার দিন পর গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ সময় তার থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত দা উদ্ধার করা হয়েছে।
শনিবার ভালুকা মডেল থানা পুলিশ এ তথ্য নিশ্চিত করে। এর আগে শুক্রবার বিকেলে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে টাঙ্গাইল জেলার ঘাটাইল উপজেলার গোরাইল বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার রিপন এ হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
ভালুকা মডেল থানার পুলিশ জানায়, স্কুলছাত্রী খুন হওয়ার পর থেকে ভালুকা মডেল থানা পুলিশসহ বিভিন্ন সংস্থা মূল ঘাতকসহ অপরাপর আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চালায়। তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে শুক্রবার বিকেলে ঘাতক স্বামী রিপনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তার রিপনের সূত্রে পুলিশ জানায়, এক বছর আগে বিয়ে করে ঘাতক রিপন বিদেশ চলে যাওয়ার পর স্ত্রী রিয়া তার বাবার বাড়ি চলে আসেন। অনেক চেষ্টা করেও তাকে বাবার বাড়ি থেকে আনতে পারেননি তিনি। একপর্যায়ে তার স্ত্রী ফোনে জানান, তিনি আর তার বাড়িতে যাবেন না। দেনমহরের টাকাও দিয়ে দেয়ার জন্য বলেন। এক সময় স্ত্রী তার সাথে সকল যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। পরে তিনি দেশে এসে প্রথমে সখীপুরে বাসা ভাড়া নেন এবং তার স্কুলের খোঁজ নেন। কিন্তু কোনো উপায় না দেখে তিনি স্ত্রীকে খুন করার পরিকল্পানা করেন। খুনের আগের দিন তিনি একটি দা কেনেন। গত সোমবার (৯ অক্টোবর) সকাল থেকে স্ত্রীর বাড়ির পাশে তিনি দাঁড়িয়ে থাকেন। বেলা ১২টার সময় স্কুলে যাওয়ার উদ্দেশে রিয়া যখন বাড়ি থেকে বের হন, তখন তিনি তার সামনে গিয়ে দাঁড়ান। এ সময় তাদের দু’জনের মাঝে কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে স্ত্রী রিয়া তাকে ধাক্কা দিয়ে পাশের বোরো ক্ষেতে ফেলে দেন। এতে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে দা দিয়ে কুপিয়ে খুন করেন।
জানা যায়, গত সোমবার দুপুরে বিদ্যালয়ের সমাপনী প্রস্তুতি পরীক্ষা দেয়ার জন্য বাড়ি থেকে বের হন উপজেলার বাটাজোর বিএম উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্রী রাখিয়া সুলতানা রিয়া। বাড়ি থেকে আনুমানিক ১০০ গজ দূরে মুখ মোড়ানো ও মাথায় ক্যাপ পরা এক ব্যক্তি রিয়াকে পেছন থেকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপ দেন। এতে মাকে ডাক দিয়ে চিৎকার করে দৌঁড়াতে শুরু করেন রিয়া। এ সময় হামলাকারী পেছন থেকে ঘাড়, পিঠসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে কুপিয়ে মেয়েটিকে জখম করেন।
মেয়ের চিৎকার শুনে মা মাজেদা খাতুন দৌঁড়ে এসে পাশের ধান খেত থেকে রক্তাক্ত অবস্থায় কাঁদা মাখা শরীরে উদ্ধার করেন তাকে। পরে মাজেদা খাতুনের ডাক-চিৎকারে অন্যরা ছুটে আসেন। কিন্তু হামলাকারীকে তারা ধরতে পারেনি। পরে তারা মেয়েটিকে উদ্ধার করে ভালুকা উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে জরুরি বিভাগের চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। রাতেই রিয়ার বাবা আব্দুল রশিদ অজ্ঞাতনামা আসামি দিয়ে ভালুকা মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।
উল্লেখ্য, উপজেলার বাটাজোর বিএম উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্রী রাখিয়া সুলতানা রিয়া। সে বাটাজোর গ্রামের আবদুর রশিদের মেয়ে। গত এক বছর আগে টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার মাওশা গ্রামের মানিক মিয়ার ছেলে প্রবাসী রিপন মিয়ার সাথে বিয়ে হয় তার। বিয়ের পর রিপন সৌদি আরব চলে যান। এরপর রিয়ার ওপর শ্বশুরবাড়ির লোকজন শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালান বলে অভিযোগ ওঠে। ছয় মাস আগে বাবার বাড়ি ফিরে আসেন রিয়া। কিছু দিন বিরতি দিয়ে আবার পড়ালেখা শুরু করেন তিনি।
ভালুকা মডেল থানার ওসি মো. কামাল হোসেন জানান, স্কুলছাত্রী রিয়ার স্বামী ঘাতক রিপন মিয়াকে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এছাড়া হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত দাও উদ্ধার করা হয়েছে।
এইচআর