নজরুল ইসলাম মুকুল, কুষ্টিয়া
অক্টোবর ১৭, ২০২৩, ০২:০৬ পিএম
নজরুল ইসলাম মুকুল, কুষ্টিয়া
অক্টোবর ১৭, ২০২৩, ০২:০৬ পিএম
বৃটিশ শাসকগোষ্ঠির নির্মম অত্যাচারে গ্রামের সাধারণ মানুষের জীবনকে যখন বিষিয়ে তুলেছিল, ঠিক সেই সময়ই সত্যের পথ ধরে, মানুষ গুরুর দিক্ষা দিতেই সেদিন মানবতার পথ প্রদর্শক হিসাবে বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহ’র আবির্ভাব ঘটে কুমারখালির ছেঁউড়িয়াতে। মরমী সাধক বাউল সম্রাট ফকির লালন সাঁইয়ের গানের মাঝেই লুকিয়ে আছে সৃষ্টির রহস্য।
সৃষ্টিকর্তার সাথে আত্মিক সম্পর্ক তাঁর গানের মূলমন্ত্র। বাউল সম্রাট ফকির লালন সাঁইয়ের সঙ্গীত আজও আমাদের অনুপ্রানিত করে। এই মহান সাধক বাউল সম্রাট ফকির লালন সাঁইয়ের ১৩৩তম ত্রিরোধান দিবস উপলক্ষ্যে কুষ্টিয়ার ছেঁউড়িয়ার আখড়া বাড়ীতে মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬ টায় থেকে শুরু হচ্ছে ৩ দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালা। এই ত্রিরোধান দিবস এর অনুষ্ঠান চলবে আগামী বৃহস্পতিবার পর্যন্ত।
‘মিলন হবে কত দিনে-আমার মনের মানুষের শনে” “ মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি” লালনের এই গানের সূরে লালন মাজার চত্বরে লালন অনুসারিরা মাতোয়ারা হয়ে উঠেছে। লালন ভক্ত ও অনুসারিরা দলে দলে দেশ বিদেশ থেকে এসে লালন মাজার চত্বরে তাদের নির্দিষ্ট স্থানে সামিনা টাঙ্গিয়ে বসে পড়েছে। কেউবা লালন অডিটোরিয়ামের নিচে আবার কেউ লালন মাজার চত্বরে বাগানের মধ্যে। একতারা দো’তারা নিয়ে লালন ভক্তরা লালনের গানে মাতোয়ারা। তাদেরকে দেখার ও শোনার জন্য আবাল বৃদ্ধ, স্কুল কলেজে ও বিশ^বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা ভীর জমিয়েছে। ইমিধ্যেই সন্ধ্যায় শহরজুরে চরম যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। এ উৎসবের একটা ভিত্তি হচ্ছে ঠিক এমনি এক দোলের দিনে লালন সাঁইজির আবির্ভাব ঘটেছিল ছেঁউড়িয়ার কালী নদীর ঘাটে।
লালনভক্ত ও অনুসারীরা জানান, লালন ফকির তার জীবদ্দশায় প্রতিবছর তার শিষ্য ও অনুসারীদের নিয়ে দোল পূর্ণিমা তিথিতে দোল উৎসব ও সাধু সংঘের আয়োজন করতেন। সেই থেকে প্রতিবছর লালন সাঁইজির আখড়াবাড়িতে দোল উৎসব উপলক্ষে আয়োজন করা হয় সাধুসঙ্গ। তবে লালনের মূল ধারার যেসব সাধক এবং অনুসারীরা আসছেন তারা পরম্পরা মেনে ১৭ অক্টোবর দোল পূর্ণিমা তিথিতে সন্ধ্যায় অধিবাসের মাধ্যমে সাধুসঙ্গ শুরু করবেন। পরের দিন ১৮ অক্টোবর দুপুরে পূর্ণ সেবার মাধ্যমে শেষ করবেন সাধুসঙ্গ।
সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় লালন একাডেমির উদ্যোগে লালনের কর্মময় জীবন ও দর্শন নিয়ে আলোচনা সভা, দেশি-বিদেশি শিল্পীদের পরিবেশনায় লালন সঙ্গীতানুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
লালন একাডেমীর আয়োজনে লালন স্মরণোৎসবে ব্যাপক নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। পুলিশ, র্যাব এর পাশাপাশি সাদা পোষাকে আছে আইন শৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা।
১৮৯০ সালের ১লা কার্তিক ভোরে এই মরমী সাধক বাউল সম্রাট দেহত্যাগ করেন এবং তাঁর সাধন-ভজনের ঘরের মধ্যেই তাকে সমাহিত করা হয়। লালনের মৃত্যুর পর তারই ধারাবাহিকতায় দোল পূর্ণিমার অনুষ্ঠান হয়ে আসছে।
১৭ অক্টোবর সন্ধ্যা ৬টায় লালন একাডেমীর সভাপতি কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ এহেতেশাম রেজা’র সভাপতিত্বে লালন মঞ্চের উদ্বোধনী ও আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন, জাতীয় সংসদের সদস্য ( কুষ্টিয়া-৩) ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. মাহাবুব উল আলম হানিফ, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, জাতীয় সংসদ সদস্য ( কুষ্টিয়া-১) আ. কা. ম. সরওয়ার জাহান, সংসদ সদস্য (কুষ্টিয়া-৪) ব্যারিস্টার সেলিম আলতাফ জর্জ, কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার এ,এইচ এম, আবদুর রকিব, কুষ্টিয়া জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ্ব মো. সদর উদ্দিন খান, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আজগর আলী, কুমারখালী পৌরসভার মেয়র মো. সামছুজ্জামান অরুন সহ কুষ্টিয়ার বিশিষ্ঠ ব্যক্তিবর্গরা।
প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত থাকবেন, প্রফেসর ইংরাজী বিভাগ ও সাবেক উপ-উপাচার্জ, কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ড. মো. শাহিনুর রহমান। আলোচক হিসেবে উপস্থিত থাকবেন, খাদেম, লালন মাজার লালন একাডেমীর মোহাম্মদ আলী।
শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখবেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ( সার্বিক) ও সহ-সভাপতি লালন একাডেমী কুষ্টিয়া মোছা. শারমিন আখতার ও কুমারখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিতান কুমার মন্ডল। রাত সাড়ে ৮টায় লালন একাডেমীর পরিবেশনায় সংগীত অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে ।
এআরএস