Amar Sangbad
ঢাকা সোমবার, ২৫ নভেম্বর, ২০২৪,

দুমকিতে নিষেধাজ্ঞা মানছে না কেউ

দুমকি (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি

দুমকি (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি

অক্টোবর ২৩, ২০২৩, ০৮:১৪ পিএম


দুমকিতে নিষেধাজ্ঞা মানছে না কেউ

পটুয়াখালীর দুমকিতে সরকারি নিষেধাজ্ঞা মানছে না কেউ। প্রশাসনকে যেন বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে দেদারছে শিকার করা হচ্ছে মা-ইলিশ। একদিকে চলছে মৎস্য বিভাগের অভিযান ঠিক তাঁর উল্টো দিকে জেলেরা নির্বিঘ্নে শিকার করছে মা-ইলিশ। ধীর গতির অভিযান ট্রলারে নাগাল পাচ্ছে জেলেদের। মান বাঁচাতে ঘাটের পরিত্যক্ত নৌকা-জাল জব্দ করার প্রতিযোগিতা করছে মৎস্য বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

গত ১১দিনের এমন ধারাবাহিক অভিযানে এ পর্যন্ত ৪৮ হাজার ৫শ মিটার কারেন্ট ও সুতার জাল এবং ৮ টি জেলে নৌকা আটক করা হলেও থামেনি ইলিশ শিকার।

স্থানীয় নির্ভরযোগ্য জানায়, উপজেলার পায়রা, পাতাবুনিয়া ও লোহালিয়া নদীতে ইলিশের অভয়ারণ্য খ্যাত রাজগঞ্জ-চান্দখালী, আলগির হাজিরহাট, লেবুখালী, পশ্চিম আংগারিয়া, বাহেরচর, কদমতলা, পাংসিঘাট, সন্তোষদি, চরগরবদি ও কলাগাছিয়ার জেলে পল্লীগুলোতে এখন উৎসবের আমেজ বইছে। 

নৌকা-জাল ঠিকঠাক করে দিনে-রাতে সমান তালে চলছে ইলিশ শিকারের প্রতিযোগিতা। চোখ-কান সবার খাড়া। প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা যেন তাদের কাছে থোরাই কেয়ার। মানছে না কেউ- মোবাইল ফোনের সংকেতে ভিন্ন ভিন্ন যায়গায় লুকানো নৌকা-জাল নিয়ে দ্রুত নদীতে নেমে পড়ছে। অভিযানের ট্রলার দেখা মাত্র তীরে ওঠে পথচারী হয়ে যায়। এভাবেই চলছে নিষেধাজ্ঞাকালীণ ইলিশ শিকারের প্রতিযোগিতা।

সূত্রটি জানায়, নিষিদ্ধকালীণ সময়ে জেলেদের আহরিত শ’ শ মন ইলিশ প্রতিদিন ভোর ৫টা থেকে ৬টার মধ্যে নির্দিষ্ট পাইকারদের কাছে বিক্রি করে দেয়া হয়। পাইকারদের নিকট স্বজনের বাড়িতে বাড়িতে ককশেডে বরফজাত করে মওজুদ করা হচ্ছে। নিষেধাজ্ঞার সময় কেটে গেলে তা খোলা বাজারে চড়া মূল্যে বিক্রির উদ্দেশ্যেই মওজুদ করছে।

অভিযান প্রশ্নে সূত্রটি জানায়, উপজেলা প্রশাসন ও মৎস্য বিভাগের প্রতিটি অভিযানের আগাম খবর নিশ্চিত হয়েই জেলেরা নৌকা জাল নিয়ে নদীতে যায়। অভিযানের ট্রলারের গতিবিধি লক্ষ্য রেখেই জেলেরা জাল ফেলে এবং সময় মতো তুলে নেয়। ট্রলার যে দিকে যায় তার বিপরীত দিকের জেলেরা তখন নদীতে নিশ্চিন্তে জাল ফেলে। মাত্র ১ থেকে দেড় ঘন্টা সময়ের মধ্যেই জালে মাছে পরিপূর্ণ হয়ে যায়। অভিযোগ রয়েছে, অবরোধকালে মৎস্য বিভাগের গতিবিধি নজরে রেখে একাধিক দুস্টচক্র মোবাইল ফোনে জেলেদের সতর্কিকরণের মেসেজ দিয়ে দেয়। আর এ কারনেই বিশেষ অভিযানে ওইসব জেলেরা ধরা পড়ছে না।

উপজেলা মৎস্য বিভাগের তথ্য মতে, গত ১১ অক্টোব রাত ১২টা থেকে টানা ১০ দিনের বিশেষ অভিযানে ৪৮হাজার ৫ শ মিটার কারেন্ট ও সুতার জাল এবং ৮ টি জেলে নৌকা আটক করা হয়েছে। এছাড়া বিভাগীয় মৎস্য বিভাগের উপপরিচালক ও জেলা মৎস্য কর্মকর্তার উপস্থিতিতে স্পীড বোটের অভিযোগে দু’জেলে বাপ-বেটাকে আটক করা হয়। আটক জেলের ১জনকে ৩০দিন কারাদন্ড ও অপর কিশোরকে ৫হাজার টাকা জরিমানা আদায় করে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে পায়রা তীরবর্তি লেবুখালীর বাসিন্দা মনির হোসেন হাওলাদার, জাকির হোসেন মোল্লাসহ অনেকেই ক্ষোভের সাথে জানান, মৎস্য বিভাগের অভিযান টিম লেবুখালী ঘাট থেকে ট্রলার নিয়ে আলগি-রাজগঞ্জ অভিমুখে রওয়ানা দিয়ে যাওয়ার সাথে সাথেই ওইসব এলাকার জেলেদের মোবাইলে মেসেজ পৌছে যায়।

অপরদিকে বিপরীত দিকে কোন অভিযান নেই সে মেসেজও একই লোক মারফত পৌছে যায়। ফলে অভিযানে নামা ট্রলারের সামনের জেলেরা সটকে পড়ে আর পেছনের জেলেরা নিশ্চিন্তে রাতভর মা-ইলিশ শিকারের উৎসবে মেতে ওঠে।

উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. নুরুল ইসলাম অভিযোগ প্রসঙ্গে বলেন, মাত্র একটি টিমের পক্ষে ২০ থেকে ৩০ কিমি. নদী একই সময়ে নিয়ন্ত্রণে রাখা খুবই দু:সাধ্য ব্যাপার। যে দিকে যাই বিপরীত দিকে ফাঁকা থেকে যায়। বাজেট স্বল্পতা, দ্রুতযান (স্পীডবোট) না থাকা ও জনবল বলের সীমাবদ্ধতা কারণে ইচ্ছা থাকলেও অভিযুক্ত জেলেদের আটকানো সম্ভব হচ্ছে না। তবে অভিযানে ৫টি নৌকা, ৩৯হাজার ৫মিটার জাল জব্দ করার পর অনেকাংশেই জেলেদের জাল ফেলার প্রবণতা কমেছে।

এআরএস

Link copied!