Amar Sangbad
ঢাকা সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪,

ফেনীতে আলোচিত নুসরাত হত্যা

চার বছরেও রায় কার্যকর না হওয়ায় পরিবারে ক্ষোভ

এস এম ইউসুফ আলী, ফেনী

এস এম ইউসুফ আলী, ফেনী

অক্টোবর ২৫, ২০২৩, ০২:২৮ পিএম


চার বছরেও রায় কার্যকর না হওয়ায় পরিবারে ক্ষোভ

ফেনীর আলোচিত মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার চার বছেরও মামলার রায় কার্যকর না হওয়ায় উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে তার পরিবার।

এ মামলায় নিম্ন আদালতে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত ১৬ আসামি উচ্চ আদালতে আপিল করায় রায় কার্যকরে বিলম্ব হচ্ছে বলে জানিয়ে বাদীপক্ষের ও ফেনী জেলা জজ আদালতের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এম শাহজাহান সাজু বলেন, ২০১৯ সালের ২৪ অক্টোবর দেশজুড়ে আলোচিত নুসরাত হত্যার রায় ঘোষণা করেন ফেনীর তৎকালীন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মামুনুর রশিদ।

পরে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত প্রধান আসামি অধ্যক্ষ এস এম সিরাজ উদ-দৌলা, নুর উদ্দিন, জাবেদ হোসাইন ও উম্মে সুলতানা পপিসহ কয়েকজন রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করেন। এখনও উচ্চ আদালতে আপিল শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে বলে জানান তিনি।

এদিকে মঙ্গলবার (২৪ অক্টোবর) জেলার সোনাগাজী উপজেলায় নুসরাতের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ঘটনার পর থেকে এখনো পুলিশ ওই বাড়িটিতে পাহারা বসিয়ে তার পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা দিয়ে আসছে। দীর্ঘ এতদিনে ও রায় কার্যকর না হওয়ায় নুসরাতের বাবা, মা ও দুই ভাই এখনো চোখের পানি ফেলছেন।

মামলার বাদী ও নুসরাতের বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান বলেন, বোনকে হত্যার ঘটনায় আদালত যথাযথ রায় ঘোষণা করেছেন। তবে চার বছরে রায় কার্যকর না হওয়া অপ্রত্যাশিত।

নোমান বলেন, আসামিদের স্বজনরা ঘটনার পর থেকে প্রতিনিয়ত ফেইসবুকে আমাদের পরিবার ও স্বজনদের নিয়ে নানা অপপ্রচার চালিয়ে আসছেন। আমরা সরকারের কাছে দাবি জানাই, দ্রুত রায় কার্যকর করা হোক।

নুসরাতের মা শিরিন আক্তার বলেন, একমাত্র মেয়েকে হারিয়েছি। প্রশাসন থেকে শুরু করে দেশের সব মানুষের সহযোগিতায় নিম্ন আদালতে সঠিক বিচার পেয়েছি। আশা করি, মেয়ের খুনিদের ফাঁসির রায় কার্যকরে উচ্চ আদালত আন্তরিক হয়ে নিম্ন আদালতের রায় বলবৎ রাখবে।

একই সঙ্গে এ রায় দ্রুত কার্যকরে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।

প্রসঙ্গত, ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসার আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফিকে (১৮) ২০১৯ সালের ২৬ মার্চ একই মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ-দৌলা তার অফিস কক্ষে ডেকে নিয়ে শ্লীলতাহানি করেন।

এ ঘটনায় নুসরাতের মা শিরিন আক্তার বাদী হয়ে পরদিন ২৭ মার্চ সোনাগাজী মডেল থানায় অধ্যক্ষ সিরাজ উদ-দৌলাকে আসামি করে মামলা করেন।

ওই দিনই অধ্যক্ষ সিরাজকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এরপর অধ্যক্ষ সিরাজের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত অভিযোগ প্রত্যাহার না করায় তার অনুসারীরা ঘটনার ১০ দিন পর (৬ এপ্রিল) নুসরাতকে পরীক্ষাকেন্দ্র থেকে ছাদে ডেকে নিয়ে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়।

এতে তার শরীরের ৮৫ শতাংশ পুড়ে যায়। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১০ এপ্রিল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে নুসরাতের মৃত্যু হয়।

এ ঘটনায় নুসরাতের বড় ভাই মাহমুদুল হাসান বাদী হয়ে সোনাগাজী মডেল থানায় একটি  হত্যা মামলা করেন।

মামলার মাত্র ৬ মাসের মাথায় একই বছরের ২৪ অক্টোবর ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল অভিযুক্ত ১৬ আসামির প্রত্যেককে মৃত্যুদণ্ড ও এক লাখ টাকা করে জরিমানার রায় ঘোষণা করেন।

এছাড়া, শ্লীলতাহানির ঘটনায় নুসরাতকে থানায় ডেকে জিজ্ঞাসাবাদের ভিডিও ধারণ করে তা প্রচারের ঘটনায় সোনাগাজী মডেল থানার তৎকালীন ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে ব্যারিস্টার ছায়েদুল হক সুমন আইসিটি আইনে একটি মামলা করেন। ওই মামলায় ২০১৯ সালের ২৮ নভেম্বর আদালত ওসি মোয়াজ্জেমকে আট বছরের কারাদণ্ড ও ১০ লাখ টাকা জরিমানা করেন।

এআরএস

Link copied!