চৌগাছা (যশোর) প্রতিনিধি
অক্টোবর ২৮, ২০২৩, ০১:৪৮ পিএম
চৌগাছা (যশোর) প্রতিনিধি
অক্টোবর ২৮, ২০২৩, ০১:৪৮ পিএম
যশোরের চৌগাছা উপজেলায় সাড়ে চার কোটি টাকা ব্যয়ে ছয় কিলোমিটার খননকৃত ভৈরব নদে ভরা বর্ষায়ও পানি নেই। কচুরিপানা বাসা বেঁধেছে নদের বুকে।
জানা যায়, উপজেলার উত্তর সীমান্তে অবস্থিত বেড় তাহেরপুর গ্রাম থেকে ভৈরব নদে প্রবেশ করেছে চৌগাছা উপজেলায়। আবার অনেকে বলেন, এখান থেকেই এ নদের শুরু।
তাহেরপুর থেকে শুরু হয়ে উপজেলার পূর্ব সীমান্তের গ্রাম আড়পাড়া হয়ে মর্যাদ বাওড় ছুঁয়ে ঝিনাইদহ জেলার কালিগঞ্জ উপজেলা বুকচিরে বয়ে গেছে যশোর সদর উপজেলায়।
তাহেরপুর থেকে আড়পাড়া পর্যন্ত এ নদের দৈর্ঘ্য ছয় কিলোমিটার। ভৈরব নদে ভরাট হয়ে যাওয়া অংশ খননের জন্য সরকার প্রকল্প গ্রহণ করেন। প্রকল্পের নামকরণ করা হয় ‘ভৈরব রিভার বেসন এলাকার জলাবদ্ধতা দূরীকরণ ও টেকশই পানি ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন প্রকল্প।
এ প্রকেল্পর আওতায় চৌগাছা উপজেলার ছয় কিলোমিটার খননের কাজ পায় এনএইচ-এমএসিস-এসএইউ (জেভ), মিশনপাড়া, পুরাতন কসবা, যশোর নামে একিট ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। ছয় কিলোমিটার কাজের চুক্তিমূল্য ছিল চার কোটি উনপঞ্চাশ লাখ ছেচল্লিশ হাজার সাতশো একষট্টি টাকা।
চুক্তি অনুযায়ি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নদের দৈর্ঘ্যে ছয় কিলোমিটার, প্রস্থ ৩২ মিটার এবং গড় গভীরতা ২.২৫ মিটার খনন করে দেওয়ার চুক্তিতে আবদ্ধ হয়। ২০১৯ সালের ১৯ মার্চ খনন কার্যক্রম শুরু করে ২০২০ সালে ১ মে কার্যক্রম শেষ হয়। কিন্তু সরকারের সাড়ে চার কোটি টাকা ব্যয় হলেও নদ খনন প্রকেল্পর উদ্দেশ্য- জলাবদ্ধতা দূর এবং টেকশই পানি ব্যবস্থাপনার কোনিটই বাস্তবায়িত হয়নি। বর্তমানে নদীটি সেই মরা অবস্থাতেই রয়ে গেছে। উপরোন্ত নদের দুই পাড়ে কোন সীমানা পিলার স্থাপন না করার কারণে প্রভাবশালীরা নদ দখল করে নিচ্ছেন।
এ ব্যাপারে হাকিমপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাসুদুল হাসান বলেন, নদী তো সঠিকভাবে চুক্তি অনুয়ায়ী খনন করা হয়নি; যা কাটা হয়েছে তা হয়েছে দায়সারা ভাবে। নদীর খননকৃত মাটি নদীর পাড়েই রাখা হয়েছে, যে মাটি বৃষ্টির পানিতে ধুয়ে আবারো নদীতে গিয়ে পড়েছে যার ফলে প্রতিনিয়ত নদী ভরাট হচ্ছে। নদীতে তো পানিই নেই তার আবার টেকশই পানি ব্যবস্থাপনা কিভাবে হবে এটাই বুঝলামনা।
নদীর পাড়ে অবিস্থত পুড়াহুদা মাধ্যমিক বিদ্যালেয়র প্রধান শিক্ষক নুরুল ইসলাম বলেন, খননের পর তো কোনদিন নদীতে পানিই দেখতে পেলাম না, তা আবার টেকশই পানি ব্যবস্থাপনা কবে হবে বুঝলাম না।
নদীর কিছু অংশ আছে পাতিবলা ইউনিয়নের মধ্যে পাতিবলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আতাউর রহমান লাল বলেন, নদী কত টাকা দিয়ে কিভাবে খনন করা হয়েছে তা বলতে পারবো না তবে নদীতে যে পানি নেই এটা বলতে পারবো।
আড়পাড়া গ্রামের মাস্টার ফরিদুল ইসলাম বলেন, নদী খনন করা দেখে খুব ভালো লেগেছিল যে, নদীতে আবার পানি হবে, সেখানে ছোটবেলার মত মাছ ধরবো কিন্তু সে আশা আর পূরণ হলো না, নদী খনন করা হলো কিন্তু পানি আসলো না। তিনিও বলেন কোথায় টেকশই পানি ব্যবস্থাপনা তা আমার মাথায় আসেন।
নদীর পাশেই চাষ আবাদ করেন পৌর এলাকার ইছাপুর গ্রামের শহিদুল ইসলাম খোকন। তিনি বলেন, নদী কেমন খনন করলো? নদীতে তো পানিই আসেলা না। কমপক্ষে যদি নদীর সীমানা পিলার স্থাপন করতো তাহলে প্রভাবশালীরা নদী দখল করে নিতে পারতো না।
স্থানীয় সাংবাদিক আসাদুজ্জাান মুক্ত ও বাবুল আক্তার বলেন, নদী খননটাই একটা আইওয়াশ। এখানে খননের কাজ যা হয়েছে তাতে কাজের কাজ কিছুই হয়নি। সরকারের কয়েক কোটি টাকা শুকনো নদীতে পড়ে গেলো। এলাকাবাসি ভৈরব নদী পূন:খনন ও সীমানা পিলার স্থাপনের দাবি জানিয়ছেন।
মান্নান/এআরএস