রাশেদুল ইসলাম, কক্সবাজার
নভেম্বর ৬, ২০২৩, ০৮:৩৬ পিএম
রাশেদুল ইসলাম, কক্সবাজার
নভেম্বর ৬, ২০২৩, ০৮:৩৬ পিএম
আগের চেয়ে উন্নত হয়েছে কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের চিকিৎসা সেবার মান। সারা দেশে চিকিৎসা সেবায় কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের স্থান ২য়। হাসপাতালের চিকিৎসা সেবার মান উন্নত হওয়ায় দিন দিন বেড়ে চলেছে নতুন নতুন রোগীর সংখ্যা। সরকারি কাগজে কলমে এই হাসপাতাল ২৫০ শয্যা হলেও চিকিৎসা সেবা চলছে ১০০ শয্যা হাসপাতালের জনবল দিয়ে।
হাসপাতালে বর্তমানে রোগী ভর্তি রয়েছে ৭৮৫ জন। জনবল না বাড়ায় চিকিৎসা সেবা দিতে খুব বেগ পেতে হচ্ছে চিকিৎসকদের। এরমধ্যে আবার ৫৫টি চিকিৎসক পদের বিপরীতে ১০টি পদই শূন্য। নেই বিশেষ আধুনিক চিকিৎসা যন্ত্রপাতিও। সংকট রয়েছে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর।
তারপরও সেবা প্রদানে চেষ্টার কোনো কমতি নেই চিকিৎসকদের। এ ছাড়া হাসপাতালটির বহির্বিভাগে দীর্ঘসময় লাইনে দাঁড়িয়ে গড়ে প্রতিদিন প্রায় ২ হাজারের অধিক রোগী চিকিৎসা গ্রহণ করেন।
সোমবার (৬ নভেম্বর) সরজমিন দেখা গেছে, কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের মূল প্রবেশদ্বারের প্যাথলজী বিভাগের সামনে রোগীর প্রচন্ড রোগীর ভিড়৷ রেডিওলজি ও ইমেজিং বিভাগে আলট্রাসনোগ্রাফি ও পরীক্ষার রিপোর্টের জন্য প্রচুর ভিড় করছেন রোগী ও রোগীর স্বজনরা৷ ৫ম তলায় সার্জারী ওয়ার্ডের সামনে পুরো বারান্দা জুড়ে রোগীর শয্যা। শুধু এই বারান্দায়ই এই চিত্র নয়, গাইনি ওয়ার্ডসহ হাসপাতালের প্রতিটি ওয়ার্ডের বারান্দায়, বাথরুমের পাশে মেঝেতেও মাদুর বিছিয়ে শয্যা বানিয়ে রোগীরা চিকিৎসা নিচ্ছেন। যেন তিল ধারণের ঠাঁই নেই হাসপাতালে।
কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতাল সূত্র জানায়, ১০টি বিভাগের অধীনে ১৮টি ওয়ার্ডে ৫৫টি চিকিৎসক পদের বিপরীতে ১০টি পদই শূন্য। হাসপাতালের অন্য জনবলেও সংকট রয়েছে। স্বল্প জনবল নিয়ে হিমশিম খেতে হয় চিকিৎসকদেরও। হাসপাতালে স্বাস্থ্যসেবার মান ধরে রাখতে জনবল বাড়ানোর পাশাপাশি দ্রুত
শয্যা বাড়ানোসহ ভবন সম্প্রসারণ প্রয়োজন বলে মনে করেন চিকিৎসকরা।
সম্প্রতি কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতাল থেকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বরাবরে পাঠানো আবেদনে দেখা যায়, ২৫০ শয্যা কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে শূণ্যপদ সমূহ পূরণ ও সংযুক্তিতে মেডিকেল অফিসার পদায়ন৷ শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত ২৫০ শয্যা জেলা সদর হাসপাতালে বর্তমানে অস্থায়ী ক্যাম্পাস কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, কক্সবাজার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এই হাসপাতালে আন্তঃবিভাগে গড়ে ৮০০ থেকে ৮৫০ জন রোগী ভর্তি থাকে, বহিঃবিভাগে ২ হাজার ৫০০ থেকে ৩ হাজার রোগী চিকিৎসা সেবা নিয়ে থাকেন এবং জরুরী বিভাগে প্রতিদিন ৩০০ থেকে ৪০০ জন রোগী চিকিৎসা সেবা নিয়ে থাকেন। এছাড়াও শরনার্থী ক্যাম্প থেকে রেফার করা ৪০-৪৫ জন রোগী প্রতিদিন উন্নত চিকিৎসার জন্য এই হাসপাতালে আসেন।
আবেদনে আরো লেখা হয়, হাসপাতালে কর্মরত বিদ্যমান জনবল দিয়ে এতো অধিক সংখ্যক রোগীর চিকিৎসা প্রদান করা খুবই দুরূহ ব্যাপার হয়ে দাড়িয়েছে। তদুপরি অত্র হাসপাতালে বৈকালিক সেবা চালু করা হয়েছে যার ফলে যথাযথ চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া খুবই দুঃসাধ্য হয়ে দাড়িয়েছে।
কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের প্রশাসনিক আরএমও ডা. জি আর এম জিহাদুল ইসলাম ও জরুরি বিভাগের আরএমও আশিকুর রহমান বলেন, এই হাসপাতালে প্রায়ই ধারণ ক্ষমতার তিনগুন রোগী ভর্তি থাকছেন। রোগীর চাপের কারণে চিকিৎসকদের কষ্ট তো হয়ই। তারপরও আমরা কখনো কোনো রোগীকে অবহেলা করি না। কোনো রোগী আসলে ভর্তির প্রয়োজন হলে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা দিচ্ছি।
কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডা. মং টিং ঞো বলেন, আমাদের ১০০ শয্যার চিকিৎসক দিয়ে ২৫০ শয্যার রোগীর চিকিৎসা দিতে হচ্ছে। চিকিৎসক সংকট থাকার পরও যে চিকিৎসকরা আছেন তারা অক্লান্ত পরিশ্রম করে চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। জনবল সংকটের পাশাপাশি আমাদের আধুনিক যন্ত্রপাতির সংকটও রয়েছে। আমাদের আরও সম্প্রসারিত ভবন দরকার।
তিনি বলেন, আমি দায়িত্ব নিয়েছি বেশিদিন হয়নি৷ হাসপাতালের যেন বদনাম না হয় চেষ্টা করে যাচ্ছি মানুষকে সেবা দিতে৷ প্রতিদিন হাসপাতালের প্রত্যেক ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে গিয়ে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের খোঁজ খবর নিচ্ছি আর পরিদর্শন করছি৷
এআরএস