তারেক পাঠান, পলাশ (নরসিংদী)
নভেম্বর ৬, ২০২৩, ০৯:৩৯ পিএম
তারেক পাঠান, পলাশ (নরসিংদী)
নভেম্বর ৬, ২০২৩, ০৯:৩৯ পিএম
প্রকল্পটির উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
দেশের অভ্যন্তরে সারের ঘাটতি পূরণের পাশাপাশি আমদানি নির্ভরতা কমাতে নতুন যুগে ঢুকতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় সার কারখানা ঘোড়াশাল পলাশ ইউরিয়া সার কারখানার কাজ শেষ হয়েছে। কারখানাটি চালু হলে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে কর্মসংস্থান হবে প্রায় ৩০ হাজার মানুষের। ১১০ একর জমির ওপর নির্মাণাধীন এই প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ১৫ হাজার ৫শ` কোটি টাকা। চলতি মাসের ১২ তারিখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রকল্পটির উদ্বোধন করবেন।
সন্ধ্যার পর আলোর ঝলকানিতে এখন দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় সার কারখানা ঘোড়াশাল পলাশ ইউরিয়া সার কারখানা সৌন্দর্য শোভা পাচ্ছে। পাখির চোখে দেখলে মিলবে এখন পুরোপুরি প্রস্তুত কারখানাটি। খাদ্য ঘাটতি পূরণসহ দেশের কৃষি খ্যাতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে ২০১৮ সালের ২৪ অক্টোবর সরকার উদ্দ্যোগ নেয় উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন, শক্তি সাশ্রয়ী, পরিবেশ বান্ধব ও আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর একটি সার কারখানা নির্মাণের।
২০২০ সালের ১০ মার্চ ঘোড়াশাল-পলাশ ইউরিয়া ফার্টিলাইজার প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। যার দায়িত্ব পায় সিসি সেভেন নামে একটি চিনা এবং জাপানের মিৎসুবিশি হেভী ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। দুই প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে ২০২৩ এর ডিসেম্বরে এর নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু, প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার দুইমাস আগেই এর কাজ পুরোপুরি শেষ হয়ে পরীক্ষামূলক সার উৎপাদন করছে কারখানাটি। এ মাসের ১২ তারিখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রকল্পটির উদ্বোধনের কথা রয়েছে।
ঘোড়াশাল পলাশ ইউরিয়া ফার্টিলাইজার প্রজেক্টের জেনারেল ম্যানেজার (অপারেশন) এ এস এম মোসলেহ উদ্দিন জানান, ‘কারখানটিতে বিশ্বের অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করায় ৩০ বছরের মধ্যে কোনো কিছুতে হাত দিতে হবে না। সেইসঙ্গে বাংলাদেশের প্রকৌশলীরাও ফার্টিলাইজার সেক্টরে এখন অনেক অভিজ্ঞ। যার কারণে যে কোনো সমস্যা কারখানায় হলে তা সমাধান করতে আমরা সক্ষম।’
এদিকে ঘোড়াশাল পলাশ ইউরিয়া ফার্টিলাইজারের প্রকল্প পরিচালক মো. রাজিউর রহমান মল্লিক জানান, কারখানাটি যখন টোটাল অপারেশনে যাবে, তখন ৯৬৮ জন লোকের পার্মানেন্ট কর্মসংস্থান হবে। এছাড়া পনেরো শত থেকে দুই হাজার লোক কারখানায় ডেইলি বেসিসে কাজ করবে বিভিন্নভাবে। সার কাখানায় লোডিং- আনলোডিং সার বস্তাবন্দি করা, প্যাক করা, ট্রাকে, ট্রেনে উঠানো এসব জায়গায় কমপক্ষে দুই হাজার লোক কাজ করবে। এছাড়া এই ফ্যাক্টরিতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ত্রিশ হাজার লোকের কর্মসংস্থান হবে।
প্রকল্প পরিচালক আরও জানান, এত বড় লেটেস্ট টেকনোলজি বিদেশিরা করে দিয়ে গেল, বাংলাদেশের প্রকৌশলীরা যদি চালিয়ে না রাখতে পারে, তাহলে আমাদের লাভ হলো না, আমরা যদি আবার জাপানিদের ডেকে আনি, সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে, অনেক বৈদেশিক মুদ্রা খরচ করতে হবে। এক্ষেত্রে আমরা যেটা করছি আমাদের যে জাপানিজ কনসালটেন্টদের মাধ্যমে আমাদের দেশের প্রত্যেকটা অফিসার, অপারেটরকে ট্রেনিং দিচ্ছে দেশে এবং বিদেশে। বর্তমানে অপারেশন সিস্টেম আমাদের দেশের লোকেরা চাল্লাচ্ছে, তারা( বিদেশিরা) দাঁড়িয়ে থাকে। এতে করে আমাদের দেশের লোকদের কনফিডেন্স গ্রো হচ্ছে, কোনোরকম ভুল হলে তারা সেটা ধরিয়ে দিচ্ছে, দেখিয়ে দিচ্ছে। হাতে- কলমে ট্রেনিং দিচ্ছে। আমাদের অফিসার, অপারেটররা ক্যাপাবল, তারা তাদের সামর্থ্য দেখাচ্ছে, তাদেরকে যথেষ্ট সাফিসিয়েন্ট ট্রেনিং দেয়া হচ্ছে। আমরা অলরেডি উৎপাদনে চলে গেছি। আমরা এখন ট্রায়াল রানে আছি, কোনোরকম সমস্যা হচ্ছে কিনা সবকিছুই নজরদারিতে রাখা হচ্ছে। ট্রায়াল রান আমরা সাকসেসফুলি কমপ্লিট করেছি। ১২ তারিখে প্রধানমন্ত্রী এসে এটা উদ্বোধন করবেন। প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করার পর আমরা পুরোপুরি প্রডাকশনে চলে যাবো
দুইমাস আগে কারখানাটি চালু হওয়ায় ৩৫০ থেকে ৪০০ কোটি টাকার অতিরিক্ত সার উৎপাদন হবে। ১১০ একর জমির ওপর নির্মাণাধীন এই প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ১৫ হাজার ৫শ` কোটি টাকা। এখান থেকে বছরে উৎপাদন হবে ১০ লাখ মেট্রিকটন ইউরিয়া সার। আর প্রতিদিন এখান থেকে ২ হাজার ৮শ মেঃটন ইউরিয়া সার উৎপাদনে সক্ষম দক্ষিণ এশিয়ার সর্ব বৃহৎ অত্যাধুনিক ও প্রযুক্তি নির্ভর সারকারখানাটি।
এআরএস