Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪,

ইউএনও’র বোন পরিচয়ে প্রতারণা, আদিতমারীতে ইউএনও অফিস ঘেরাও

লালমনিরহাট প্রতিনিধি

লালমনিরহাট প্রতিনিধি

নভেম্বর ৭, ২০২৩, ০৯:২৭ পিএম


ইউএনও’র বোন পরিচয়ে প্রতারণা, আদিতমারীতে ইউএনও অফিস ঘেরাও

লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) বোন পরিচয়ে হতদরিদ্র নারীদের প্রশিক্ষণ, চাকরিসহ নানান সরকারি অনুদান পাইয়ে দেয়ার নামে প্রতারণা করে কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়া প্রতারক স্বপ্নাকে গ্রেপ্তারের দাবিতে ইউএনও অফিস ঘেরাও করেছে হতদরিদ্র নারীরা।

মঙ্গলবার (৭ নভেম্বর) দুপুরে আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয় ঘেরাও করে স্মারকলিপি প্রদান করেন ভুক্তভোগী হতদরিদ্র নারীরা। অভিযুক্ত প্রতারক নাসিমা আক্তার স্বপ্না আদিতমারী টিএনটি পাড়ার নুর ইসলামের মেয়ে।

অভিযোগ ও ভুক্তভোগিরা জানান, গ্রামীণ হতদরিদ্র বেকার নারীদের স্বাবলম্বী করার প্রতিশ্রুতিতে সেলাইসহ নানান প্রশিক্ষণ ও মাসিক ১০ হাজার টাকা করে সম্মানি দেয়ার নাম করে জনপ্রতি ২ থেকে ৩ হাজার করে কয়েক শত নারীর কাছে টাকা নেন নাসিমা আক্তার স্বপ্না। একই সঙ্গে নারীদের মহিলা বিষায়ক, সমাজসেবা, সমবায় ও যুবউন্নয়ন দফতরের বিভিন্ন সরকারি ভাতাসহ নানান সুবিধা পাইয়ে দেয়ার কথা বলে ৪ থেকে ৫ হাজার করে টাকা আদায় করেন তিনি। নাসিমা আক্তার স্বপ্না নিজেকে আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার(ইউএনও) বোন পরিচয় দিয়ে গ্রামীণ নারীদের সঙ্গে প্রতারণা করে এ অর্থ হাতিয়ে নেন।

প্রথম দিকে নিজেকে ইউএনও’র বোন পরিচয় দিয়ে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের একটি কক্ষে ভাড়া নিয়ে আদিতমারী মহিলা উন্নয়ন সংস্থার ব্যানার ব্যবহার করে প্রশিক্ষণ চালু করেন। যা দেখে গ্রামীণ নারীরা সত্য বলে মেনে নিয়ে তার প্রতারণার ফাঁদে পা বাড়ায়। এভাবে পুরো উপজেলায় জালবিস্তার করে কোটি টাকা হাতিয়ে নেন নাসিমা আক্তার স্বপ্না।

গত ৩/৪ মাস আগে স্থানীয়রা বিষয়টি ইউএনওকে মৌখিক অবগত করলে তিনি মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স থেকে স্বপ্নার প্রশিক্ষণ বন্ধ করে দেন। পরে প্রতারক স্বপ্ন কৌশলে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নিজ বাড়ি আদিতমারী হ্যালিপ্যাড এলাকায় স্থানান্তরিত করেন। এরই মাঝে প্রথম দফায় প্রশিক্ষণ নেয়া নারীদের প্রশিক্ষণের তিন মাস মেয়াদ শেষ হলেও সম্মানি পান নি। ফলে সম্মানি নিয়ে নারীদের সঙ্গে কয়েক দফায় মারামারীর ঘটনা ঘটে স্বপ্নার। প্রতিবাদকারী নারীদের শায়েস্তা করতে স্বপ্নার রয়েছে নিজেস্ব লাঠিয়াল বাহিনী।

এতেই শেষ নয়, অনেক বেকার নারীকে সরকারি চাকরি পাইয়ে দেয়ার নাম করে ৪ থেকে ৫ লাখ করে টাকাও হাতিয়ে নিয়েছেন। চাকরি প্রত্যাশীদের কাছে স্বপ্না সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদের নিকট আত্মীয় নাম ভাঙিয়ে পরিচয় দিতেন বলেও ভুক্তভোগিরা অভিযোগ করেন।

চাকরি, সরকারি অনুদান বা প্রশিক্ষণের ভাতা না পেয়ে এক পর্যয়ে ভুক্তভোগীরা তার প্রতারণার বিষয়টি বুঝতে পেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বারাবরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগের দীর্ঘদিন পেরিয়ে গেলেও প্রতারক স্বপ্নার প্রতারণা বন্ধ না হওয়ায় ফুঁসে উঠে নারীরা।

ভুক্তভোগী সাথী বেগম বলেন, প্রশিক্ষণে সম্মানি ও সরকারি অনুদান দেয়ার নাম করে স্বপ্না ইউএনও’র বোন ও মন্ত্রীর আত্মীয় পরিচয় দিয়ে আমাদের কাছে টাকা নেন। ইউএনও’র বোন জন্যই স্বপ্না মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সে অফিস করেছিলেন। এটাই আমাদেরকে বলে প্রতারণা করেছিল। ইউএনও’র বোন ছাড়া সরকারি অফিসে তার প্রশিক্ষণ হত না। এটা ভেবে আমি টাকা দিয়েছি। এছাড়া অভিযোগ দিয়েও যখন তার প্রতারণা বন্ধ হয়নি। তখন আমরা ভেবেছি, হয়তো স্বপ্না ইউএনও এবং মন্ত্রীর আত্মীয়  হবে।

অভিযুক্ত নাসিমা আক্তার স্বপ্নাকে একাধিকবার ফোন করেও তিনি রিসিভ করেন নি। এমনকি তার বাড়িতে গেলেও সাংবাদিকরা তার দেখা পায়নি।

উপজেলা মহিলা বিষয়ক অফিসার রশিদা বেগম বলেন, আদিতমারী মহিলা উন্নয়ন সমিতি স্বপ্নার মায়ের। চার মাস আগে প্রতারণার বিষয়টি জানতে পেয়ে তার মাকে এ ব্যানার ব্যবহারের নিষেধ করা হয়। পরে তারা ব্যানার ছাড়াই এসব প্রতারণা করছে। তাদের কোন ফান্ড বা প্রজেক্টও নেই। এটা তাদের প্রতারণা বলে মনে হয়েছে এবং ঊর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবগত করা হয়েছে।

আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জিআর সারোয়ার বলেন, স্বপ্না প্রতারণা করতে বোন পরিচয় দিতে পারে।’

এআরএস

Link copied!