Amar Sangbad
ঢাকা সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪,

নকশি কাঁথা তৈরি করে স্বাবলম্বী সেলিনা

পরাণ আহসান, ভোলা

পরাণ আহসান, ভোলা

ডিসেম্বর ৮, ২০২৩, ০৮:৩১ পিএম


নকশি কাঁথা তৈরি করে স্বাবলম্বী সেলিনা

ভোলা জেলা শহরে নকশি কাঁথা তৈরি করে সেলিনা আক্তার নামের এক নারী উদ্যোক্তা স্বনির্ভরতা অর্জন করেছেন। এক সময়ে স্বল্প আয়ের স্বামীর সংসারে বাড়তি আয়ের জন্য কিছু একটা করতে আগ্রহী হয়ে উঠেন। পরে ইউটিউবে নকশি কাঁথা তৈরি করতে দেখে মনোযোগী হন তিনি। প্রথম দিকে বিভিন্ন সমস্যা হলেও এখন বেশ জমে উঠেছে সেলিনার এ ব্যবসা ।

নিজের প্রচন্ড ইচ্ছাশক্তি ও একাগ্রতায় নকশি কাঁথা তৈরি করে আত্বনির্ভরশীল হয়ে উঠেছেন এ নারী উদ্যোক্তা। বর্তমানে অনলাইন ও অফলাইন দুইভাবেই বিক্রি করছেন কাঁথা। চাহিদাও রয়েছে বেশ। তার এখানে কর্মসংস্থান হয়েছে বেশ কজন নারী শ্রমিকের। ইতোমধ্যে সেলিনা মনোনীত হয়েছেন জেলা পর্যায়ে জয়িতা হিসেবে।

আমার সংবাদে’র সাথে আলাপকালে সেলিনা আক্তার জানান, পৌর শহরের ৮ নং ওয়ার্ড’র পৌর কাঠালী এলাকার নিজ বাড়ির সামনে গড়ে তুলেছেন ‘গ্লামার জোন নকশি কাঁথা’ নামের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। ছোট বেলা থেকেই সেলাই-আঁকা-ঝোকার উপর বেশ আগ্রহ  ছিলো তার। তাই ২০১৮ সালের দিকে নকশি কাঁথা তৈরিতে মন দেন। পরবর্তীতে সফলতা দেখা দিলে বড় পরিসরে কাজ শুরু করেন। বর্তমানে ৩ জন নারী শ্রমিক সার্বক্ষণিক তার প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন।

তিনি জানান, এর বাইরেও প্রায় ৩০ জন নারী শ্রমিক চুক্তিতে তার প্রতিষ্ঠানে কাঁথা তৈরিতে কাজ করছেন। নানান ডিজাইনের মাসে ২৫ থেকে ৩০টি কাঁথা তৈরি করতে পারেন তারা। ছোটদের কাঁথা বিক্রি করছেন ৩’শ থেকে হাজার টাকায়। আর বড়দের নকশি কাথা ৬ হাজার টাকা থেকে ৮ হাজার, ১০ হাজার সর্বোচ্চ ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়ে থাকে। প্রতিমাসে তার এ ব্যবসা থেকে ৩০-৪০ হাজার টাকা লাভ হয় পরিশ্রমী এ নারীর।

সেলিনার পরিবারে অসুস্থ স্বামী ও একমাত্র কলেজে পড়ুয়া মেয়ে রয়েছেন। কিছুদিন আগে বড় মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন নিজের সঞ্চিত অর্থে। সাম্প্রতিক সময়ে জেলায় শুরু হওয়া মাসব্যাপী শিশু মেলা ও শিল্প প্রদর্শনী মেলায় তার নিজ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের স্টল রয়েছে। সব মিলিয়ে এ নারী উদ্যোক্তা বর্তমানে ব্যস্ত সময় পার করছেন।

সোলিনা আক্তার আরো জানান, বিভিন্ন ডিজাইনের উপর সুই-সুতা দিয়ে নিপুণভাবে হাতে নকশি কাঁথা তৈরি করা হয়। আবার অনেক সময় ক্রেতাদের দেয়া নকশার উপারও কাঁথা প্রস্তুত করেন। বর্তমানে তার স্বামী অসুস্থ থাকায় তার আয়ের টাকাই পরিবার চলে। আগামীতে আরো বৃহৎ পরিসরে নকশি কাঁথা তৈরির পরিকল্পনার কথা জানান তিনি।

সেলিনা আক্তারের মেয়ে ইসরাত জাহান মিম বলেন, তিনি ভোলা সরকারি মহিলা কলেজে অনার্সে পড়ছেন। লেখা পড়ার পাশাপাশি তিনি মায়ের কাজে সহায়তা করেন। এখন তাদের পরিবারে স্বচ্ছলতা ফিরে এসেছে। তারা অনেক ভালো আছেন।

এ ব্যাপারে ভোলা পৌরসভার প্যানেল মেয়র সালাউদ্দিন লিংকন সেলিনা আক্তার এ  উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই। একজন সফল নারী উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন তিনি। বিভিন্ন প্রতিক’লতার সাথে লড়াই করে তিনি আজ ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। তার নকশি কাঁথা তৈরির সফলতা দেখে অনেক নারীই এখন এ কাজে নিজেকে সম্পৃক্ত করতে চান।

জেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের উপ পরিচালক মো. ইকবাল হোসেন এ প্রতিবেদককে বলেন, সেলিনা আক্তার একজন সফল নারী উদ্যোক্তা। তার নকশি কাঁথার নকশা ও মান অনেক উন্নত। তার অধীনে কাজ করে অনেক নারীর কর্ম সংস্থানের পথ সৃষ্টি হয়েছে।

সেলিনা আক্তারকে এবছর অর্থনৈতিকভাবে সাফল্য অর্জনকারী নারীর ক্যাটাগরিতে জেলা পর্যায়ে জয়িতা হিসাবে মনোনীত করা হয়েছে। মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর তাকে সব ধরনের পরামর্শের আশ্বাস  দেন তিনি।

এইচআর

Link copied!