Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪,

গাজীপুরে ট্রেন দুর্ঘটনা

গ্রামের নিরপারধ ব্যক্তিদের হয়রানি থেকে মুক্তি চান এলাকাবাসী

মাসুদ রানা, শ্রীপুর (গাজীপুর)

মাসুদ রানা, শ্রীপুর (গাজীপুর)

ডিসেম্বর ১৫, ২০২৩, ০৫:৩৯ পিএম


গ্রামের নিরপারধ ব্যক্তিদের হয়রানি থেকে মুক্তি চান এলাকাবাসী

গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার প্রহ্লাদপুর ইউনিয়নের বনখড়িয়া (চিলাই ব্রিজ) এলাকায় ট্রেন দুর্ঘটনার তৃতীয় দিনেও রেল লাইন সংস্কারের কাজ করতে দেখা গেছে রেলওয়ের প্রেকৌশল বিভাগের কর্মচারীদের। তাদের পাশাপাশি ঘটনার তদন্তের দায়িত্বে থাকা বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসছেন।

তারা কথা বলছেন, স্থানীয় লোকদের সঙ্গে। চেষ্টা করছেন প্রকৃত দোষীদের শনাক্ত করতে। স্থানীয়রা বলছেন ২০১৪ সালে দুর্ঘটনাস্থল থেকে দেড় কিলোমিটার উত্তরে এমন আরেকটি ঘটনা ঘটেছিল। তবে দু’একটি গণমাধ্যমে এ ঘটনায় বনখড়িয়া গ্রাম পুরুষ শূণ্যর সংবাদে স্থানীয়রা ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

তারা বলছেন, ঘটনাটি খুবই আতঙ্কের হলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বা তদন্তকারী কর্মকর্তরা গ্রামের কাউকেই হয়রানি করছে না এবং প্রত্যেক বাড়ির পুরুষ সদস্যরা তাদের বাড়িতে থেকে নিয়মিত দৈনন্দিন কাজ করে যাচ্ছেন। দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত প্রায় আধা কিলোমিটার অংশে সব ট্রেনের গতি নিয়ন্ত্রণে একেবারেই ধীর গতিতে ট্রেন চালানো হচ্ছে। শুক্রবার (১৫ ডিসেম্বর) সকাল ১০টায় সরেজমিন ঘটনাস্থল পরিদর্শনে এসব চিত্র দেখা যায়।

সকাল সাড়ে ৯টায় বনখড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে দাঁড়িয়ে গায়ে রোদ লাগাচ্ছিলেন কৃষক আবুল হোসেন ও আকতার হোসেন। বুধবার ভোরে চিলাই ব্রিজ সংলগ্ন স্থানে মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেন দুর্ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে সাংবাদিক পরিচয়ে ক্ষেপে যান।

তারা বলেন, আমরা আমাদের বাড়িতেই অবস্থান করছি। অথচ আপনারা (সাংবাদিকেরা) লিখেছেন বনখড়িয়া গ্রাম পুরুষ শূণ্য। তবে এ ঘটনা যারা ঘটিয়েছেন তাদের চিহ্নিত করে কঠিন বিচারের দাবি জানান দুই কৃষক।

তারা বলেন, চলমান অবরোধের প্রথম দিকে দুষ্কিৃতিকারীরা স্কুল থেকে এক কিলোমিটার দূরে রেললাইনে টায়ার জ্বালিয়ে আগুণ দিতে শুনেছেন। তখন কোন দুর্ঘটনা ঘটার আগেই পুলিশ এসে পড়লে তারা পালিয়ে যায়।

দুর্ঘটনার পাশেই নিচু জমিতে (ধান ক্ষেত) ধান কাটছিলেন কৃষক মহির উদ্দিন। তিনি বলেন, আমরা বাড়িতে বসবাস করতেছি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বা এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে কেউ আমাদের কোনো সমস্যা করছে না। এতো বড় ঘটনায় আমারা ভয় পেয়েছি। ঘটনা দেখার পর থকে মনে হলেই আমরা আতঙ্কিত হয়ে পড়ি। যদি ট্রেনটি চিলাই ব্রিজের ওপর উঠে যেতো তাহলে অনেক যাত্রী মারা যেতো। ঘটনার পর থেকে ২৪ ঘণ্টা পুলিশের নিরাপত্তা রয়েছে এ গ্রামে।

গ্রামের বাসিন্দা সাইদুল ইসলাম। তিনি স্থানীয় টোবাকো সিগারেট কারখানায় চাকরি করেন। শুক্রবার অফিস বন্ধ থাকায় তিনি বাড়িতেই অবস্থান করছেন। তিনি ও তার পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা জানান, আমরা পরিবারের সবাই চাকরির করি। ঘটনার দিন আমরা সকলেই অফিসে ছিলাম। অফিসে যাওয়ার পর শুনতে পাই চিলাই ব্রিজের কাছে ট্রেন পড়ে গেছে। এছাড়া আমরা আর কিছু জানি না।

বনখড়িয়া জামে সজিদের ইমাম নাজমুল আলম বলেন, যারা অপরাধী তাদের সমস্যা। আমাদের কোনো সমস্যা হচ্ছে না। মুসুল্লীরা নিয়মিত মসজিদে আসছে। এ এলাকার বেশিরভাগ মানুষ কৃষক ও খেটে খাওয়া শ্রমিক। তারা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা না। অন্য কোন এলাকা থেকে দুষ্কৃতিকারীরা এখানে এসে ঘটনাটি ঘটিয়ে থাকতে পারে।

বাড়িতে ধান শুকাচ্ছিলেন গৃহিনী নাসিমা আক্তার। তার সঙ্গে কথা হলে জানান, এখনো আশপাশের এলাকা থেকে নারী-পুরুষ যুবকেরা ঘটনাস্থলে দেখতে আসে। এ ঘটনাটি যারা করেছে সঠিক তদন্তের মাধ্যেমে তাদের চিহ্নিত করে কঠিন বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান। কোনো নিরপারাধ মায়ের সন্তান যেনো বিনা অপরাধে হয়রানির শিকার না হয়। আমরাও ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিচার চাই। এমন বিচার করা হোক যেন ভবিষ্যতে আর কেউ এ ধরনের ঘটনা ঘটাতে সাহস না করে।

ঘটনাস্থলে কর্তব্যরত বাংলাদেশ রেলওয়ে নিরাপত্তা বহিনীর সদস্য সিপাহী দেলোয়ার হোসেন বলেন, তারা ৮ সদস্যের একটি টিম ২৪ ঘণ্টা কর্তব্য পালন করছেন। কোনো রকম ছামিয়ানা (তাবু ছাড়া) রেল রাইনের পাশের নিচু ঝোপঝাড়ে (জঙ্গলে) কেউ দাঁড়িয়ে, কেউ বসে এবং কেউ হাঁটাহাটি করে দায়িত্ব পালন করছেন।

বাংলাদেশ রেলওয়ে প্রোকৌশল বিভাগের দুর্ঘটনাস্থলে দায়িত্বে থাকা (রেঞ্জ-৩) ফারুক হোসেন বলেন, আমাদের রেল বিভাগ থেকে ৪ জন এবং মাস্টার রোলের ৯ জনসহ মোট ১৩ জন রেললাইন সংস্কারে দিনরাত কাজ করে যাচ্ছি।

মামলার বাদী বাংলাদেশ রেলওয়ের উর্ধ্বতন উপ-সহকারী প্রকৌশলী অশ্রাফুল আলম খাঁন জানান, এ ঘটনায় উক্ত ট্রেনের যাত্রী ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার মৃত মোখলেছের আসলাম (৩৫) ঘটনাস্থলে নিহত হয়। ট্রেনের এলএম এমদাদুল হক, সহকারী এলএম সবুজ মিয়া, গার্ড বায়েজীদ ভূঁইয়াসহ প্রায় ১০ জন আহত হয়।

দুর্ঘটনাস্থলে আসা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জয়দেবপুর রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ উপ-পরিদর্শক (এসআই) শহিদুল ইসলাম বলেন, এ ঘটনায় এখনো পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার এবং জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়নি।

দুপুর ১২টায় ট্রেন দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসেন বাংলাদেশ রেলওয়ে পুলিশ (ঢাকা অঞ্চল) সহকারি পুলিশ সুপার (এএসপি) মাজহারুল হক। তিনি বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আমরা কাজ করছি। আমাদের সাথে বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও সম্মিললিতভাবে ঘটনার সাথে জড়িতদের চিহ্নিত করতে কাজ করছে। কোনো নিরিহ ব্যক্তি যেন হয়রানির শিকার না হয় সেদিকটাও আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি।

এআরএস

Link copied!