নজরল ইসলাম মুকুল, কুুষ্টিয়া
জানুয়ারি ৯, ২০২৪, ০৫:২৯ পিএম
নজরল ইসলাম মুকুল, কুুষ্টিয়া
জানুয়ারি ৯, ২০২৪, ০৫:২৯ পিএম
গত ১৫ বছর ধরে কুষ্টিয়া-২ আসনে টানা সংসদ সদস্য থাকলেও জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু নিজ দলকে সংগঠিত করতে পারেননি। পাশপাশি ক্ষমতাসীন মূল সংগঠন আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পর্কের ভীত মজবুত করার চেয়ে হামলা-মামলায় দুই দলের নেতাদের ঐক্য ফাটল ধরে। যার প্রভাব পড়েছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে।
প্রচার-প্রচারনায় পিছিয়ে পড়া ইনু শেষ পর্যন্ত স্বতন্ত্র প্রার্থী কামারুলের কাছে ধরাশয়ী হয়েছে ২৪ হাজার ভোটের ব্যবধানে। স্থানীয় জাসদের নেতা-কর্মিরা ছাড়াও আওয়ামী লীগের নেতাদের সাথে কথা বলে এমন তথ্য মিলিছে। ভেড়ামারা উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান হাজী আক্তারুজ্জামান মিঠু বলেন, জাসদ ও ইনু আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মিদের বাঁকা চোখে দেখেছেন। তারা প্রতিপক্ষ ভেবে অত্যাচার নির্যাতন হত্যা করেছেন।
এই নির্বাচনে যার ফলাফল ইনু পেয়েছেন। ২০ পয়সার গরম দেখানো ইনু ৮০ পয়সার সমর্থন না পেয়ে এবার হেরেছেন। ভোটের তথ্য হিসেবে করে দেখা গেছে নিজ উপজেলা ভেড়ামারায় হাসানুল হক ইনু ভোটে জয়ী হতে পারেননি। ভেড়ামারায় হাসানুল হক ইনু পেয়েছেন ৩৬ হাজার ৭৩১ ভোট আর স্বতন্ত্র প্রার্থী কামারুল আরেফিন পেয়েছেন ৪১ হাজার ২৮২ ভোট। ভেড়ামারায় ইনুর ভোট কম পাওয়ার কারন হিসেবে বেশ কয়েকটি কারণ জানা গেছে। এর মধ্যে ভেড়ামারায় গত দুই বছরে জাসদ নেতা-কর্মিদের হাতে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের দুই নেতা হত্যা শিকার হয়েছে। মামলা-হামলা দিয়ে বাড়ি-ঘর লুটপাট করা হয়েছে। একই সাথে স্থানীয় আধিপত্য নিয়ে ক্ষমতাসীন দলের সাথে স্থানীয় জাসদ নেতা-কর্মিরা ছাড়াও ইনুর দুরুত্ব বেড়ে যায়। এর জের পড়েছে নির্বাচনের মাঠে।
২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে বিরোধ মিটিয়ে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মিরা নির্বাচন করলেও এবার এ উপজেলার সব পর্যায়ের নেতা-কর্মিরা ইনু বিরোধী অবস্থান নিলে দৃশ্যপট বদলে যায়। কামারুলের পক্ষে অবস্থান নেয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মিরা। এ কারনে ভেড়ামারায় নিজ বাড়িতে ভোটে পিছিয়ে পড়েছে ইনু। প্রায় ৪ হাজার ভোটের ব্যবধানে ভেড়ামারায় পিছিয়ে থাকে। মিরপুরে এ ব্যবধান আরো বেশি। কামারুল আরেফিন মিরপুরে জনপ্রিয় উপজেলা চেয়ারম্যান ছিলেন। পদত্যাগ করে স্বতস্ত্র নির্বাচন করেন। পরপর দুই দফায় উপজেলা চেয়ারম্যান ছাড়াও ইউপি চেয়ারম্যানও ছিলেন একবার।
ইনু ও জাসদ বিরোধী হিসেবে দলে পরিচিত কামারুল আরেফিন। রাজনীতির মাঠে জনপ্রিয় কামারুল প্রার্থী মিরপুরের জাসদ নেতা-কর্মিরা চুপসে যান। কামারুলের ট্রাকে উঠে পড়েন সব নেতা-কর্মি। এমনকি ইনু মন্ত্রী ও এমপি থাকাকালীন তার সমর্থন নিয়ে ইউপি চেয়ারম্যান হয়েছে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছিলেন এমন বেশ কয়েকজন কামারুলের পক্ষে ভীড়ে যায়। এছাড়া কামারুল মিরপুরের সন্তান হিসেবে স্থানীয় বিএনপির সাধারন নেতা-কর্মিদের সমর্থন পেয়ে যান। এসব কারনে ভোটের মাঠে পিছিয়ে পড়েন ইনু। শেষ দিকে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের হাতে গোনা কয়েকজন নেতা ইনুকে সমর্থন দিয়ে ভোট করলে ব্যবধান কমা ছাড়া জয়ী হওয়ার মত ভোট তার বাক্সে পড়েনি।
মিরপুরে কামারুল আরেফিন পেয়েছেন ৭৪ হাজার ৫১৭ ভোট। দুই উপজেলা মিলিয়ে ১ লাখ ১৫ হাজার ভোট ৭৯৯ ভোট পেয়ে এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। আর ইনু পেয়েছেন ৫৫ হাজার ৭৩৪ ভোট। তবে ২০১৮ সালের নির্বাচনে ইনুর ভোট পাই ২ লাখেরও অনেক বেশি। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের সমর্থন নিয়ে বিপুল ভোটে এমপি হন। ২০১৪ সালে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় জয়ী হন। তার আগে ১৯৯১ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত পরাজিত হন মশাল নিয়ে নির্বাচন করে। কামারুল আরেফিন বলেন,‘ ভোট সুষ্ঠু ও অবাধ হয়েছে। উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট দিয়েছে মানুষ।
ভেড়ামারা-মিরপুরের মানুষ সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে রায় দিয়েছে। সন্ত্রাস-মাদক দুরে করে শান্তির এলাকা হিসেবে গড়ে তোলা হবে এ আসনকে। ইনুকে মানুষে লাল কার্ড দেখিয়েছে। মানুষ জাসদের শাসনকে এ এলাকায় আর দেখতে চাই না। প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই ভালো নির্বাচন উপহার দেওয়ার জন্য।’
কুষ্টিয়া জেলা জাসদ সভাপতি গোলাম মহসিন বলেন,‘ নির্বাচন মোটামুটি ভাল হয়েছে, তারপরও কিছু কেন্দ্র নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে বলে আমরা জানতে পেরেছি। ইনু ভাই নৌকা প্রতীক পেলেও আওয়ামী লীগের বড় অংশ তার পক্ষে নির্বাচনের মাঠে ছিল না। তাই ফলাফল এমন হয়েছে আমরা মনে করছি। আওয়ামী লীগ বড় দল, তাদের ভোট রয়েছে। সেই ভোট কামারুল পেয়েছে।’
এদিকে জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু সাংবাদিকদের বলেন,‘ জনগনের রায় মেনে নিয়েছি। দলগতভাবে আলোচনা করে পরবর্তি বিষয়ে আমাদের করনীয় ঠিক করব।’
আরএস