Amar Sangbad
ঢাকা রবিবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪,

তীব্র শীতে জনজীবন বিপর্যস্ত

‘চরত কায়েও কম্বল দেয় না’

মো. সাইফুল ইসলাম, কাউনিয়া (রংপুর)

মো. সাইফুল ইসলাম, কাউনিয়া (রংপুর)

জানুয়ারি ১১, ২০২৪, ০৪:৫৩ পিএম


‘চরত কায়েও কম্বল দেয় না’
ছবি: আমার সংবাদ

মাঘের শীতে বাঘ কাঁদে- গ্রামবাংলায় প্রচলিত এ প্রবাদ ভেঙ্গে এবার পৌষের শুরুতেই হাড় কাঁপানো শীত রংপুরের কাউনিয়ায় জেঁকে বসেছে। সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দিনভর পথঘাট ঘন কুয়াশার চাদরে ঢেকে থাকায় দৈনন্দিন জীবনযাত্রা আরও বিপর্যস্ত করে তুলেছে। শীতের কারণে স্বাভাবিক কর্মকান্ডে স্থবিরতা বিশেষ করে নিম্নআয়ের শ্রমজীবী মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছে। শৈতপ্রবাহের কারণে শ্রমজীবীদের দুর্ভোগের সৃষ্টি হয়েছে।

সরেজমিনে তিস্তার চরাঞ্চলসহ বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখে গেছে, সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সূর্যের মুখ দেখা যায়নি। শৈতপ্রবাহ ও ঘন কুয়াশা এবং কনকনে ঠান্ডায় জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। চরম দুর্ভোগে পড়েছে ছিন্নমূল ও খেটে খাওয়া মানুষ গুলো। তীব্র শীতে অনেকে প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হচ্ছেন না। এরপরও জীবিকার তাগিদে শ্রমজীবীরা শীত উপেক্ষা তিস্তার চরে আলু ক্ষেতে কাজ করছে।

আলু ক্ষেতে কাজ করা শ্রমজীবী খইমুদ্দিন জানান, ‘হামারগুলোর শীত আর গরম আছে বাহে, পেটের তাগিতে কাম হামাক করাই নাগে। হামার গুলোর খবর কায় রাখে, শীতোত হামরা মরি যাই, চরত কায়েও কম্বল দেয় না, হামরা চরের মানুষ খড়কুটো জালেয়া ছাওয়া পোয়া নিয়া আগুন পোহাই। শীতত কাম-কাজে খুব অসুবিধা হয়। শীত কে উপেক্ষা করে চরের অনেকেই কাজের সন্ধানে বের হয়েছেন কিন্তু তীব্র শীতের কারনে কাজ পাননি।’

ঢুসমারা চরের কোব্বাত আলী জানান, দিনের তুলনায় রাতে শীত কয়েক বেশী। অনেকেই ঘর থেকে বের হতে পারছেন না। সবচেয়ে বেশি সমস্যায় শিশু ও বয়স্ক মানুষের। ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন অনেকে। দুর্ভোগ বেড়েছে গবাদিপশুরও।

কাউনিয়ায় নিম্নবিত্তের মানুষ শীতবস্ত্রের অভাবে ভীষণ কষ্টে দিন কাটাচ্ছে। ঘন কুয়াশার কারণে বাস, ট্রাক ও অন্যান্য যানবাহন হেড লাইট জ্বালিয়ে চলাচল করছে। 

রিকশা চালক আমিনুল জানান, শীতে বাস চলাচল কম ফলে রিক্সা ও অটো চালকদের আয় কমে গেছে।

শহীদবাগে চাতাল শ্রমিক আনোয়ারা বেগম বলেন, ‘সকাল আর রাতে বেশি ঠান্ডা লাগচ্ছে। দুপুর পর্যন্ত সূর্যের দেখাই নাই। সূর্য না ওঠায় চাতালে কাজ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।’

আলুর বীজ উৎপাদন কারী চাষি তাজরুল ইসলাম জানান, বিএডিসি অধীনে বীজ আলু উৎপাদনের দ্বিতীয় ধাপে রোগিং কাজ করাছি, শীতে শ্রমিকদের খুব কষ্ট হচ্ছে।

আবহাওয়াবিদরা জানান, উত্তরের কনকনে হিম বয়ে আনা বাতাসের কারণে তীব্রশীত অনুভূত হচ্ছে। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা কেউ কেউ শীত উপক্ষো করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গেলেও উপস্থিতির সংখ্যা খুবই কম।

রংপুর আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোস্তাফিজার রহমান জানান, এই অঞ্চলে গত বছরের চেয়ে এ বছর শীতের তীব্রতা অনেক বেশি।

শিক্ষক আ. ছালাম জানান, সরকারিভাবে কিছু শীতবস্ত্র বিতরণ করা হলেও তা চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. আহসান হাবীব সরকার জানান সরকারিভাবে ২ধাপে ৩ হাজার ৫৩০টি কম্বল পেয়েছি, ইউএনও স্যারের সমন্বয়ে তা বিতরণ করা হচ্ছে।

নির্বাহী অফিসার মো. মহিদুল হক জানান, সরকারিভাবে যে কম্বল পাওয়া গেছে তা চেয়ারম্যাদের মাধ্যমে বিতরণ করা হবে।

এআরএস

Link copied!