Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪,

দিনাজপুরে ঝরছে ঝিরিঝিরি কুয়াশা, বিপর্যস্ত জনজীবন

লোটাস আহম্মেদ, ঘোড়াঘাট (দিনাজপুর)

লোটাস আহম্মেদ, ঘোড়াঘাট (দিনাজপুর)

জানুয়ারি ১৩, ২০২৪, ০৩:৩০ পিএম


দিনাজপুরে ঝরছে ঝিরিঝিরি কুয়াশা, বিপর্যস্ত জনজীবন
ঘন কুয়াশার কারণে হেডলাইন জ্বালিয়ে ধীরগতিতে চলছে যানবাহন। ছবিটি আজ সকালে দিনাজপুর-গোবিন্দগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কের নিতাইশা মোড় এলাকা থেকে তোলা। ছবি: আমার সংবাদ

দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে উত্তরাঞ্চলীয় জেলা দিনাজপুরে। শনিবার সকাল ৯টায় এ জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৮ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। একইদিন সকাল ৬টায় এই জেলার তাপমাত্রা ছিল ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বেলা বাড়ার সাথে সাথে কমেছে তাপমাত্রা। গত চারদিন যাবত এই জেলার অধিকাংশ উপজেলায় সূর্যের কোন দেখা মেলেনি।

দিনাজপুর আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের তথ্য অনুযায়ী, শনিবার সকাল ৯টায় সারা দেশের মধ্যে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে এই জেলায়। ওই সময় এই জেলায় বাতাসে আদ্রতা ছিল ৯৭ শতাংশ এবং বাতাসের গতি ছিল ২ নটস। গত ৯ জানুয়ারিতে এই জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১৪ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এরপর থেকে প্রায় প্রতিদিনই কমতে থাকে তাপমাত্রা। এতে বৃদ্ধি পায় শীতের প্রভাব।

এদিকে শীত বাড়ার সাথে সাথে বেড়েছে ঘন কুয়াশা। শুক্রবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ঝিরিঝিরি বৃষ্টির মত কুয়াশা ঝরেছে এই জেলায়। শনিবার সকাল থেকে ঘন কুয়াশার চাদরে ছেয়ে আছে পুরো অঞ্চল। সড়ক মহাসড়ক দিয়ে ধীর গতিতে চলছে যাত্রীবাহী বাস এবং পণ্যবাহী ট্রাকসহ বিভিন্ন যানবাহন। সড়কে ঘন কুয়াশায় গাড়ির হেডলাইট জ্বালিয়ে গাড়ি চালাতে হচ্ছে চালকদের। এছাড়াও ফাঁকা এলাকায় কুয়াশার পরিমাণ বেশি হওয়ায় সড়কের পাশে গাড়ি থামিয়ে কুয়াশার প্রভাব কিছুটা কেটে যাওয়ার অপেক্ষা করতে দেখা গেছে চালকদের।

তীব্র শীতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। বিশেষ করে কৃষক ও শ্রমিকসহ খেটে খাওয়া দিনমজুর মানুষগুলো পড়েছে বিপাকে। তীব্র শীতের প্রভাবে কাজ করতে হিমশিম খাচ্ছে নিম্ন আয়ের মানুষ। 

দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট এবং হাকিমপুর উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, প্রত্যন্ত গ্রামের মানুষরা বাড়ির উঠানে এবং রাস্তার পাশে খড়কুটা এবং শুকনো গাছের খড়ি জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছে। সড়ক-মহাসড়ক গুলোতে ব্যাটারী ও পায়ে চালিত রিক্সা, ভ্যান ও ইজিবাইকসহ অন্যান্য বাহনের সংখ্যা একেবারেই কম।

ঘোড়াঘাট পৌর এলাকার আজাদমোড়ে রিক্সা নিয়ে যাত্রীর অপেক্ষা করছিলেন পঞ্চাশোর্ধ্ব একাব্বর মিয়া। তিনি বলেন, মাঘ মাস আসপার আগেই বাঘের হাঁটু কাপোছে। এই শীতের মোদে বাড়িত থেকে বার হওয়া মানে জীবন যাওয়া। কিন্তু পেটের দায়ে রিক্সা নিয়া আসিচি। জাম্পার পড়িছি। তার উপর কম্বল গায়েত দিছি। তাও শীত লাগোছে।

দিনাজপুর-গোবিন্দগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কের হিলিমোড় নামক স্থানে সারিবদ্ধ ভাবে দাঁড়িয়ে ছিল তিনটি পণ্য বোঝাই ট্রাক। সেখানে থাকা একটি ট্রাকের চালক হাবিবুর রহমান। তিনি বলেন, কুয়াশার কারণে রাস্তার কিছুই দেখা যাচ্ছে না। ঘন কুয়াশায় গাড়ির হেডলাইটেও কাজ হচ্ছে না। নিরুপায় হয়ে দুর্ঘটনা এড়াতে কুয়াশা কিছুটা কেটে যাওয়ার অপেক্ষা করছি।

হাকিমপুর উপজেলার খাট্টাউছনা আদিবাসী পল্লীর নারী বাসিন্দা সাথী মার্ডি। তিনি বলেন, হামরা কৃষি শ্রমিক হিসেবে কাজ করি। দুইদিন থেকে যে শীত পড়িছে। তাই বাড়িত থেকে বের হইনি। শীতের কারণে কাজকাম বন্ধ। সংসার চলে চলেনা। শীতের মোদে ছোলপোল গুলার রোগ বালাই ধরিছে।

এদিকে দিনাজপুর আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান বলেন, আজ (শনিবার) দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে দিনাজপুরে। বেলা বাড়ার সাথে সাথে তাপমাত্রাও কমেছে। এই জেলার উপর দিয়ে মৃদ্যু শৈতপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। যা আরো কয়েকদিন অব্যাহত থাকবে।

এআরএস

Link copied!