আশুলিয়া (ঢাকা) প্রতিনিধি:
ফেব্রুয়ারি ৫, ২০২৪, ১১:৪৭ এএম
আশুলিয়া (ঢাকা) প্রতিনিধি:
ফেব্রুয়ারি ৫, ২০২৪, ১১:৪৭ এএম
বিশ্ব ইজতেমার মাঠে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করতে গিয়ে শরীরের ওপর বাঁশ পড়ে আহত হয় ফিরোজ মন্ডল নামের এক যুবক। প্রাথমিকভাবে আহতের বিষয়টি সামান্য মনে হলেও পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে দেখা যায় মেরুদণ্ডে আঘাত পেয়েছেন ফিরোজ। সেই থেকে শুরু ফিরোজের দুর্বিষহ জীবন।
আহত ফিরোজের গ্রামের বাড়ী বগুড়া জেলার শেরপুর থানাধীন এলাকায়। মাত্র নয় বছর বয়সে তার বাবা মারা যায়। মা অন্যের বাসা কাজ করে তাকে লালন পালন করতে থাকেন। এর কয়েক বছর পর মায়ের কষ্ট সহ্য করতে না পেরে মাকে কিছুটা আর্থিক সহযোগিতার জন্য ২০০৭ সালে ঢাকার আশুলিয়ায় পাড়ি জমান ফিরোজ। শুরু হয় তার কর্মজীবন। পরে ফিরোজ তার মাকেও ঢাকা নিয়ে আসেন। ভালোই চলতে থাকে মা-ছেলের জীবন।
কর্মজীবনের শুরুর পর ২০১১ সালে পারিবারিক ভাবে ময়না খাতুন নামের এক মেয়েকে বিয়ে করেন ফিরোজ।এরপরে শুরু হয় তার সংসার জীবন। বিয়ের বছর খানেক পর তাদের সংসার আলো করে জন্ম নেয় একটি কন্যা সন্তান। ছোট বেলায় বাবা হারানো ফিরোজ কিছুটা সুখের দেখা পায়। কিন্তু সে সুখ তার বেশিদিন স্থায়ী হয় না।
২০১৮ সালের জানুয়ারি মাসে অন্যান্যদের মত একজন স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করতে টংঙ্গীর ইজতেমা মাঠে যান ফিরোজ। কাজের সময় হঠাৎ করে তার শরীরের ওপর একটি বাঁশ পড়ে। এতে আহত হয় ফিরোজ। প্রাথমিকভাবে আহতের বিষয়টি সামান্য মনে হলেও পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে দেখা যায় তিনি মেরুদণ্ডে প্রচুন্ড আঘাত পেয়েছেন।
দীর্ঘদিন বিভিন্ন হাসপাতালে ডাক্তার দেখিয়ে ওষুধ গ্রহণ ও বিশেষ থ্যারাপি গ্রহন করেন ফিরোজ। তাতে কোনো রকম বেঁচে থাকা গেলেও স্বাভাবিক জীবন যাপন করা সম্ভব হয় না। সেই থেকে শুরু হয় ফিরোজের দূর্বিষহ জীবন। এরপরে বাবার রেখে যাওয়া একমাত্র শেষ সম্বল তিন শতাংশ জমি বিক্রি করে চিকিৎসা করেন ফিরোজ। তাতের তিনি সুস্থ হতে পারেননি। এখন চলাচলের মাধ্যম হুইল চেয়ার।
কিছুদিন পরে মা-মেয়েকে গ্রামের বাড়ি পাঠিয়ে দেন ফিরোজ। নিজের স্ত্রী ময়না আক্তার হেলপার হিসেবে চাকরি নেন এক ক্যাপ ফ্যাক্টরীতে। ফিরোজের দিন কাটতে থাকে বাসায়। কিছুদিন পরে অনেক কষ্টে আশুলিয়ার চিত্রশাইল কাঠালতলা বাজার এলাকায় একটি চায়ের দোকান দেন ফিরোজ। এরই মধ্যে কেটে যায় ৫টি বছর।
গত দুই মাস আগে স্ত্রীর চাকরিটিও চলে যায়। এখন একমাত্র চায়ের দোকাননের ওপর ভরসা । কিন্তু চিকিৎসা খরচ তো দূরের কথা এ দিয়ে তো আর সংসারই চলে না। মা-মেয়ের জন্য টাকা পাঠাতে হয়, নিজের জন্য নিয়মিত ওষুধ কিনতে হয়। সংসার খরচ, রুম ভাড়া আর দোকান ভাড়াতো আছেই।
অন্যদিকে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে অনেকটা নিঃস্ব ফিরোজকে ডাক্তাররা জানান তাকে সুস্থ হতে হলে অপারেশন করতে হবে। যাতে করে খরচ হতে পারে দুই থেকে আড়াই লক্ষ টাকা। কিন্তু যার দ্বারা সংসার চালানো সম্ভব হচ্ছে না সে কিভাবে এত টাকা ম্যানেজ করবেন। তাই তো ফিরোজের কপালে এখন শুধু দুশ্চিন্তা ভাজ।
প্রতিদিন সকালে হুইল চেয়ারে করে ফিরোজকে দোকানে দিয়ে যান তার স্ত্রী। আবার রাতের বেলায় নিয়ে যান। অন্যলোক ছাড়া চলাচল করতে পারেন না ফিরোজ। তাই বাধ্য হয়ে ব্যবহার করেন এডাল্ট প্যাম্পাস। সব মিলিয়ে বিশ্ব ইজতেমায় আহত ফিরোজের এখন দর্বিষহ জীবন।
কোনো উপায় না পেয়ে সমাজের বিত্তশালীদের নিকট একটু সহানুভূতি চান ফিরোজ। কিছুটা সহনুভুতি পেলে হয়তো স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবে ফিরোজ। আবার সুখের ছাড়া নামতে পারে ফিরোজের দুঃখের জীবনে।
যদি কোনো হৃদয়বান ব্যক্তি ফিরোজকে একটু সহযোগিতা করতে পারেন তাহলে ০১৭৯১৮২৩৭৩৩ (ফিরোজের ব্যক্তিগত নাম্বার) এই নাম্বারে যোগাযোগ করার জন্য অনুরোধ করা হলো। আপনাদের একটু সহানুভূতি বদলে দিতে পারে ফিরোজের দূর্বিষহ জীবন।
/বিআরইউ