Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪,

এক শিক্ষকেই চলছে প্রাথমিক বিদ্যালয়

মেলান্দহ (জামালপুর) প্রতিনিধি

মেলান্দহ (জামালপুর) প্রতিনিধি

ফেব্রুয়ারি ৯, ২০২৪, ০৫:০৬ পিএম


এক শিক্ষকেই চলছে প্রাথমিক বিদ্যালয়

সময় তখন দুপুর ১২ টা। প্রথম পালার পাঠদান শেষ হয়েছে। দ্বিতীয় পালার পাঠদান শুরু হবে কিছুক্ষণ পরই। শরিফ, শাপলা, নিলুফা, আশরাফুলসহ পঞ্চম শ্রেণির বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ের মাঠে খেলাধুলায় ব্যস্ত। ঘণ্টা বাজার সঙ্গে সঙ্গে তারা ফিরবে শ্রেণিকক্ষে। কিন্তু যে শ্রেণিকক্ষে তারা ফিরবে, সেখানে হয়ত যাবেন না শিক্ষক। তিনটি শ্রেণির জন্য সেখানে আছেন মাত্র একজন শিক্ষক। যিনি আবার প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে রয়েছেন।

বিদ্যালয়টির নাম ৫নং চর রুস্তম আলী মাস্টার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।  সম্প্রতি সরেজমিনে বিদ্যালয়টিতে শিক্ষক–সংকটের এই চিত্র চোখে পড়ে। এটি জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলার নয়ানগর ইউনিয়নের পাঁচ নং চর গ্রামে অবস্থিত। এই স্কুলে মাত্র একজন শিক্ষক দিয়ে চলছে ৫০ জন শিক্ষার্থীর পাঠদান। এতে শিক্ষার গুণগতমান অর্জন তো দূরের কথা, নামমাত্র শিক্ষাও পাচ্ছে না এখানকার শিক্ষার্থীরা। ফলে শিক্ষা সংকটে পড়ছে এই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালে বিদ্যালয়টি সরকারীকরণ হওয়ার পর থেকে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়। শুরু থেকেই প্রধান শিক্ষক শাহ জামাল ও আরেকজন সহকারী শিক্ষক ছিলেন। ২০২২ সালের ডিসেম্বরে সহকারী শিক্ষক বদলি হয়ে চলে যান। এরপরে বিদ্যালয়ে আর কোনো সহকারী শিক্ষক আসেনি। ৪ জন সহকারী শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। বিদ্যালয়ে খাতা কলমে ছয়টি শ্রেণিতে মোট শিক্ষার্থী রয়েছে ৭২ জন। তাদের মধ্যে প্রাক-প্রাথমিকে ১০ জন শিক্ষার্থী, প্রথম শ্রেণিতে ১০ জন, দ্বিতীয় শ্রেণিতে ১২ জন, তৃতীয় শ্রেণিতে ১২ জন, চতুর্থ শ্রেণিতে ১৩ জন ও পঞ্চম শ্রেণিতে ১২ জন শিক্ষার্থী রয়েছে।

সরেজমিন বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, বাইরে থেকে দেখতে ভবনটি খুব সুন্দর চোখে পড়ার মতো। ভবনের শ্রেণিকক্ষগুলো নানা রকম ছবি দিয়ে সুন্দর করে সাজানো গোছানো। দেশের বরেণ্য ব্যক্তিদের নামে প্রতিটি কক্ষের নামকরণ করা হয়েছে। এই বিদ্যালয়ে সবই আছে, অভাব একটাই—সেটি শিক্ষকের। শিক্ষকের পাঁচটি পদের বিপরীতে আছেন একজন। তাঁর নাম মো. শাহ জামাল, যিনি ৬ বছর ধরে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন।

স্কুল ঝাড়ু দেওয়া, দরজা, জানালা খোলা, পতাকা ওঠানো সব দায়িত্ব একাই পালন করছেন। এই বিদ্যালয়ে নেই কোন দপ্তরি বা পিয়ন। ফলে সব দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে চরম বিপাকে পড়ছেন তিনি।

কথা হয় শাহ জামালের সঙ্গে। তিনি বলেন, ২০১৭ সাল থেকে বিদ্যালয়টি একাডেমিক কার্যক্রম শুরু করে অন্য বিদ্যালয় থেকে সাময়িকভাবে প্রেষণে দেওয়া  শিক্ষক দিয়ে।  এর ২০১৮ সালের অক্টোবরে আমি প্রধান শিক্ষক হয়ে এই বিদ্যালয়ে যোগদান করি। আমরা দুইজন শিক্ষক ২০২২ সাল পর্যন্ত মোটামুটি পাঠদান চালিয়ে যায়। ২০২৩ সালের শুরু থেকেই সেই সাময়িকভাবে প্রেষণে দেওয়া  শিক্ষক তার আগের স্কুলে চলে যান। এর পর থেকে এক বছরের বেশি সময় ধরে আমি একাই শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি।  

শাহ জামাল আরও বলেন, প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে থাকায় প্রায়ই তাঁকে দাপ্তরিক বিভিন্ন কাজে উপজেলা সদরে যেতে হয়। শিক্ষক না থাকায় অভিভাবকেরা সন্তানদের এ বিদ্যালয়ে ভর্তি করতে চান না। একসময় এই বিদ্যালয়ে প্রায় প্রায় ২শ ছাত্রছাত্রী থাকলেও শিক্ষক–সংকটের কারণে কমতে কমতে এখন প্রায় ৫০-৬০ জনে ঠেকেছে। অনেক অভিভাবকই ছাড়পত্র নিয়ে যাচ্ছেন। শিক্ষকেরা আসতে চান না মূল কারণ হচ্ছে বিদ্যালয়ে আসার রাস্তাঘাট খুবই খারাপ। এ বিদ্যালয়টি চর অঞ্চল এলাকায়। বর্ষার সময় পায়ে দুই কিলোমিটার হেঁটে স্কুলে আসতে হয়। এসময় মোটরসাইকেল দিয়ে কোনোরকম আসা যায় এছাড়া কোন গাড়ি-ঘোড়া চলে না। বর্তমানে রাস্তার দুই পাশেই ভুট্টা ক্ষেত। রাস্তা দিয়ে একা আসাও ভীতিকর।

এই বিষয়ে বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শরিফ, শাপলা, নিলুফাসহ কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেন, শিক্ষক না থাকায় তাদের ক্লাস ঠিকমতো হয় না। নতুন শিক্ষক নেওয়া হলে তাঁদের লেখাপড়া আরও ভালো হতো।  

এ বিদ্যালয় নিয়ে স্থানীয়রা জানান, গত এক বছর ধরে প্রধান শিক্ষক শাহ জামাল ছাড়া বিদ্যালয়টিতে আর কোনো শিক্ষক নেই। প্রধান শিক্ষক একাই স্কুলের সব কাজ করেন। এ স্কুলটি চর এলাকায়। স্কুলে আসার রাস্তাঘাট একদমই খারাপ। কোনো শিক্ষক স্কুলে আসতে চান না কাঁচা রাস্তা দেখে। বর্ষার সময় পায়ে হেঁটেও চলাচল করা যায় না। তাই কোনো শিক্ষকও এই স্কুলে চাকরি করতে চান না।

বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ডা. আব্দুল মালেক বলেন, বিদ্যালয়টি চর অঞ্চলে হওয়ায় শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার আগে শিক্ষকেরা স্কুল দেখে আর আসতে চান না। কারণ স্কুলে আসার রাস্তাঘাট খুব খারাপ। স্কুলটি চর অঞ্চলে হওয়ায় কোনো শিক্ষকই এই স্কুলে আসতে চান না। আমরা কয়েক দফায় উদ্যোগ নিয়েও ব্যর্থ হয়েছি।  

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলী চকদার বলেন, আমি নতুন এসেছি। আসার পরে বিষয়টি জেনেছি। দুই একদিনের মধ্যেই ডেপুটেশনে আমরা ওই বিদ্যালয়ে শিক্ষক দিয়ে দেব।

এ বিষয়ে জামালপুরের জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এম এম মিজানুর রহমান বলেন, এই বিষয় নিয়ে আমি না জেনে কিছু বলতে পারব না। এ বিষয়ে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কাছ থেকে জানতে হবে । 

এই্চআর
 

Link copied!