নজরুল ইসলাম মুকুল, কুষ্টিয়া
ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০২৪, ০২:০৮ পিএম
নজরুল ইসলাম মুকুল, কুষ্টিয়া
ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০২৪, ০২:০৮ পিএম
পেঁয়াজের মূল্য বৃদ্ধির পাশাপাশি সরকারি প্রণোদনা পেয়ে কুষ্টিয়ার চাষিরা চলতি রবি মৌসুমে শীতকালীন পেঁয়াজ আবাদে ঝুঁকে পড়েছেন। মাঠের পর মাঠজুড়ে আবাদ হয়েছে শীতকালীন পেঁয়াজ।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কুষ্টিয়ার তথ্য অনুযায়ী চলতি মৌসুমে কুষ্টিয়ার ৬টি উপজেলায় ১৪ হাজার ২৪২ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ আবাদ করে দুই লাখ ৫ হাজার ২৫১ মে. টন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। গত বছরে ১২ হাজার ১৩১ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ আবাদ করা হয়। সে তুলনায় চলতি বছর এক হাজার হেক্টর বেশি জমিতে পেঁয়াজ আবাদ হয়েছে।
তবে কৃষকেরা জানায়, কৃষি অফিসের দেয়া তথ্যের চেয়ে বেশি জমিতে পেঁয়াজ আবাদ হয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কুষ্টিয়ার তথ্যে ৬টি উপজেলার কুষ্টিয়া সদরে ২ হাজার ২৪৫ হেক্টর, খোকসা উপজেলায় ২ হাজার ৭৬০ হেক্টর, কুমারখালীতে ৪ হাজার ৮৯০ হেক্টর, মিরপুরে ৩৭৬ হেক্টর, ভেড়ামারায় ১৯৮ হেক্টর ও দৌলতপুর উপজেলায় ২ হাজার ৭৭৩ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ আবাদ করা হয়েছে। রবি মৌসুমে শীতকালীন পেঁয়াজ আবাদ বৃদ্ধি করতে সরকার ৮’শ কৃষককে প্রণোদনা ঋণ প্রদান করেছে। এর মধ্যে কুষ্টিয়া সদরে ১৪০জন, খোকসায় ১৯০ জন, কুমারখালীতে ২৫০ জন, মিরপুরে ৬০ জন, ভেড়ামারায় ৬০ জন ও দৌলতপুরে ১০০ জন কৃষককে এই উপকরণ সহায়তা প্রদান করা হয়েছে।
কুষ্টিয়া জেলার খোকসা, দৌলতপুর ও কুষ্টিয়া সদরে সব চেয়ে বেশি পেঁয়াজ আবাদ করা হয়েছে। খোকসার হিজলাবট গ্রামের চাষি এবাদত মন্ডল জানান, চলতি বছরে পেঁয়াজের দাম ভালো পাওয়ায় পেঁয়াজ কেনা হয়েছে। এভাবে দাম পেলে আগামীতে আরও বেশি জমিতে পেঁয়াজ আবাদ করবেন।
শমসপুরের চাষি আকবর আলী বলেন, সরকারি সহায়তার পাশাপাশি পেঁয়াজের দামও ভালো তাইতো পেঁয়াজ আবাদে আনন্দ পাচ্ছি। এভাবে দাম পেলে আমি যেমন খুশি তেমনি অন্যান্য কৃষকেরাও খুশি।
কুমারখালীর নন্দলালপুরে শমশের মোল্লা বলেন, আমি গত মৌসুমে পেঁয়াজ আবাদ করেছিলাম এক বিঘা জমিতে। চলতি বছর পেঁয়াজের দাম ভালো পাওয়ায় প্রায় দুই বিঘা জমিতে পেঁয়াজ আবাদ করেছি। যদি দাম এভাবে থাকে তাহলে আগামীতে আরো বেশি জমিতে আবাদ করবো বলে পরিকল্পনা আছে।
যদু বয়রার হানিফ নামের এক চাষি বলেন, প্রতিবার পেঁয়াজ আবাদ করে তেমন কোন লাভ হয়না। এবার পেঁয়াজের যে দাম তাতে করে আমরা কিছুটা হলেও লাভবান হবো। তাই চলতি মৌসুমে পেঁয়াজের আবাদ বাড়িয়েছি।
কুষ্টিয়া সদরের জিয়ারখী ইউনিয়নের জালাল নামে এক কৃষক বলেন, পেঁয়াজের দাম বাড়লে কি হবে সার, বীজ, কীটনাশক ও শ্রমিকের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় তেমন লাভ হচ্ছেনা। তার পরেও দাম এ বছর দাম একটু বেশি পাওয়ায় পেঁয়াজ আবাদ করে লাভের মুখ দেখবো বলে মনে করছি।
কমলাপুরের লালন নামের এক চাষি বলেন, প্রতিবিঘা জমিতে ৫০ থেকে ৬০ মন পেঁয়াজ আবাদ হচ্ছে। সার, কীটনাশক, সেচ ও শ্রমিকের মূল্য বেড়ে যাওয়ায় পেঁয়াজ আবাদ করতে মন চায় না। তবুও আমরা চাষি যে কারণেই পেঁয়াজ আবাদ করছি। আমি চলতি মৌসুমে দেড় বিঘা জমিতে পেঁয়াজ চাষ করেছি।
বাড়াদী গ্রামের চাষি ময়েজ মন্ডল বলেন, ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি করা হলে চাষীরা লোকসানে পড়বে। পেঁয়াজের দাম কমে যাবে। চাষিরা পেঁয়াজ আবাদে আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে। আমি এ বছর অপরের জমি লিজ নিয়ে এবং আমার কিছুটা জমিতে পেঁয়াজ আবাদ করেছি। ফলন ভালো হবে বলে মনে হচ্ছে। যদি দাম পড়ে না যায় তা হলে লাভের মুখ দেখবো।
কুমারখালী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বলেন, চলতি শীত মৌসুমে কুমারখালীতেই বেশি পেঁয়াজ আবাদ হয়েছে। চাষিদেরকে পেঁয়াজ আবাদে আগ্রহ সৃষ্টি করতে মাঠ পর্যায় চাষিদেরকে সরকারি সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। এ বছর বাজারে দামও ভালো পেয়েছে। বাজারে দাম যদি ঠিকঠাক থাকে তাহলে চাষীদের পেঁয়াজ আবাদে আর লোকসান হবে না। চাষীরা মনের আনন্দে পেঁয়াজ আবাদ করবে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কুষ্টিয়ার উপপরিচালক ড. আবুল হায়াৎ বলেন, শীতকালীন পেঁয়াজ এ বছর খুবই ভালো হয়েছে। কৃষি অফিসের লক্ষ্যমাত্রাও পূরণ হবে। বাজারে পেঁয়াজের দাম যে হারে বৃদ্ধি পেয়েছে তাতে করে কৃষকরা লাভবান হচ্ছে। পেঁয়াজ আবাদে চাষীরা ঝুঁকেছে। কৃষি অফিসের কর্মকর্তারা সার্বক্ষণিক চাষিদেরকে পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন এবং মাঠে নজর রাখছেন। আবাদে কোনো সমস্যা হলে তাৎক্ষণিক পরামর্শ দিয়ে তার সমাধান করে চলেছে। যে হারে পেঁয়াজ আবাদ বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে করে আগামীতে পেঁয়াজ আমদানি নির্ভরশীল থাকবে না।
এআরএস