Amar Sangbad
ঢাকা রবিবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪,

চাষির সাথে এ কেমন শত্রুতা, বাগান থেকে ৪০০ মণ বরই চুরি

গোসাইরহাট (শরীয়তপুর) প্রতিনিধি

গোসাইরহাট (শরীয়তপুর) প্রতিনিধি

ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০২৪, ০৭:০০ পিএম


চাষির সাথে এ কেমন শত্রুতা, বাগান থেকে ৪০০ মণ বরই চুরি

প্রত্যন্ত গ্রামের একটি বরই ও মাল্টা বাগানের মালিকসহ শ্রমিকরা মামলার আসামি হওয়ায় পুলিশের ভয়ে কয়েকদিন পালিয়ে ছিলেন। বাগান মালিক ও শ্রমিকদের অনুপস্থিতির সুযোগে রাতের আঁধারে ওই বাগানের প্রায় ৪০০ মণ বরই ও মাল্টা চুরি করে নিয়ে গেছে দুর্বৃত্তরা। ঋণ করে বাগানটি করেছিলেন কৃষক সোলায়মান খান। ঋণ ও শ্রমিকদের পারিশ্রমিক কীভাবে পরিশোধ করবেন সেই চিন্তায় কৃষক সোলায়মানের কপালে পড়েছে চিন্তার রেখা।

বৃহস্পতিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) শরীয়তপুরের গোসাইরহাট থানা পুলিশের কাছে বরই ও মাল্টা চুরির অভিযোগ করেছেন বাগানের মালিক কৃষক সোলায়মান খান।

বাগান মালিক ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গোসাইরহাটের নাগেরপাড়া ইউনিয়নের ছোট কালিনগর এলাকায় কৃষক সোলায়মান খান (৩২) তিন একর জমি লিজ নিয়েছিলেন বরই ও মাল্টা বাগান করার জন্য। লিজে নেওয়া জমিতে নিজে ও শ্রমিকদের দিয়ে বরই ও মাল্টা চাষ করেছিলেন তিনি। 

ফলনও এসেছিল বেশ ভালো। কিন্তু স্থানীয় ছোট্ট একটি বিরোধের জেরে গত রোববার (১১ ফেব্রুয়ারি) বাগানের মালিক সোলায়মানসহ কয়েকজনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের হয়। ওই মামলার আসামি হওয়ায় পুলিশের ভয়ে সোমবার থেকে বুধবার পর্যন্ত পালাতক ছিলেন সোলায়মানসহ বাগানের শ্রমিকরা। এই সুযোগে রাতের আঁধারে কে বা কারা সোলায়মানের বাগান থেকে প্রায় ৪০০ মণ বরই ও মাল্টা চুরি করে নিয়ে যায়। 

রাতের আঁধারে বরই ও মাল্টা চুরি করতে গিয়ে দুর্বৃত্তরা কিছু গাছও ভেঙে ফেলে । সোলায়মানের বাগান থেকে চুরি হওয়া বরই ও মাল্টার বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় ১০ লাখ টাকা। কিছুদিন আগে সোলায়মান খান ওষুধ ও সার কোম্পানি থেকে বাকিতে ওষুধ ও সার এনেছিলেন, যা বরই ও মাল্টা বিক্রি করে পরিশোধ করার কথা ছিল। কিন্তু এখন জমির লিজের টাকা, ওষুধ ও সারের টাকা কীভাবে পরিশোধ করবেন সেই চিন্তায় তার কপালে চিন্তার রেখা দেখা দিয়েছে।

এনামুল খান সোলায়মান খানের ভাই। তিনি বলেন, মামলার ভয়ে আমরা পালিয়ে ছিলাম। কে বা কারা আমাদের অনুপস্থিতির সুযোগে বাগান থেকে বরই ও মাল্টা নিয়ে গেছে। থানায় অভিযোগ করা হয়েছে। পুলিশ সুষ্ঠু ভাবে তদন্ত করে চোর শনাক্ত করতে পারবে। যারা আমার ভাইকে পথে বসিয়েছে, তাদের উপযুক্ত শাস্তি চাই আমি।

বাগানে শ্রমিকের কাজ করতেন আবু বকর। তিনি বলেন, বাগানটিতে কাজ করে যে পারিশ্রমিক পেতাম, তা দিয়েই সংসার চলত। বাগানের সব বরই ও মাল্টা কারা যেন চুরি করে নিয়ে গেছে। মালিক এখন আমাদের পারিশ্রমিক দিবেন কীভাবে ? আমাদের অনেক কষ্ট হবে।

বাগানের মালিক সোলায়মান খান বলেন, মিথ্যা একটি মামলার ভয়ে পালিয়ে ছিলাম। এই সুযোগে বাগানের প্রায় ৪০০ মণ বরই ও মাল্টা চুরি হয়ে গেছে। চুরি যাওয়া বরই ও মাল্টার বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় ১০ লাখ টাকা। বাগানের জন্য ওষুধ ও সার বাকিতে এনেছিলাম, জমি লিজ নিয়েছিলাম, শ্রমিকরা সারা বছর কাজ করেছে। আশা ছিল বরই ও মাল্টা বিক্রি করে লাভবান হবো। কিন্তু আমার সব শেষ হয়ে গেল। এখন আমি কীভাবে ঋণ শোধ করব, সেই চিন্তায় আছি। থানা পুলিশের কাছে আমি অভিযোগ করেছি।

নাগেরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হক বলেন, বাগানের বরই ও মাল্টা চুরি যাওয়া দুঃখজনক। সোলায়মান আমাকে ঘটনাটি জানিয়েছিল। পুলিশের কাছে আমার দাবি, যারা এই কাজ করেছে, তাদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হোক।

গোসাইরহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) পুষ্পেন দেবনাথ বলেন, বরই ও মাল্টা চুরির ঘটনায় একটি অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের আইনের আওতায় আনা হবে।

এইচআর

Link copied!