সালথা (ফরিদপুর) প্রতিনিধি
ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০২৪, ০৬:০৭ পিএম
সালথা (ফরিদপুর) প্রতিনিধি
ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০২৪, ০৬:০৭ পিএম
ফরিদপুরের সালথায় শুরু হয়েছে হজরত শাহ সুফি মওলানা খাজা মদন হাজী আল কাদরি আল চিশতি (র.) এর ১৩৭তম ওরশ শরীফ। ওরস শরীফকে কেন্দ্র করে প্রতিবছর হাজী বাড়ির আঙ্গিনায় তিন দিনব্যাপী চলে জমজমাট মেলা। তবে অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে এ বছর চলছে অশ্লীল নৃত্যের রমরমা ব্যবসা।
দুপুর থেকে শুরু হয়ে চলেছে গভীর রাত পর্যন্ত। পাশাপাশি থেমে থেমে চলে মাদক ও জুয়া। অশ্লীল নৃত্য নিয়ে স্থানীয় ও আগত ভক্তবৃন্দের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, হজরত শাহ সুফি মওলানা খাজা মদন হাজী আল কাদরি আল চিশতি (র.) একজন কামিল ও আল্লাহ ওয়ালা লোক ছিলেন। তার আধ্যাত্মিক জ্ঞান চারিদিকে ছড়িয়ে পড়লে দেশ বিদেশের বিভিন্ন স্থান থেকে লোক আসতে থাকে। ভক্তদের কথা চিন্তা করে হজরত শাহ সুফি খাজা মদন হাজী বছরের মাঘী পূর্ণিমাতে একটানা তিনদিন ওরশের ঘোষণা দেন।
এ সময় বিভিন্ন এলাকা থেকে ভক্তরা এখানে আসে, জিকির-আসকার, মিলাদ-কিয়াম ও ওয়াজ নসিহতসহ বিভিন্ন ধর্মীয় হুকুম পালন করেন। ভক্তদের আগমনে হাজী বাড়ির মাঠে বসে বিশাল মেলা।
হজরত শাহ সুফি মওলানা খাজা মদন হাজী আল কাদরি আল চিশতি (র.) এর মৃত্যুর পর তার বংশধরেরা এই কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। মেলায় খাদ্যসামগ্রী থেকে শুরু করে ঘর সাজানোর আসবাবপত্র, কসমেটিকসহ নানা রকম জিনিসপত্র পাওয়া যায়। তবে অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে মেলা কমিটি এবছর পুতুল নাচ বা ভূতের ঘরের শো নামে এক অশ্লীল নৃত্যের ব্যবস্থা করেছে। সেখানে ৫০/১০০ টাকা নিয়ে আধা ঘণ্টা থেকে ১ঘন্টা ব্যাপী শো চলে। বিভিন্ন শো’র ফাঁকে ফাঁকে যুবতীদের দিয়ে করানো হয় অশ্লীল নৃত্য। উচ্চশব্দে চলা এই নৃত্য দেখতে বাচ্চা থেকে বুড়ো সবাই ভিড় করে।
খোলা মেলা পোশাক আর অশ্লীল অঙ্গ ভঙ্গির এই শোতে কাওকে মোবাইলে ছবি বা ভিডিও করতে দেওয়া হয় না। উচ্চ শব্দে মেলার মাইক চালানোর কারণে এসএসসি পরিক্ষার্থীসহ স্থানীয় শিক্ষার্থীদের সমস্যা হচ্ছে। অনেকেই আবার গোপনে শো দেখতে ভিড় করছেন।
মেলার আশপাশে থেমে থেমে চলে জুয়া ও মাদকের আসর। পুলিশ আসলে সাময়িক বন্ধ থাকলেও পুলিশ গেলে আবার চলে। মেলার খরচ দেখিয়ে দোকানিদের থেকে স্টল ভেদে নেওয়া হচ্ছে টাকা। তাছাড়া লাইটিংয়ের জন্য বাতি প্রতি নেওয়া হচ্ছে ১০০ থেকে ৩০০ টাকা। টাকার পরিমাণ কম হলেই দোকানীদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করা হয়।
স্থানীয় বয়স্ক আবুল বাসার মোল্যা জানান, হজরত শাহ সুফি খাজা মদন হাজী একজন কামিল পীর। অতীতে এই মেলায় এমন অশ্লীল কাজকর্ম করার সাহস কেউ করে নাই। এই অশ্লীলতার জন্য হাজী বাড়ির ইতিহাস ঐতিহ্য নষ্ট হচ্ছে। উচ্চশব্দে মাইক চালানোর কারণে শব্দ দূষণ হচ্ছে। এই পুতুল নাচের কারণে আমাদের উঠতি বয়সের সন্তানেরা অশ্লীলতা ও ইভটিজিংয়ের মতো নষ্টামির দিকে ধাবিত হবে। তাছাড়া জুয়া ও মাদকের কারণে যুবসমাজ নষ্ট হচ্ছে।
হজরত শাহ সুফি মওলানা খাজা মদন হাজী আল কাদরি আল চিশতি (র.) এর বংশধর শাহ কামাল উদ্দিন বলেন, আমরা থানাসহ সবজায়গাতেই বলেছি, ওরশ উপলক্ষ্যে কোন অশ্লীল নৃত্য বা বেআইনি কাজ চলবে না। যদি কেউ মাদক বা জুয়ায় জড়িয়ে পরে তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আমি সবাইকে অনুরোধ জানাই। মেলা খাজনা বাবদ কিছু খরচ নেওয়া হয়। খরচ মিটিয়ে আমরা কিছু অর্থ নেই।
মাঝারদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আফছার মাতুব্বর বলেন, মেলার আশপাশের স্থানীয় লোকজন বেশি ভালো না। তাই আমরা ওই মেলা বাজারে যাই না। তবে মেলায় অনেক কিছুই হচ্ছে, আমি জানতে পরেছি। আমি চাই সকল খারাপ কাজ বন্ধ হোক।
স্থানীয় ইউপি সদস্য উপজেলা কৃষকলীগ নেতা নুর আলম মাতুব্বর বলেন, মেলা ঘিরে জুয়া ও মাদকের ছড়াছড়ি। তাছাড়া টিন দিয়ে ঘিরে মেলা যে অশ্লীল নৃত্য তা মেনে নেওয়া যায় না।
মেলা আয়োজক কমিটির অন্যতম সদস্য রাজু আহমেদ উজ্জ্বল বলেন, অশ্লীল নৃত্যের বিষয়ে আমি কিছু জানি না, তবে গতকাল মেলার পাশে জুয়ার আসর বসলে আমি দাবড়িয়ে দেই। মেলা অশ্লীল কাজসহ যেকোনো বেআইনি কাজের বিপক্ষে আমি আছি।
সালথা থানার এসআই মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, আমরা খবর পাওয়া মাত্রই নৃত্য বন্ধ করা হয়েছে। মেলা প্রাঙ্গণে সালথা থানা পুলিশের টিম পোশাকে ও সাদা পোশাকে দায়িত্বরত আছে। যেকোনো বেআইনি কাজ বন্ধে আমরা বদ্ধ পরিকর।
সালথা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আনিছুর রহমান বালী বলেন, তাদেরকে জেলা প্রশাসক থেকে অনুমতি সাপেক্ষে মেলা আয়োজন করতে পারবে মর্মে জানানো হয়েছে। অনুমতি না থাকলে মেলা বন্ধ করে দেওয়া হবে। মেলায় অশ্লীল বা বেআইনি কোন কিছু হলে আয়োজনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
ইএইচ