ফেনী প্রতিনিধি
ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০২৪, ০৬:৩৪ পিএম
ফেনী প্রতিনিধি
ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০২৪, ০৬:৩৪ পিএম
‘পদার্থ বিজ্ঞানের ব্যাকরণ গণিত হলে গণিতের ব্যাকরণ কী? আমরা যখন সময়ের বিয়োগ করি, তখন সময়ের ভিন্নতা হয় কেন? টিকটিকি কেন দেয়ালে ঝুলে থাকে। ২+২= ৫ কখন হয়’। এভাবে নানা ধরনের গণিত ও বিজ্ঞান নিয়ে শিক্ষার্থীদের প্রশ্নে জমে উঠে ফেনীতে গণিত উৎসবের আসর।
শনিবার আঞ্চলিক গণিত উৎসব খাগড়াছড়ির পাহাড়ি শিক্ষার্থী ফেনী, নোয়াখালী ও লক্ষীপুরের সমতল ভূমির সব ধরনের ক্ষুদে গণিতবিদদের উপস্থিতিতে আনন্দমুখর হয়ে ওঠে জেলার শতবর্ষী শিক্ষাঙ্গণ ফেনী সরকারি কলেজ।
এর আগে খাগড়াছড়ির দুর্গম অঞ্চল দিঘীনালা উপজেলা থেকে গত শুক্রবার বিকালে ফেনী এসে রাত কাটান সুপর্ণা চাকমা। সকাল ৮টায় বাবার সঙ্গে কলেজ মাঠে হাজির হয়।
অপরদিকে শত কিলোমিটার দূরে লক্ষীপুরের প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চল থেকে গণিত উৎসব ও গণিত প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে ফেনী সরকারি কলেজ মাঠে সকাল পৌনে ৯টায় উপস্থিত হয় আবুল কশেম নামে এক স্কুল শিক্ষার্থী।
সকাল ৮টা থেকেই কলেজ আঙিনা ক্ষুদে গণিতবিদদের পদচারণায় মুখর হয়ে ওঠে। ৯টায় আগেই মাঠ পরিপূর্ণ হয়ে যায়। ঠিক সোয়া ৯টায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শুরু হয়।
প্রাইমারি, জুনিয়র, সেকেন্ডারি ও হাইয়ার সেকেন্ডারি এ চার ক্যাটাগরির ক্ষুদে গণিতবিদরা সারিবদ্ধ হয়ে মাঠে দাঁড়িয়ে যায়। জাতীয় সংগীত, জাতীয় পতাকা, বাংলাদেশ গণিত অলিম্পয়াডের পতাকা ও আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়ার্ডের পতাকা উত্তোলনের মধ্যদিয়ে শুরু হয় গণিত উৎসবের ফেনী অঞ্চল পর্ব।
এতে ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর ও খাগড়াছড়ি জেলার প্রায় চারশ ৮০ জন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে।
‘গণিত শেখো, স্বপ্ন দেখ ‘ এ শ্লোগানকে ধারণ করে ডাচ-বাংলা ব্যাংক লিমিটেডের পৃষ্ঠপোষকতায় ও প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটি এ উৎসবের আয়োজন করে।
উৎসবের উদ্বোধনী পর্বে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন ফেনীর স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক গোলাম মোহাম্মদ বাতেন।
আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডের পতাকা উত্তোলন করেন ফেনী সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মোহাম্মদ মোক্তার হোসেইন এবং বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াডের পতাকা উত্তোলন করেন ডাচ বাংলা ব্যাংক লিমিটেড ফেনীর ব্যবস্থাপক একেএম রায়হান কাউসার।
পরে উৎসবের উদ্বোধন ঘোষণা করেন ফেনীর স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক গোলাম মোহাম্মদ বাতেন।
এ সময় শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন- গণিত অলিম্পিয়াড বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের গণিত প্রেমে উদ্বুদ্ধ করে। তারা দেশে-বিদেশে আলো ছড়াবে। আগামীতে আমাদের রোবোটিক ও জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ার তৈরিতে সহায়তা করবে।
ফেনী সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মোহাম্মদ মোক্তার হোসাইন বলেন, গ্রামের শিক্ষার্থীরা গণিতকে ভয় পায়। প্রথম আলোরি এ আয়োজনের মাধ্যমে তাদের সেই ভয় দূর করে তাদেরকে গণিতে পারদর্শী করে। তাদের এ আয়োজন দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিবে।
ডাচ-বাংলা ব্যাংক ফেনী শাখার ব্যবস্থাপক এ কে এম রায়হান কাউসার বলেন, ব্যাংকিংয়ের পাশাপাশি ডাচ-বাংলা ব্যাংক দেশের মানুষের আর্থ সামাজিক ও শিক্ষার উন্নয়নে শিক্ষা বৃত্তি প্রদানসহ নানা সামাজিক কর্মকাণ্ড করে থাকে। গণিত ছাড়াও বিভিন্ন অলিম্পিয়াডে সহায়তা করে।
প্রথম আলোর কুমিল্লার নিজস্ব প্রতিবেদক ও বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির প্রথম পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক গাজীউল হকের সঞ্চালনায় উদ্বোধনী ও প্রশ্নোত্তর পর্বে ফেনী সরকারি কলেজের উপাধ্যক্ষ মো. দেলোয়ার হোসেন, চুয়েটের গণিত বিভাগের অধ্যাপক ড. উজ্জ্বল কুমার দেব, চট্টগ্রামের প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটির গণিত বিভাগের চেয়ারম্যান মো. ইফতেখার মনির, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত গণিত বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. নিজাম উদ্দিন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক রাজীব কর্মকার, নোয়াখালী বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মো. আবদুল করিম, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আফরিনা আক্তার, ফেনী সরকারি কলেজের গণিত বিভাগের বিভাগীয় প্রধান আফতাব উদ্দিন, সহকারী অধ্যাপক মো. জহির উদ্দিন, উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. মোশারফ হোসেন, জয়নাল হাজারী কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মো. আবদুল হালিম, প্রথম আলো ফেনী প্রতিনিধি আবু তাহের, ফেনী সরকারি কলেজের ছাত্র সংসদের ভিপি তোফায়েল আহম্মদ তপু, প্রথম আলোর সোনাগাজী প্রতিনিধি মো.আমজাদ হোসাইন ও ফেনী বন্ধুসভার সভাপতি বিজয় নাথ শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন।
উদ্বোধনী পর্ব শেষে শিক্ষার্থীরা পরীক্ষার হলে চলে যান। সেখানে তারা সোয়া ঘণ্টার পরীক্ষায় অংশ নেয়। পরীক্ষা শেষে কলেজ মিলনায়তনে শুরু হয় বন্ধুতা পর্ব ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এরপর প্রশ্নোত্তর পর্বে শিক্ষার্থীদের গণিত ও বিজ্ঞান বিষয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আগত বিশিষ্ট গণিতবিদরা।
প্রশ্নোত্তর পর্ব শেষে সমাপনী অনুষ্ঠান ও পুরস্কার বিতরণী পর্বে চার ক্যাটাগরির বিজয়ী ৩০ জন ক্ষুদে গণিতবিদের নাম ঘোষণাসহ তাদেরকে মেডেল ও পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়।
ইএইচ