কোটালীপাড়া (গোপালগঞ্জ) প্রতিনিধি
ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০২৪, ০৩:৫৩ পিএম
কোটালীপাড়া (গোপালগঞ্জ) প্রতিনিধি
ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০২৪, ০৩:৫৩ পিএম
গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে ৫০ শয্যা থেকে ১০০ শয্যায় উন্নীত করা হয়েছে এক বছর আগে। কিন্তু এখন পর্যন্ত হাসপাতালের জনবল বাড়ানো হয়নি। বর্তমানে হাসপাতালটিতে ৫০ শয্যার জনবলও নেই। কোনো রকমে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। হাসপাতালে রয়েছে শয্যা সংকট। রোগীদের চিকিৎসাসেবা দেওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে।
১০০ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি কোটালীপাড়া উপজেলার প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত। হাসপাতালকে ৫০ শয্যা থেকে ২০২৩ সালের ৬ জানুয়ারি ১০০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। তখন হাসপাতালটির শয্যাসংখ্যা বাড়ানো হলেও জনবল কাঠামোর কোনো পরিবর্তন করা হয়নি। সেই ৫০ শয্যার জনবল কাঠামোতেই চলছে ১০০ শয্যা হাসপাতালের কার্যক্রম।
১০০ শয্যার জন্য সিনিয়র কনসালট্যান্ট ১০ জনের বিপরীতে কর্মরত নেই একজনও। আর জুনিয়র কনসালট্যান্ট ১১ জনের বিপরীতে কর্মরত আছেন ৬ জন।
শূন্য রয়েছে ৫ জনের পদ। মেডিকেল অফিসার ও সহকারী সার্জনের ২৭ জনের বিপরীতে কর্মরত আছেন ১৫ জন। শূন্য রয়েছে ১২ জনের পদ। ৪৭ জন নার্সের পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন ৩২ জন। শূন্য রয়েছে ১৫ জনের পদ।
দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মীদের পদ ২৩৭ জনের। সেখানে ৬৯ পদ শূন্য রয়েছে। কর্মরত আছেন ১৬৮ জন।
জানা যায়, প্রতিদিন কোটালীপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বহির্বিভাগে ৬০০ থেকে ৭০০ রোগী চিকিৎসা নিতে আসেন। আর ৫০ শয্যা থাকলেও প্রতিদিন গড়ে হাসপাতালে রোগী ভর্তি থাকেন ১০০ থেকে ১২০ জন। শয্যার দ্বিগুণ রোগী থাকার কারণে তাদের মেঝেতে, করিডোরে, করিডরের মেঝেতে রেখে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে। তাদের বিছানা, খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে না। কারণ হাসপাতালে ৫০ জন রোগীর জন্য সব সুযোগ-সুবিধা বরাদ্দ দেওয়া হয়। ৫০ রোগীর বেশি ভর্তি থাকলে তাদের নিজ দায়িত্বে খাবার, বিছানাসহ অন্যান্য সেবা বাইরে থেকে গ্রহণ করতে হয়।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী রয়েছেন মাত্র ৪ জন। বছরের পর বছর ধরে চারজনে গোঁজামিল করে সারলেও কাজের কাজ কিছুই হয় না। রোগীর কেবিন, টয়লেট, বারান্দাসহ প্রতিটি কক্ষ এবং পুরো হাসপাতাল চত্বরে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজগুলো দায়সারাভাবে সারছেন পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা।
এ বিষয়ে হাসপাতালের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নন্দা সেন গুপ্তা বলেন, ২০২২ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি আমি কোটালীপাড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যোগদান করার পর থেকে নানা সমস্যায় জর্জরিত ছিল, এখনও আছে। তারপরও আমার আন্তরিক প্রচেষ্টায় এবং আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ, স্থানীয় প্রচেষ্টায় অনেকখানি উন্নয়ন করা সম্ভব হয়েছে কিন্তু পুরোপুরি সম্ভব নয়। তার একটা প্রধান কারণ হচ্ছে জনবল। হাসপাতালে ৫০ শয্যার যে জনবল সেটাই নাই। কিন্তু এই জনবল দিয়ে ১০০ শয্যার হাসপাতাল চালাচ্ছি। এই হাসপাতালের নতুন ভবনটি ৫ তলা ও পুরোনো ভবনটি ৩ তলা। এই ভবন দুটির জন্য ২৪ জন পরিচ্ছন্নতাকর্মী প্রয়োজন। সেখানে আছে মাত্র ৪ জন। এই হাসপাতালে অনেক সার্ভিস বন্ধ ছিল। কিছু কিছু সার্ভিস জোড়াতালি দিয়ে চলছিল। আমি আসার পর ডিজিটাল আল্ট্রাসোনোগ্রাম মেশিন চালু করি। চালু হওয়ার এই এক বছরের মধ্যে সরকারি রাজস্ব খাতে ১২ লাখ টাকার বেশি জমা দিতে পেরেছি।
তিনি আরও জানান, এখানে অ্যানালগ একটা এক্সরে মেশিন চলছে কিন্তু এটা যদি ডিজিটাল হয় তাহলে ভালো হতো। এজন্য নিরাপত্তা কর্মী দরকার। কারণ বিভিন্ন সময় জটিল রোগী আসে। তাদের মৃত্যু হয়। ওই রোগীর আত্মীয়স্বজনরা আবেগ আপ্লুত হয়ে অনেক ধরনের পরিস্থিতি তৈরি করে। তাই নিরাপত্তার জন্য আনসার বাহিনী দরকার। জনবল যা আছে তা-ই দিয়ে রোগীদের ভালো সেবা দেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছি। আমি হাসপাতাল চত্বরে নিজস্ব অর্থায়নে একটি ফুলের বাগান করেছি। ফুল তো মানুষের মনের খোরাক। তাই রোগীরা ফুল দেখলে হয়ত তার মন ভালো হতে পারে। আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে সবধরনের সার্ভিস চালু করার জন্য বারবার জানানো হচ্ছে। কর্তৃপক্ষ যখন আমাকে বিভিন্ন সুবিধা দেবেন, সঙ্গে সঙ্গে তা কার্যকর করার জন্য বদ্ধপরিকর। সেক্ষেত্রে জনগণ এবং স্থানীয় প্রশাসনের সাহায্য প্রয়োজন।
ইএইচ