চৌগাছা (যশোর) প্রতিনিধি
মার্চ ৩, ২০২৪, ০৩:০১ পিএম
চৌগাছা (যশোর) প্রতিনিধি
মার্চ ৩, ২০২৪, ০৩:০১ পিএম
যশোরের চৌগাছায় মুসলিম মেয়েকে বিয়ে করার জন্য হিন্দু থেকে মুসলিম হয়েছেন সরকারি অফিসের তৃতীয় শ্রেণির এক কর্মচারী। পরে যৌতুক না পেয়ে মুসলিম স্ত্রীকে তালাক দিয়ে হিন্দু মেয়েকে বিয়ের পাঁয়তারা করছে বলে অভিযোগ করছেন তার প্রথম স্ত্রী।
ঘটনাটি ঘটেছে যশোরের চৌগাছায়। অভিযুক্ত ওই সরকারি কর্মচারীর নাম বিশ্বজিৎ সাহা। তিনি উপজেলার স্বরুপদাহ ইউনিয়নের খড়িঞ্চা গ্রামের সাহা পাড়ার বিনয় সাহার ছেলে, তার মায়ের নাম শ্যামলী রানি। তিনি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের তৃতীয় শ্রেণীর একজন কর্মচারী।
বিশ্বজিৎ সাহা নিজে থেকেই ২০২২ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর যশোরের নোটারি পাবলিক জিএম মুসার কার্যালয়ে এফিডেভিটের মাধ্যমে বিশ্বজিৎ থেকে আতিকুর রহমান নাম ধারণ করে মুসলিম হন। যার এফিডেভিট নং ৭৬৭৩, রেজিষ্ট্রার-এ বই নং ০৫/২০১/২০২২, তালিকা নং ৩৮৮, পৃষ্ঠা নং ৮৮।
প্রেমের টানে হিন্দু থেকে মুসলিম হওয়া আতিকুর পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী পদে চাকরি করছেন। মুসলিম হয়েই একই দিন অর্থাৎ ২৩ সেপ্টেম্বর ২ লাখ টাকার কাবিনে প্রেমিকা রিক্তা পারভীনকে বিয়ে করেন সে। রিক্তা পারভীন যশোর শহরতলীর নীলগঞ্জ তাঁতীপাড়া এলাকার আব্দুল মতলেবের মেয়ে। বিয়ের পর থেকে সে রিক্তার সাথে ঘরসংসার করে আসছে। রিক্তাদের বাড়িতে থেকে সে চিকিৎসক দিয়ে নিজেকে সুন্নতে খতনাও করায়। পরে নানা কৌশলে রিক্তার কাছে যৌতুক দাবি করে আতিকুর (বিশ্বজিৎ সাহ)।
এদিকে যৌতুক না পেয়ে আতিকুর জোর করে তালাক নামায় স্বাক্ষর করিয়ে আবার হিন্দু ধর্মে ফিরে যাচ্ছে বলে জানা গেছে।
রিক্তা পারভীন জানায়, তার সঙ্গে দীর্ঘ ৫ বছর প্রেম করে বিশ্বজিৎ সাহা। এ সময় বিশ্বজিৎ রিক্তাকে মুসলিম থেকে হিন্দু হওয়ার জন্য চাপ দিতে থাকে। এতে রিক্তা রাজি হয়নি। এ সময় রিক্তার অন্য এক ছেলের সঙ্গে বিয়ে হয়ে যায়। পরে বিশ্বজিতের প্ররোচনায় সেই সংসার ছেড়ে চলে বাবার বাড়িতে চলে আসে রিক্তা। সংসার জীবনের রিক্তার এক ছেলেও রয়েছে। রিক্তার ভালোবাসার টানে বিশ্বজিৎ সাহা নিজেই হিন্দু থেকে মুসলিম হয়ে বিয়ে করে রিক্তাকে। তার সাথে একবছর সংসার করেছে বিশ্বজিৎ ওরফে আতিকুর রহমান। ঢাকায় চাকরি করলেও স্ত্রীকে ঢাকায় নিয়ে যায়নি। যশোরের হুসতলা এলাকায় রিক্তার বাবার বাড়িতে আসা যাওয়া করতো বিশ্বজিৎ সাহা ওরফে আতিকুর।
রিক্তা পারভীন আরও বলেন, বিষয়টি বিশ্বজিতের বাড়িতে কেউ মেনে না নিলেও গোপনে পরিবারের যোগাযোগ করত সে। হঠাৎই আমার কাছে বিভিন্ন কৌশলে যৌতুক দাবি করতে থাকে বিশ্বজিৎ সাহা। আমার পরিবার যৌতুকের টাকা দিতে ব্যর্থ হয়। এরই মধ্যে বিশ্বজিতের বোনের স্বামী চঞ্চল সাহা আমাকে কূটকৌশলে যশোর শহরে ডেকে নেয়। ডেকে নিয়ে আমাকে জোর করে তালাক নামায় স্বাক্ষর করতে বলে। আমি তালাক নামায় স্বাক্ষর করতে রাজি না হলে বিশ্বজিতের বোনের স্বামী জোর করে আমার তালাক নামায় স্বাক্ষর করিয়ে নেয়।
রিক্তা আরও জানায়, ঘটনার পর থেকে আমি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছি, যে দিন তালাক নামায় স্বাক্ষর করিয়ে নিয়েছে তার পরের দিন থেকে বিশ্বজিৎ খড়িঞ্চা গ্রামে তাদের পরিবারের সাথে বসবাস শুরু করেছে। এরই মধ্যে তার পরিবার তার বিয়ে ঠিক করেছে। ৪ মার্চ আবার বিয়ের পিড়িতে বসবে বিশ্বাজিৎ। রিক্তার দাবি সে কাবিনের টাকা চায় না। সে তার স্বামীকে ফিরে পেতে চায়।
ভুক্তভোগী আরও বলেন, এই পরিস্থিতিতে আমি হতাশ হয়ে বিষয়টি সমাধানের জন্য অনেকের দ্বারে ঘুরেছি। এমনকি আইন-আদালত করলে প্রাণে মেরে ফেলে লাশ গুম করবে বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছে আমাকে। এফিডেভিট করে ধর্মত্যাগ, বিয়ে করেও এখন তা অস্বীকার করার মাধ্যমে আদালত-ধর্ম-সমাজকে অবজ্ঞা করে তারা অন্যায় করছেন। যৌতুকের লোভে পরিকল্পিতভাবে আমার ভবিষ্যৎ ধ্বংস করে দিয়েছেন তারা। বিয়ের নামে এহেন প্রতারণার উপযুক্ত বিচার চাই আমি।
এ ব্যাপার স্থানীয় ইউপি সদস্য আব্দুল মান্নান বলেন, বিনয় শাহার ছেলে বিশ্বজিৎ ঢাকায় থাকে জানি। তবে কি করে তা আমার জানা নেই। মুসলমান হওয়া ও বিয়ে করার বিষয়টি আমার জানা নেই। আমি বাইরে আছি বাড়ি ফিরে সন্ধ্যায় খবর নেব।
অভিযুক্ত বিশ্বজিতের ব্যবহৃত নম্বরে ফোন করলে প্রথমে সে ফোন রিসিভ করে। পরে এ সকল ঘটনা জানতে চাইলে সে বলে রং নম্বর। এর পর একাধিবার কল করলেও তার মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়।
ইএইচ