মার্চ ৩, ২০২৪, ০৪:১৮ পিএম
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, বেইলি রোডের অগ্নিকাণ্ডটি দুর্ঘটনা নাকি কারো গাফিলতি ও কেউ জড়িত রয়েছে? বেইলি রোডের কোঝি গ্রিন কটেজ ভবনে অগ্নিদগ্ধ ও বিষাক্ত কার্বন মনোকক্সাইডের ধোঁয়ায় শ্বাসরোধ হয়ে ৪৬ মৃত্যুর ঘটনার মধ্য দিয়ে সামগ্রিক গাফিলতির আরেকটি উদাহরণ ভাবার সামনে এলো।
রোববার (৩ মার্চ) জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সভাকক্ষে `অগ্নি দুর্ঘটনায় পুনরাবৃত্তি: প্রাণহানির শেষ কোথায়?` শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, অগ্নিকাণ্ড বা দুর্ঘটনা একটি আকস্মিত ও সহজাত বিষয়। এটি ঘটতেই পারে। বিশ্বের অনেক বড় বড় শহরেও অগ্নিকাণ্ড হয়, কিন্তু ঢাকার সংগঠিত অগ্নিকাণ্ডের মতো নির্মমতা থাকে না। নির্বিচার মানুষ মারা যাওয়ার ঘটনা আউকে উঠার মতো। কারণ এদেশে নগর উন্নয়নের জন্য পৃথক প্রতিষ্ঠান রয়েছে, রয়েছে সেবাসুবিধা নিশ্চিত করার মত প্রতিষ্ঠানও।
দেশে ভবন নির্মাণ ও ব্যবহারের জন্য আইন আছে, ফায়ার সেফটি সম্পর্কিত আইনও যথেষ্ট রয়েছে, অগ্নিকাণ্ড বিষয়ে দেশে মোট ২২টি আইন এবং হাইকোর্টের একটি জাজমেন্ট রয়েছে। এই ২২ টি আইনের মধ্যে ১৩টি মৌলিক আইন এবং ৯ টি হল সাব-অডিনেট। কিন্তু সেগুলো কম পুরুত্বপূর্ণ নয়।
তিনি আরও বলেন, বেইলি রোডের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ৪৬ জনের মৃত্যু প্রসঙ্গে কাঠামো প্রকৌশলী ও অগ্নিনিরাপত্তা বিষয়ে সংশ্লিষ্টরা দাবি করছেন- এটি `অবহেলাজনিত ধারাবাহিক হত্যাকাণ্ডের ঘটনা। কারণ এই ভবনগুলোর জন্য আটটি সরকারি সংস্থার অনুমোদন প্রয়োজন (জেলা প্রশাসন, রাজউক, সিটি কর্পোরেশন, পরিবেশ অধিদফতর, ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ ও বিস্ফোরক অধিদফতর প্রভৃতি) প্রতিটি সংস্থার বিরুদ্ধে দায়িত্বের অবহেলার কারণে হত্যার অভিযোগ আনা যেতেই পারে। কেউ কেউ এই ঘটনাকে কাঠামোগত হত্যাকাণ্ড মনে করছেন। এটা দুর্ঘটনা নয়, এর পেছনে অনেক ধরনের গাফিলতি জড়িত। এ পরিস্থিতির খুব দ্রুত পরিবর্তন হবে এবং আপাতদৃষ্টে একটি নিরাপদ নগরে পরিণত হবে ঢাকা এমন সম্ভাবনাও দেখা যাচ্ছে না।
মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, বেইলি রোডের ভবনটিতে বাণিজ্যিক অনুমোদন নেওয়ার ক্ষেত্রেও প্রভাবশালী মহলের চাপ ছিল বলে শোনা যাচ্ছে। যে কারণে ভবনটিকে বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালনায় শর্ত সাপেক্ষে অনুমোদন দেওয়া হয়। তবে বাণিজ্যিক ব্যবহার ও রেস্তোরাঁ পরিচালনা দুটি ভিন্ন ব্যবহার।
যেখানে মাত্র একটি সিঁড়ি, এমন একটি ভবনে রেস্তোরাঁ চলতে পারার কথা না। তাহলে রাষ্ট্রীয় সংস্থা হিসেবে রাজউক, ফায়ার সার্ভিস, সিটি করপোরেশন-তাদের ভূমিকা কি কেবল নোটিশ দেওয়া? যাঁরা প্রভাবশালী, তাঁরা কি এতগুলো মানুষের জীবনের চেয়েও প্রভাবশালী? তাঁরা কীভাবে দিনের পর দিন এগুলোর পুনরাবৃত্তি করছেন? এত দুর্ঘটনার পরও কি রাষ্ট্রের টনক নড়বে না?
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের বার্ষিক প্রতিবেদন অনুসারে গত ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরে বিদ্যমান বহুতল ও বাণিজ্যিক ভবনের আবেদন পাওয়া যায় ১৩৯৭টি; সংস্থাটি ছাড়পত্র দেয় ১০৯০টি ভবনের। বাকি ৩০৭টি ভবনের বিষয়ে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স কর্তৃপক্ষ। তাঁদের প্রতিবেদনে কিছু উল্লেখ করে নি।
পাশাপাশি, প্রস্তাবিত বহুতল ও বাণিজ্যিক ভবনের আবেদন আসে ১১৯০টি; কর্তৃপক্ষ ছাড়পত্র প্রদান করে নির্মাণের অনুমোদন দেয় ৯৫৫টি ভবনের। অনুমোদন ছাড়া ভবন নির্মিত হওয়া বা বিদ্যমান ভবনে ছাড়পত্র প্রদান না হওয়ার অর্থ দাঁড়ায় ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ। এ বিষয়ে সংস্থাটি কি কার্যক্রম নিয়েছে তা তাদের প্রতিবেদনে নেই।
এইচআর