Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪,

ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের অগ্রভাগে থাকা পথশিশু হোসেন আলীকে সম্মাননা

গোসাইরহাট (শরীয়তপুর) প্রতিনিধি

গোসাইরহাট (শরীয়তপুর) প্রতিনিধি

মার্চ ৮, ২০২৪, ১১:৫১ এএম


ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের অগ্রভাগে থাকা পথশিশু হোসেন আলীকে সম্মাননা
ছবি: আমার সংবাদ

বাংলাদেশের স্বাধীনতা পূর্ব আন্দোলন সমূহের মধ্যে ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান অন্যতম একটি আন্দোলন ছিল। এই গণঅভ্যুত্থানের মিছিলের অগ্রভাগে রয়েছে একজন পথশিশু। এই ছবিটি দেখেননি এমন মানুষ বাংলাদেশে খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। মিছিলের অগ্রভাগে থাকা সেই পথশিশুটি হোসেন আলী নিজে। 

গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন প্লাটফর্মে এমনই দাবি করেছেন হোসেন আলী নামে এক ব্যক্তি। ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের অগ্রভাগে থাকা ওই পথশিশু দাবি করা হোসেন আলীকে সম্মাননা জানিয়েছে উদীচী শিল্পোগোষ্ঠী ও মৃত্তিকা নামে দুইটি সংগঠন।

বৃহস্পতিবার (৭ মার্চ) বিকালে শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলা পরিষদ অডিটোরিয়ামে এ সম্মাননা জানানো হয়। সম্মাননা অনুষ্ঠানে হোসেন আলীর সঙ্গে ভাষা সৈনিক ডা. গোলাম মাওলার ছেলে ডা. গোলাম ফারুককেও সম্মাননা দেওয়া হয়।

সম্মাননা অনুষ্ঠানের আয়োজকদের সূত্রে জানা যায়, ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের মিছিলের অগ্রভাগে থাকা পথশিশু হোসেন আলীর সংগ্রামের প্রতি সম্মান জানাতে ও ভাষা সৈনিক গোলাম মাওলার ছেলে মানবিক মানুষ গোলাম ফারুককে সম্মান জানাতে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পোগোষ্ঠী ও সামাজিক সংগঠন মৃত্তিকার আয়োজনে অনুষ্ঠান করা হয়। হোসেন আলী বর্তমানে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে দাঁড়োয়ান হিসেবে কর্মরত। তাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পালোয়ান বলে সম্বোধন করে ডাক দিয়ে ২০ টাকা দিয়েছিলেন। স্বাধীনতা পূর্ববর্তী সংগ্রামের ইতিহাসে যখন গণঅভ্যুত্থানের ওই ছবি ব্যবহার করা হয় তখন হোসেন আলী বঙ্গবন্ধুর দেওয়া সেই পালোয়ান ডাক নামসহ তার নামের স্বীকৃতি চান। হোসেন আলীর সংগ্রাম ও গোলাম ফারুকের মানবিকতার প্রতি সম্মান জানিয়ে অনুষ্ঠানে তাদেরকে সম্মাননা স্মারক তুলে দেওয়া হয়। এসময় হোসেন আলীকে নগদ ২০ হাজার টাকা তুলে দেওয়া হয়।

ডা. গোলাম ফারুক তার বক্তব্যে বলেন, আজ ঐতিহাসিক ৭ মার্চ। আজকের দিনে আমি দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থী ছিলাম। ৭ মার্চে বঙ্গবন্ধুর দেওয়া ভাষণ আমি সরাসরি শুনেছিলাম। বঙ্গবন্ধু যে ভাষণ দিয়েছিলেন, তা বিকৃতি করে এখন প্রচার করা হয়। যারা আমাকে সম্মান জানিয়ে সম্মাননা তুলে দিয়েছেন তাদেরকে ধন্যবাদ জানাই।

হোসেন আলী তার বক্তব্যে বলেন, আমি ফুটপাতে ছিলাম। ১৯৬৯ সালে ফুলবাড়িয়া রেলস্টেশনের সামনে দিয়ে একটি মিছিল যাচ্ছিল, সেই মিছিলের স্লোগান ছিল ‘জেলের তালা ভাঙব, মুজিব ভাইকে আনব। মুজিব ভাইয়ের কিছু হলে জ্বলবে আগুন ঘরে ঘরে’। আমার পরণে তখন সেন্টু গেঞ্জি ও ইংলিশ প্যান্ট ছিল। তখন আমি ওই মিছিলের পিছে পিছে দৌঁছে গিয়েছি। মিছিলটি শাহবাগের দিকে যাত্রা করলে আমি গরমে গেঞ্জি খুলে মাজায় বেধেছিলাম। মিছিলের আগে যাওয়া নিয়ে একজন আমাকে বলেছিল, তুমি যে আগে যাও, যদি গুলি লেগে মরে যাও। আমি বলেছিলাম, মরলে আমার কান্দনের কেউ নাই। তোফালেল আহমেদ,আমির হোসেন আমু ভাই সেদিন বলেছিল, পালোয়ান তুই পেছনে যা। তখন আমি বলেছিলাম, না ভাই মরলে আমি আগে মরুম, তারপর আপনারা মরবেন। এরপর মিছিলে গুলির প্রস্তুতিকালে আমি হাইকোর্ট দিয়ে পালিয়ে গিয়েছিলাম। স্বাধীনতার পর আমি অনেকের কাছে বঙ্গবন্ধুর দেওয়া পালোয়ান ডাকের স্বীকৃতি চেয়ে আকুতি-মিনতি করে আবেদন জানিয়েছিলাম। কিন্তু কেউ আমার কথা শোনেনি। আপনারা আমাকে যে সম্মান জানিয়েছেন, তা আমার জীবনে প্রথম সম্মান। আপনাদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ।

সম্মাননা অনুষ্ঠানে নড়িয়া পৌরসভার মেয়র আবুল কালাম আজাদের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত সচিব ও বিটিআরসির সাবেক চেয়ারম্যান শ্যামসুন্দর শিকদার, বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন খাদ্য অধিদপ্তরের অবসরপ্রাপ্ত পরিচালক চিত্তরঞ্জন বেপারীসহ অন্যান্যরা।

এআরএস

Link copied!