Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪,

কোটি টাকার ক্ষতি

১২ ইউনিটের ৬ ঘণ্টার চেষ্টায় পান বরজের আগুন নিয়ন্ত্রণে

নিজস্ব প্রতিবেদক

নিজস্ব প্রতিবেদক

মার্চ ১০, ২০২৪, ০৮:৩৯ পিএম


১২ ইউনিটের ৬ ঘণ্টার চেষ্টায় পান বরজের আগুন নিয়ন্ত্রণে

অনেক কষ্ট করে কেউ বা ঋণ করে নিজেদের পানের বরজ গড়ে তুলেছেন কিন্তু কষ্টের সেই বরজ চোখের সামনেই ‍পুড়ে গেছে। চোখের সামনে একের পর এক পানের বরজ পুড়ে গেলেও কিছু করতে পারেননি চাষিরা। 

উপজেলার বাহাদুর পুর ইউনিয়নের রাইটা পাথরঘাটা এলাকার একটি পানের বরজ থেকে আজ রোববার বেলা ১১টার দিকে এই আগুনের সূত্রপাত হয়। পরে একের পর এক পানের বরজ পুড়ে ছাই হয়ে যায়।

কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ বলছে, আগুনে প্রায় সাড়ে ৩ কিলোমিটার এলাকার প্রায় ৪ হাজার একর পানের বরজ, কলার বাগান, পাকা গমসহ আবাদি ফসল এবং প্রায় ১০টি বাড়ি পুড়ে গেছে। সঠিকভাবে নির্ণয় না করা গেলেও আগুনে কয়েক শ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে হয়ে বলে দাবি করেছেন স্থানীয়রা।

এদিকে আগুনের খবর পেয়ে প্রথমে ভেড়ামারা ও কুষ্টিয়া ফায়ার সার্ভিস আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে। পরে চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর ও পাবনা থেকে আগুন নেভাতে কাজ শুরু করে। ফায়ার সার্ভিসের ১২টি ইউনিটের প্রায় ৬ ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।

হাসান আলী নামের এক পান চাষি বলেন, ‘বেলা ১১টার দিকে আমরা মাঠের মধ্যে ধোয়া দেখতে পাই। তারপরেই আমরা ছুটে আসি। আমার মতো এলাকার প্রায় সব বাড়ির নারী–পুরুষ এবং শিশু আপ্রাণ চেষ্টা করেও শেষ রক্ষা হয়নি। আমার তিনটি পানের বরজ পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। এখন তো পথে গিয়ে দাঁড়াতে হবে।’

চোখের সামনে সব ফসল নষ্ট হয়ে বাকরুদ্ধ কৃষক আজিবর মন্ডল। তিনি বলেন, ‘আর কয়েকদিন পর থেকে এই পান বিক্রি করার কথা। কিন্তু সব শেষ হয়ে গেল। চোখের সামনে সব কিছু ঘটলেও কিছুই করতে পারলাম না।’

ভেড়ামারা ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার শরীফুল ইসলাম বলেন, ‘এলাকাটি চরাঞ্চল হলেও পানির সংকট ছিল। যেসব পুকুর ছিল তাতে পানি নেই। আবার আগুনের স্থানে গাড়ি নেওয়া যাচ্ছিল না, সঙ্গে ছিল বাতাস। তারপরও কৃষকের ফসল রক্ষায় সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হয়েছে।’

ফায়ার সার্ভিসের চুয়াডাঙ্গা অঞ্চলের উপপরিচালক রফিকুজ্জামান বলেন, ‘বেলা ১১টার দিকে কুষ্টিয়া জেলা ফায়ার সার্ভিস অফিস থেকে আমাদের কাছে সাহায্য চাওয়া হয়। তারপরই আমরা বেলা ১২টার দিকে এসে আগুন নেভানোর কাজ শুরু করি।’

রফিকুজ্জামান আরও বলেন, ‘বাহাদুর পুর ইউনিয়নের রাইটা পাথর ঘাটা এলাকার একটি পানের বরজে আগুনের সূত্রপাত। দেখতে দেখতে আগুন ছড়িয়ে পড়ে এক বরজ থেকে আরেক বরজে। এ সময় বাতাসের তীব্রতা থাকায় দ্রুত আগুন ছড়িয়ে পড়ে প্রায় সাড়ে ৩ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে। চোখের সামনে পুড়তে থাকে বাড়িঘর ফসলি খেত এবং শত শত বিঘা পানের বরজ। এলাকার শত শত নারী–পুরুষ আমাদের সঙ্গে আগুন নেভাতে কাজ করেছেন। আশপাশের জেলা থেকে মোট ১২টি ইউনিট ৬ ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।’

জেলা প্রশাসনের বরাত দিয়ে স্থানীয় বাহাদুর পুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সোহেল রানা পবন বলেন, ‘ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করে তাদের প্রাথমিক ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ব্যাপারে উপজেলা প্রশাসনের সাথে কথা বলে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’

এদিকে ঘটনার পর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার আব্দুর রকিব বলেন, ‘আগুনে প্রায় ৪ হাজার একর শুধুমাত্র পানের বরজই পুড়ে গেছে। আগুন নেভানোর কাজে এবং ক্ষতিগ্রস্তদের সার্বিক সহযোগিতায় পুলিশের ২৫০ জন সদস্য কাজ করেছেন।’

পুলিশ সুপার আরও বলেন, ‘এটা কোনো দুর্ঘটনা নাকি নাশকতামূলক কাজ সেসব বিষয় মাথায় রেখে পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে। বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে একসাথে কাজ করে ক্ষতিগ্রস্তদের কীভাবে সহযোগিতা করা যায়, তার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।’

আরএস

Link copied!