Amar Sangbad
ঢাকা বুধবার, ০৬ নভেম্বর, ২০২৪,

বাকেরগঞ্জে কাজ না করেই প্রকল্পের টাকা উত্তোলন

দানিছুর রহমান, বাকেরগঞ্জ (বরিশাল)

দানিছুর রহমান, বাকেরগঞ্জ (বরিশাল)

মার্চ ১২, ২০২৪, ০৫:০২ পিএম


বাকেরগঞ্জে কাজ না করেই প্রকল্পের টাকা উত্তোলন

বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার দুর্গাপাশা ইউনিয়নে কাজ না করেই কর্মসৃজন প্রকল্পের সিংহভাগ টাকা উত্তোলন করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মো. কামরুজ্জামান এ প্রকল্পের অনুকূলে মোট বিলের অর্ধেক টাকা উত্তোলন করার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার দুর্গাপাশা ইউনিয়নে হতদরিদ্রদের জন্য কর্মসৃজন কর্মসূচির (৪০ দিন) আওতায় মাটি কেটে জিরাইল চেয়ারম্যান বাজার সংলগ্ন উত্তর গোবিন্দপুর শাহজাহান হাওলাদারের বাড়ি থেকে কাঁটাখালি শাহজাহান মোল্লার বাড়ি পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণের জন্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় প্রায় ৬ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়।

এ প্রকল্পের সভাপতি হলেন ওই ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. আনোয়ার হোসেন। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য শতাধিক শ্রমিক তালিকাভুক্ত করা হয়।

সরকারি নিয়ম অনুযায়ী প্রত্যেক শ্রমিকের দৈনিক মজুরি ২০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। শ্রমিকদের প্রত্যেকের মোবাইল ফোনের সিমে বিকাশ অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে।

অভিযোগ রয়েছে, প্রকল্পের সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান হানিফ তালুকদার দুজনে মিলে নিজেদের পছন্দের লোককে শ্রমিক দেখিয়ে তাদের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনের সিমে বিকাশ অ্যাকাউন্ট খুলেছেন। পরে ওইসব তালিকাভুক্ত শ্রমিক দিয়ে কাজ না করিয়ে প্রকল্পের সভাপতি কৌশলে এসব শ্রমিকের বিকাশ নম্বর থেকে টাকা উত্তোলন করে নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করেছেন। 
গত ১১ মার্চ দুপুরে ওই প্রকল্পে গিয়েও কোনো শ্রমিকের দেখা মেলেনি। প্রকল্প এলাকার দেড় কিলোমিটার রাস্তায় গত বছর বেকু দিয়ে মাটি কেটে ফেলা হয়েছে। অথচ এ বছর ওই রাস্তায় মাটি কাটার কোনো আলামত পাওয়া যায়নি। কিন্তু ইতিমধ্যে শ্রমিকের মজুরি বাবদ প্রায় তিন লাখ টাকার বিল উত্তোলন করা হয়েছে।

উত্তর গোবিন্দপুর গ্রামের দিনমজুর লিয়াকত আলী খান ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, আমি গরিব মানুষ, মানুষের বাড়িতে কাজ করি। মাটিও কাটি। কিন্তু চেয়ারম্যান-মেম্বার আমার নামটা দেয় নাই। নাম দিলে কাম কইরা কিছু টাকা পাইতাম।

উত্তর গোবিন্দপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক আবুল ফজল মিলন বলেন, তিনি প্রতিনিয়ত এ মাটির রাস্তা দিয়ে বিদ্যালয়ে চলাচল করেন। গত বছর বেকু দিয়ে মাটি কেটে এ রাস্তার কাজ করা হয়েছে। এ বছর এ রাস্তায় কোন মাটির কাজ হয়নি।

এ ব্যাপারে প্রকল্পের সভাপতি মো. আনোয়ার হোসেন জানান, ইউপি চেয়ারম্যান হানিফ তালুকদার গত বছর বেকু দিয়ে মাটি কেটে অগ্রিম এই রাস্তার কাজটি করিয়ে রেখেছিলেন। তাই এ বছর প্রকল্প দেখিয়ে টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। শ্রমিকদের কোন টাকা দিয়েছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলতে পারেন তিনি মুচকি হেসে বলেন, আপনারাতো সবি জানেন, আমাকে আবার জিজ্ঞাসা করে লজ্জা দিচ্ছেন কেন। আমি প্রকল্পের সভাপতি না খেলার পুতুল বুঝতে পারছি না।

এ ব্যাপারে দুর্গাপাশা ইউপি চেয়ারম্যান হানিফ তালুকদার জানান, ভালো কাজ করার জন্য তিনি গতবছর এ রাস্তায় অগ্রিম কাজ করে রেখেছেন। এ বছর প্রকল্প দেখিয়ে সেই টাকা উত্তোলন করেছেন। অগ্রিম প্রকল্প দেখিয়ে লেবার দিয়ে কাজ না করে টাকা উত্তোলন করার কোন বিধান আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন।  

পিআইও মো. কামরুজ্জামান বলেন, ওই প্রকল্পের অনুকূলে মোট বিলের অর্ধেক টাকা ছাড় করা হয়েছে। আপনি কি প্রকল্প এলাকায় গিয়ে কাজের অগ্রগতি দেখেছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ফাইল নোট না দেখে অগ্রগতি সম্পর্কে কিছু বলা যাবে না। তবে প্রকল্পে কোন অনিয়ম হয়ে থাকলে তিনি খতিয়ে দেখবেন বলেও জানান।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ সাইফুর রহমান বলেন, ‘কোনো কাজেই অনিয়ম মেনে নেওয়া হবে না। প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করব। কাজের গরমিল পাওয়া গেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

ইএইচ

Link copied!