Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪,

রাতের অন্ধকারে কৃষি জমির মাটি লুট

নবাবগঞ্জ(দোহার) প্রতিনিধি

নবাবগঞ্জ(দোহার) প্রতিনিধি

মার্চ ১৬, ২০২৪, ০২:৫৯ পিএম


রাতের অন্ধকারে কৃষি জমির মাটি লুট

ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলার চুড়াইন, নয়নশ্রী, বক্সনগর ও জয়কৃষ্ণপুর ইউনিয়নের আওতাধীন কৃষিজমিগুলো থেকে রাতের আঁধারে কাটা হচ্ছে মাটি। আর এসব লুট করা মাটি বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে মাহেন্দ্রযোগে যাচ্ছে দোহার ও নবাবগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে।

বিশেষ করে চুড়াইনের পাইকশা চক, মাটি কাটা চক, নয়নশ্রীর শান্তি নগর বিলের পাড়, যন্ত্রাইল কিরিঞ্জি এলাকা, বক্সনগর ইউনিয়নের দক্ষিণ চক, জয়কৃষ্ণপুর ইউনিয়নের শোল্লা ইউনিয়নের বোয়ালি, শিকারীপাড়া ইউনিয়নের একাধিক গ্রামে রাত হলেই চলে মাটি বিক্রির জমজমাট ব্যবসা।

এর ফলে যেমন জমির উর্বরতা নষ্ট হচ্ছে, তেমনি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পরিবেশের ভারসাম্যও। সন্ধ্যা হতেই চলাচল শুরু করে মাটিভর্তি ট্রাক ও মাহেন্দ্র। চলে রাতভর। মাটিবাহী ট্রাক ও মাহেন্দ্রর প্রভাব পড়ছে স্থানীয় কাঁচা ও পাকা সড়কগুলোতেও।

এসব স্থানে বিভিন্ন সময় উপজেলা প্রশাসন অভিযান চালিয়ে ভেকু (খননযন্ত্র) মাহেন্দ্রসহ মাটি বালু ব্যবসায়ী ও শ্রমিকদের ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে সাঁজা ও জরিমানা করলেও থেমে থাকছে মাটি বিক্রির এ ব্যবসা। দিন দিন বেড়ে চলেছে মাটি ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্য এমন অভিযোগ স্থানীয় কৃষকদের।

চুড়াইনের পাইকশা এলাকা কৃষক তাহের খাঁ, আসলাম ও মফিজ বলেন, আমাদের এলাকার সড়কগুলো ভালো না থাকায় এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে একাধিক মাটি ব্যবসায়ী মাটি কাটার চক নামে একটি এলাকাতে বিপুল পরিমাণ কৃষিজমি কেটে ফেলেছে।  

তারা বলেন, কাঁচা সড়ক থাকায় প্রশাসনের লোকজন এদিকে আসতে পারে না তাই এসব মাটিখেকো সুযোগ কাজে লাগিয়ে মাটি কেটে বিপুল পরিমাণ অর্থ লুটে নিচ্ছেন।

তাদের দাবি এভাবে কৃষিজমির মাটি কাটলে আগামী দিনে ধানের জমি থাকবে না। যদিও দেশের প্রচলিত আইনে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে ব্যক্তি মালিকানাধীন কৃষি জমি থেকে বালু বা মাটি তোলা যাবে না। তবে ব্যক্তির নিজের প্রয়োজনে স্থানীয় প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে সীমিত পরিসরে বালু বা মাটি তুলতে পারবেন এ বিষয়টি আইনে থাকলেও চুড়াইন মাটিকাটার চক এলাকায় স্থানীয় ধনী কৃষক ও মাটি ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট এসব আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখাচ্ছেন।

অপরদিকে বক্সনগর দক্ষিণ চক, রাজপাড়া চক, সাহেবখালী এলাকায় একটি চিহ্নিত প্রভাবশালী চক্র বছরের পর বছর চালিয়ে যাচ্ছেন তাদের মাটি বিক্রির ব্যবসা। এছাড়া নয়নশ্রীতে শান্তিনগর এলাকায় পুকুর খনন করার নামে কথিত মাটি ব্যবসায়ী ইউছুফ মাটি বিক্রির ব্যবসা করছেন গত দুবছর এমনটা জানান কৃষক কামাল হোসেন।

স্কুলশিক্ষার্থী সাহিদা খানম (১৩) বলেন, আমাদের এলাকায় মাহেন্দ্র দিয়ে মাটি নিয়ে বিক্রি করা হয়। বৃষ্টি হলে সড়ক দিয়ে হেঁটে স্কুলে যেতে কষ্ট আমাদের। আমরা প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

অপরদিকে শোল্লা ইউনিয়নের বোয়ালি এলাকায় লিটন মোল্লা ও তার লোকজন পুকুর খননের নামে  প্রতিদিন মাহেন্দ্রযোগে লাখ টাকার মাটি বিক্রি করছে। এতে করে স্থানীয় সড়কে জনদুর্ভোগ প্রতিনিয়ত বাড়ছে যা দেখার কেউ নেই বলে জানান স্থানীয় গৃহবধূ  নাছরিন সুলতানা। তিনি বলেন, লিটন মোল্লা ও তার লোকজন রাতদিন মাটি বিক্রি করছে পুকুর খননের নামে। উপজেলার শিকারীপাড়া, জয়কৃষ্ণপুর ইউনিয়ন ও মাটি বিক্রিতে পিছিয়ে নেই। এখানে আশঙ্কাজনক হারে হ্রাস পাচ্ছে কৃষিজমি। প্রভাবশালীরা প্রশাসন ও আইনের তোয়াক্কা না করেই চালায় মাটির ব্যবসা। এসব মাটি ব্যবসায়ী স্থানীয় রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তাই সাধারণ কৃষকরা লিখিত অভিযোগ করতে সাহস পায় না। মৌখিকভাবে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করতেও ভয় পায়।

শিকারীপাড়া গরিবপুর এলাকার মো. মাছুদ বলেন, মাটির টপ সয়েল কেটে নেওয়ার ফলে কৃষিজমির শ্রেণি পরিবর্তন হয়ে নালা অথবা পুকুরে পরিণত হচ্ছে। নির্বিচারে যেভাবে ফসলি জমির মাটি কেটে বিক্রি করা হচ্ছে, কয়েক বছরের মধ্যে ফসলি জমি আশঙ্কাজনক হারে কমে যাবে। কমে যাবে ফসল উৎপাদন।

কৃষিজমির মাটি বিক্রির বিষয়ে নবাবগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আ. হালিম বলেন, নবাবগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কৃষিজমির মাটি বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে অভিযান চলমান রয়েছে। ইতোমধ্যে একাধিক মাটি বিক্রেতার এক্সকেভেটর (ভেকু), মাহেন্দ্র আটক করা হয়।

এছাড়াও মাটি বিক্রেতাদের বিভিন্ন মেয়াদে সাঁজা ও জরিমানাও করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, যারাই কৃষিজমির মাটি মাটি কাটার সঙ্গে জড়িত থাকুক না কেন, তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ইএইচ

Link copied!