Amar Sangbad
ঢাকা সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪,

দুদকের গোয়েন্দা প্রতিবেদন

১৫ বছরে সম্পদের পাহাড় গড়লেন উপজেলা চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন

এস এম ইউসুফ আলী, ফেনী

এস এম ইউসুফ আলী, ফেনী

মার্চ ২৯, ২০২৪, ১২:৪৬ পিএম


১৫ বছরে সম্পদের পাহাড় গড়লেন উপজেলা চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন
পরশুরাম উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন মজুমদার। ছবি: সংগৃহিত

ফেনীর পরশুরাম উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন মজুমদার। ১৫ বছর ধরে এ পদে থেকে তিনি ২৩টি ফ্ল্যাট, ১৫টি দোকান, দুটি সাততলা বাড়ির মালিক হয়েছেন। সম্প্রতি দুদকের গোয়েন্দা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এ চিত্র।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, কামাল উদ্দিন মজুমদার ছিলেন পরশুরাম উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। ২০০৮ সালে জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে ২০০৯ সালে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ২০১৪ ও ২০১৯ সালেও নৌকার টিকিটে পদটিতে বহাল থাকেন তিনি।

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়, কামাল উদ্দিন বিভিন্ন সময় বিভিন্ন চাকরিতে নিয়োগ, ও অবৈধ ঠিকাদারি ও বালি বিক্রির মাধ্যমে সম্পদের মালিক গত ১৫ বছরে ২৩টি ফ্ল্যাট, দুটি সাততলা বাড়ি, ১৫টি দোকান, বেইলি রোড, মগবাজার, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা, চট্টগ্রামের হালিশহর ও খুলশীতে প্লট ও ফ্ল্যাট রয়েছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। হাসপাতাল-রেস্তোরাঁসহ আরও সম্পদ রয়েছে তার।

এই সম্পদের মধ্যে রয়েছে ফেনী সদন একাডেমি সড়কে স্টেডিয়ামের পাশে সাততলা বাড়ি, ফেনী শহরের বনানী পাড়ায় সাততলার দুটি বাড়ি, ফেনী পাইলট হাইস্কুলের পাশে তিনটি দোকান, আলিয়া মাদ্রাসা মার্কেট সাতটি দোকান, ফেনী সদর হাসপাতালে তিনটি দোকান, দুটি অটোরিকশা পার্টসের দোকান, ফেনী শহরের উত্তরা মডেল হাসপাতালে ৪০ শতাংশ শেয়ার এবং ফেনীর সিজলার রেস্টুরেন্ট ৬০ শতাংশ শেয়ার।

এছাড়া ফেনী শহরে নামে-বেনামে ২৩টি ফ্ল্যাট, সাতটি  ফ্ল্যাট, সাতটি গুদাম, ফেনী ডায়াবেটিক হাসপাতালের পেছনে কামাল চেয়ারম্যান টাওয়ার, হোম প্লাস নামে একটি চেইন শপের ৬০ শতাংশ মালিকানা রয়েছে কামাল উদ্দিন মজুমদারের। অন্যদিকে রাজধানীর বেইলি রোড, মগবাজার, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা, যমুনা ফিউচার পার্ক, মিরপুর টয়োটা গ্রাউন্ড, চট্টগ্রামের হালিশহর ও খুলশীতে তার প্লট ও ফ্ল্যাট রয়েছে। তাছাড়া ৭০ লাখ টাকার প্রবাসী বন্ড রয়েছে বলে গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

দুদকের ওই গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘অভিযোগ-সংক্রান্ত তথ্য গোপনে অনুসন্ধান করা হয়। তিনি দায়িত্ব পালনকালে এসব সম্পদ অর্জন করেছেন। বেনামে তার আরও স্থাপনা আছে বলে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে।’ বিষয়টি অনুসন্ধানের সুপারিশ করেছে গোয়েন্দা বিভাগ।

এছাড়া কামাল মজুমদারের এসব অবৈধ সম্পদকে অক্ষত রাখতে তার বড় মেয়ের জামাতা ও ভাতিজা ইয়াছিন শরিফ পরশুরাম উপজেলার বিআরডিবির চেয়ারম্যান, উপজেলা ক্রীড়া সংস্থা, পশুরাম ব্যবসায়ী সমিতি, যুবলীগের সভাপতিসহ প্রায় ৪২টি কমিটির সভাপতি দায়িত্বে রয়েছেন।

পরশুরাম উপজেলার প্রবীণ আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা বলেন, উপজেলার ব্যবসায়ী সমিতি থেকে শুরু করে সব কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদটি কামাল মজুমদার তার জামাতার জন্য রেখে দিতেন। সব কমিটিতে তারা হস্তক্ষেপ ছিল। পরশুরাম, ফুলগাজী ও ছাগলনাইয়া উপজেলার সব ইটভাটায় বিনা পয়সায় তার পার্টনার রয়েছে। কোনো ইটভাটার মালিক তাকে পার্টনার দিতে না চাইলে তাকে বিভিন্ন ধরনের হয়রানি করা হতো।

অবৈধ সম্পদ অর্জনের বিষয়ে কথা বলতে কামাল উদ্দিন মজুমদারের মোবাইল ফোনে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

এআরএস

Link copied!